ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চলমান এইচএসসি ও সমমানের দুইদিনের (২২ ও ২৪ জুলাই) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষা ঠিক কবে নেওয়া হবে, তা এখনো জানায়নি সরকার। তবে দুদিনের পরীক্ষা একই দিনে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
শিক্ষা উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দুদিনের পরীক্ষা একই দিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আবার মাঠে নামতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
>> ২২ ও ২৪ জুলাই কোন কোন বিষয়ের পরীক্ষা
প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী- ২২ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রসায়ন দ্বিতীয়পত্র (তত্ত্বীয়), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয়পত্র (মানবিক শাখা), ইতিহাস দ্বিতীয়পত্র, গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয়পত্র এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
আর সময়সূচিতে ২৪ জুলাইয়ে অর্থনীতি প্রথমপত্র ও প্রকৌশল অঙ্কন ও বিপণন দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা হওয়ার কথা। তবে এ দুদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এখন একই দিনে সকাল-বিকেল ২২ ও ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষা নেওয়া হলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের মধ্যে একটি বিষয় ঐচ্ছিক হিসেবে নিয়ে থাকে। আর মানবিক শাখার প্রায় সব শিক্ষার্থীই তাদের ঐচ্ছিক বিষয়ের তালিকায় অর্থনীতি রাখে।
সেই হিসেবে ২২ ও ২৪ জুলাই একসঙ্গে পরীক্ষা হলে মানবিক শাখার একজন শিক্ষার্থীকে সকালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অথবা ইতিহাস বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। আর বিকেলে অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হবে। যা যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য কষ্টসাধ্য।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের তেমন চাপ পড়বে না। তাদের ২২ তারিখে রসায়ন পরীক্ষা থাকলেও ২৪ তারিখে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ের পরীক্ষা নেই। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা নেই। যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা আছে, সেগুলো খুব কম শিক্ষার্থী থাকে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক শাখা থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন সাইয়েদা হাফসা মিম। তিনি বলেন, আমার ইতিহাসও আছে, আবার অর্থনীতিও আছে। অর্থনীতি তুলনামূলক কঠিন। ইতিহাসে লিখতে হয় বেশি। সকালে ইতিহাস দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা দিয়ে বিকেলে অর্থনীতি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। সরকারকে আমাদের দিকটা বুঝতে হবে। এভাবে চাপিয়ে দিলে আমরা মেনে নেবো না।
সাইয়েদা হাফসার মা সাজেদা সুলতানা বলেন, ‘মেয়েটা যখন থেকে শুনছে, একদিনে ইতিহাস দ্বিতীয়পত্র ও অর্থনীতি প্রথমপত্র পরীক্ষা হবে। তারপর থেকে পড়তে বসতে পারছে না। বারবার বলছে, এটা কীভাবে সম্ভব? কীভাবে সে পরীক্ষা দেবে একদিনে দুই বিষয়ে এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, সন্তানদের ওপর অযাচিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। এ ঘোষণা প্রত্যাহার করুন। নিয়মিত পরীক্ষা শেষে দুই দিনের পরীক্ষা আলাদা দুইদিন তারিখ দিয়ে গ্রহণ করুন।
শিক্ষার্থীর স্বার্থরক্ষাকারী অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘একদিনে যদি কোনো শিক্ষার্থীর দুই বিষয়ের পরীক্ষা সকাল-বিকাল পড়ে যায়, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। একদিন বিরতি দিয়ে দুইদিনের পরীক্ষা নেওয়ার সময়সূচি দিলে সেটা ভালো হয়। আশা করি, নতুন সূচি ঘোষণার সময় শিক্ষা বোর্ডগুলো শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সূচি তৈরি করবেন।’
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমার বার্তা/এমই