চীন সহ বিশ্বজুড়ে পণ্য ও প্রযুক্তি রপ্তানির জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার লাইসেন্স আবেদন আটকে রয়েছে। অনুমোদনের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটিতে অস্থিরতার কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর রয়টার্স’র
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির প্রচারণায় একজন পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক। সূত্র জানিয়েছে, লুটনিকের নেতৃত্বে রপ্তানি ব্যুরো প্রত্যাশিত নতুন নিয়ম জারি করতে ব্যর্থ হয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগ করে সরে দায়িয়েছেন অনেক অভিজ্ঞ কর্মী।
চলমান এই অচলাবস্থায় অন্যতম দৃষ্টান্ত-এনভিডিয়া থেকে চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপের চালান দ্রুততম সময়ে অনুমোদন না পাওয়া। কোম্পানিটি গত ১৪ জুলাই বলেছে, সরকার তাদের এইচটুও চিপের জন্য লাইসেন্স প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে, শিগগিরই সরবরাহ শুরু করার আশা করছেন তারা। লুটনিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন, বিক্রয় অনুমোদন করা হবে। কিন্তু সূত্র জানিয়েছে, এখনও কোনও লাইসেন্স জারি করা হয়নি এবং কোটি কোটি ডলারের এআই চিপের অর্ডার এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, লাইসেন্স আবেদনের জট তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ। যদিও এনভিডিয়ার একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বাণিজ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র তাদের লাইসেন্সিং এর এই অনুশীলনকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘‘শিল্প ও নিরাপত্তা ব্যুরো ‘জাতীয় নিরাপত্তার গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপনকারী রাবার-স্ট্যাম্প লাইসেন্স আবেদনগুলো আর অনুমোদন করবে না। বিআইএস কঠোর নিয়ম ও আক্রমণাত্মক নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্পের এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’’
বৈদেশিক বাণিজ্য প্রচার ও আমেরিকান প্রযুক্তি সুরক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি সংস্থার অস্থিরতা এবং এর ফলে সৃষ্ট নিষ্ক্রিয়তা বিদেশে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করা কোম্পানিগুলিকে ক্রমেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। চীনে রপ্তানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাওয়াও এই উদ্বেগের অন্যতম কারণ।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে ও বাণিজ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করা মেগান হ্যারিস বলেছেন, ‘এই ধরণের বিলম্ব ও অনিশ্চয়তা আমাদের অসুবিধার মধ্যে ফেলেছে।’
২০২৩ অর্থবছরে বিআইএস-এর প্রতিটি রপ্তানি লাইসেন্সের আবেদন অনুমোদন পেতে গড়ে ৩৮ দিন সময় লেগেছে। এখন ৩৭,৯৪৩টি আবেদনের মধ্যে ২ শতাংশ প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, যাতে সংবেদনশীল পণ্য ও প্রযুক্তি এমন দেশ পৌঁছাতে না পারে যাদের পণ্যের ব্যবহার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।
বিআইএসের আন্ডারসেক্রেটারি হয়ে ওঠা জেফ্রি কেসলারের সমালোচনা করে মার্চ মাসে কিছু কর্মী বলেছেন, তিনি ব্যুরোকে মাইক্রোম্যানেজ করতে ও পর্যাপ্ত যোগাযোগে ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এক কর্মী সভায়, কেসলার বিআইএস কর্মীদের কোম্পানির প্রতিনিধি এবং শিল্প কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ সীমিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের জন্য কেসলারের অফিস থেকে অনুমোদন পাওয়াও ছিল বেশ জটিল। বিআইএস মুখপাত্র বলেছেন, কেসলার ব্যুরোর ‘অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার’ ও লুটনিকের ‘পূর্ণ আস্থা’ অর্জন করেছেন। যদিও এতে মার্কিন শিল্পে হতাশা বাড়ছে।
মার্কিন-চীন ব্যবসা কাউন্সিলের সভাপতি শন স্টেইন বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে কোনও ইঙ্গিত নেই যে আদৌ লাইসেন্স প্রদান করা হবে কিনা, বা তা কখন করা হবে।লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে সময় যখন দ্রুতই ফুরাচ্ছে তখন চীনা কোম্পানিগুলো অন্য দেশের সরবরাহকারীদের অনুসন্ধান ও চুক্তি করছে,। যত বেশি বিলম্ব হবে, তত বেশি বাজারে আমরা অংশীদারিত্ব হারাবো।’
ফ্লোরিডা-ভিত্তিক বাণিজ্য পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কমপ্লায়েন্স অ্যাসুরেন্সের সভাপতি জিম আনজালোন বলেছেন, ‘ল্যাটিন আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য অংশের সেন্সর, রাডার ও সোনারের লাইসেন্স অনুমোদনে বিলম্ব হচ্ছে। সরকারের নীতি কী-সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হচ্ছে না।’
চীনে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য মাস দুয়েক আগে প্রায় দুই ডজন আবেদন জমা করার পর বেশ কয়েকটি প্রত্যাখ্যত হয়েছে, গত বুধবার আরও চারটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে-বলেন জিম আনজালোন।
সূত্র বলেছে, কিছু লাইসেন্স অনুমোদন করা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা মিত্র দেশগুলোতে রপ্তানি করে থাকে। বাণিজ্য ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত মে মাসে বলেছিল, এটি বাইডেন প্রশাসনের নিয়ম বাতিল করে নতুন কিছু প্রতিস্থাপন করবে, যার মাধ্যমে এআই চিপ রপ্তানি করা যেতে পারে, কিন্তু সংস্থাটি এখনও তা করেনি।
সূত্র আরও জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে যেসব খসড়া করা হয়েছে তা প্রকাশিত হয়নি, যার মধ্যে রয়েছে-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন রপ্তানি নীতির কারণে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলির সহায়ক সংস্থাগুলিতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করা।
ইতিমধ্যে চীনভিত্তিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের শূন্যপদ পূরণ করা হয়নি। বিআইএস অফিস অফ এক্সপোর্ট এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড্যান ক্লাচের জন্য এই সপ্তাহে একটি অবসরকালীন বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যিনি সংস্থাটির সর্বশেষ অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে পদত্যাগ করেন।
আমার বার্তা/জেএইচ