বিশিষ্ট কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ- মাসরুর মওলা বলেছেন- “শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে পর পর ৩টি নির্বাচনে অংশ নিতে কুটকৌশলে জাতীয় পার্টিকে বাধ্য করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি গনতান্ত্রিক অংশগ্রহনমূলক নিবার্চনে বিশ্বাসী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১৫৭ জন প্রার্থীকে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে সি এম এইচ হাসপাতাল- এ আটকে রেখে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ব্যবহার করে- নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করে। একজন কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি- জাতীয় পার্টি অবাধ নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশ গ্রহনমূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে”- বিশিষ্ট কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাসরুর মাওলা- জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক দর্শন বিশ্লেষন করে এই প্রতিনিধিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
প্রায় ২০ বছরের কুটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব মাসরুর মওলা- এই প্রতিনিধিকে বলেন- “একটি বিশেষ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পেক্ষাপটে নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারী এবং পরবর্তীতে ১০ বছরের দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা একই সাথে ১৫ বছরের বিরোধী দল হিসেবে সংসদে ভূমিকা রাখার প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির সব দলের অংশগ্রহনে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে- নির্বাচনে অংশগ্রহন প্রত্যাশা করে”। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন- “জাতীয় পার্টিতে দেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব রয়েছে- ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। এদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে গনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদের ইতিবাচক নেতৃত্ব জাতীয় পার্টির এগিয়ে যেতে পারে”।
কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাসরুর মওলা বলেন- “জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বেই এদেশে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়নের সূচনা হয়েছে। তার ঐতিহাসিক উন্নয়নের দর্শন হচ্ছে- “৬৮ হাজার গ্রাম বাচলে বাংলাদেশ বাচবে”- তার উন্নয়নের দর্শন - বাংলাদেশের অথনৈতিকে মূলত: টেকসই করেছে”। তিনি বলেন- “সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ- তাঁর শাসনামলে- দেশের বিচার ব্যবস্থাকে গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
উপজেলা পর্যায়ে বিচারিক আদালত পৌছে ছিল। তার আমালেই দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে রুপ দিয়েছিলেন। সারা দেশে ৬টি হাইকোট বেঞ্চে স্থাপন করেছিলেন। সারা দেশের অর্থনৈতিক পেক্ষাপট- একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দারিদ্রতা দূর করেছিলেন গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায়- তিনি একজন নিরলস কর্মী হিসেবে- ঘর থেকে ঘরে ছুটে বেড়িয়েছেন। আজকের রাজনৈতিক পেক্ষপটে তাঁকে খুব বেশি মনে পড়ছে”।
তিনি বলেন- “১৯৯০ সালের সর্বশেষ বাজেটে তখনকার অর্থনৈতিক পেক্ষপটে ৫.৮ বিলিয়ন বাজেট সম্প্রসারন করেছিলেন। যা ছিল তখনকার সময়ে অর্থনৈতিক মুক্তির অনন্য ভিত্তি”।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এর রাজনৈতিক দর্শন বনর্না করে বলেন- “তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বে একজন অতি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শান্তিরক্ষী মিশনে তার আমলেই প্রথম এ দেশ থেকে জাতিসংঘে সৈন্য প্রেরন এর সূচনা হয়। তিনি সার্ককে অর্থবহ অ ান্তজার্তিক প্ল্যাটফম হিসেব প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি প্রতিবেশী দেশসহ আমেরিকা, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী কুটনৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে- দেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন”।
বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকার ৯টি সংস্কার কার্যক্রম সর্ম্পকে তিনি বলেন- “সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ- তাঁর গৃহীত কর্মসূচীর মাধ্যমেই এসব সরকার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। দেশকে ৭টি প্রদেশে রুপান্তরের মাধ্যমে গনতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিগত সরকার- তাঁর বিরুদ্ধে কোন আদালতে দূর্নীতির অভিযোগ প্রমান করতে পারেনি। তিনি “ইসলামকে” রাষ্ট্র ধর্মের জাতীয় মর্যাদাসহ সকলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন। শুক্রবার সহ সপ্তাহে ২দিন সাপ্তাহিক ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন”।
তিনি বলেন- রাজনৈতিক ভাবে গ্রাম পর্যায়ে তিনি ছিলেন- খুবই জনপ্রিয়। সংসদ নির্বাচনে তিনি ৫টি আসনে নির্বাচন করে ৫টি আসনেই বিজয়ী হয়েছেন । এমন নজির শুধুমাত্র বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উন্নয়নের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে- তিনি সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরে ফ্লাইওভার সর্বপ্রথম তিনিই সূচনা করেছিলেন- তার শাসনামলের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত আজও সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে বহন করেছে।
কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাসরুর মওলা বলেন- “জাতীয় পার্টি একটি জনগুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক দল। এ দলের রয়েছে রাষ্ট্রপরিচালনার বিশেষ দক্ষতা। গনতন্ত্রের পেক্ষাপটে মানুষের স্বপ্নপূরনে- দেশের কল্যানে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে জাতীয় পার্টির এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা তিনি করছেন। কারন গনতন্ত্রে প্রতিটি মত ও পথকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়- এটাই গনতন্ত্রের সৌর্ন্দয্য। বিভিন্ন মত ও পথ থাকবে দিন শেষে অবাধ নিরোপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে”।
লেখক : কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
আমার বার্তা/মাসরুর মওলা/এমই