রাজনৈতিক সরকার না থাকলে সমস্যা আরও বাড়ে। এ জন্য দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
বুধবার (২৩ জুলাই) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে আর যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দলের তরফ থেকে আমরা সেটা উনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বলে এসেছি। তিনি এটুকু বলেছেন, সেই ব্যবস্থাটা নেবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সব সময় যেটা চাইব, অতি দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। রাজনৈতিক সরকার না থাকলে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়ে। সে জন্য আমরা সেটাই বলেছি।’
গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা বলে এসেছি। একই সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে দ্রুত করা, ত্বরান্বিত করা এবং প্রধান উপদেষ্টার যে প্রতিশ্রুত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া, আমরা মনে করি, অতি দ্রুত সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার এগোচ্ছে কি না—জানতে চাওয়া হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি তো দেখছি, এগোচ্ছে।’
এ সময় অন্তর্বতী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিয়মিত মতবিনিময়ে গুরুত্বারোপ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সংকট তৈরি হলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডাকেন। তবে আমি মনে করি, এটা ঘন ঘন হলে আরও ভালো হতো। তাহলে হয়তো সমস্যাগুলো তৈরি হতো না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাইলস্টোন স্কুলে দুজন উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিছু দিন আগে গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির আবার উত্থানের একটা নমুনা দেখার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসবের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সম্ভবত আমাদের (যারা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন) সঙ্গে মতবিনিময় করতে সভা ডেকেছিলেন। আমরা আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলে এসেছি।’
ফ্যসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অটুট রয়েছে কি না—এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঐক্য অবশ্যই অটুট আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার ছড়াছড়ি, পক্ষে-বিপক্ষে কথা, বকাবকি—এগুলো থাকবেই। রাজনীতির মানেই হচ্ছে প্রতিপক্ষকে কথা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করা। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ, রাজনীতির নিয়মই তা-ই। সুতরাং এই ধারা থাকবে, সেটা থেকেই রাজনীতি এগোবে।’
দলীয়প্রধান সরকারপ্রধান হতে পারবেন না—এই প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব। এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান আসবে। আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। অন্য দলগুলো দিয়েছে। এখন দেখা যাক, আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনটা প্রতিষ্ঠিত হয়।’
উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা। তবে দুর্ঘটনাপরবর্তী সময়ে সরকারের পদক্ষেপে কিছু কিছু জায়গায় দুর্বলতা ছিল। এটা অভিজ্ঞতার অভাব। এ সরকারের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, তাদের মধ্যে অনভিজ্ঞ লোকই বেশি, অভিজ্ঞরা কম আছে। কারও কারও ইগো সমস্যা আছে। সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা, পরামর্শ করা—এসব বিষয়ে তারা একটু পিছিয়ে।’
গোপালগঞ্জে সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু কিছু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিশ্চিতভাবে রাজনীতি জড়িত। নির্বাচনকে বানচাল করার চক্রান্ত অবশ্যই এর মধ্যে আছে। সচিবালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা—বোঝাই যাচ্ছে সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা ছিল। তবে তারা কখনোই সফল হবে না। বাংলাদেশের মানুষ সজাগ ও সতর্ক আছে। তারা সব চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেবে।’
আমার বার্তা/এমই