ই-পেপার রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

পর্যটন আকর্ষণে প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

সাকিফ শামীম:
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৭

বাংলাদেশ, প্রকৃতির এক অপার উপহার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ বনের শ্বাসমূলের রহস্যময়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন, প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্যমণ্ডিত পাহাড়পুর, চা বাগানের সবুজ গালিচা মোড়া সিলেট কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলের অপার সৌন্দর্য নিয়ে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি— প্রতিটি গন্তব্যই বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে উজ্জ্বল স্থান পাওয়ার দাবিদার। এই সম্পদ, সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য কে কাজে লাগিয়ে পর্যটন খাত এগিয়ে যেতে পারে তার পূর্ণ সম্ভাবনার পথে। বৈশ্বিক পর্যটন সংস্থার (UNWTO) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যটন রাজস্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের হিস্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এই শিল্পকে দ্রুত জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সুচিন্তিত ও শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং অপরিহার্য। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বা 'সফট পাওয়ার' শক্তিশালী করবে।

পর্যটন শিল্পে আমাদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে চ্যালেঞ্জটি কেবল একটি বা দুটি নয়, বরং এটি একটি বহুমাত্রিক সংকট। এই সংকটকে আমরা প্রধানত ৪টি স্তম্ভে ভাগ করতে পারি: ১. দুর্বল ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো, ২. পর্যটক সহায়ক পরিষেবার মান ও নিরাপত্তার অভাব, ৩. অকার্যকর ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল এবং ৪. আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন এবং কেনাকাটা ব্যবস্থার অভাব।

পর্যটকরা একটি গন্তব্যে এসে কেবল প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চান না, তারা চান একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমাদের অনেক সম্ভাবনাময় এলাকায় এখনো উন্নত সড়ক যোগাযোগ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং মানসম্মত পানীয় জলের ব্যবস্থা অপ্রতুল। যেমন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য লজিস্টিক সুবিধা এখনও আন্তর্জাতিক মানের নয়। ঢাকা থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানোর জন্য পর্যটন-বান্ধব পরিবহন (যেমন: হাই-স্পিড ট্যুরিস্ট ট্রেন বা ডেডিকেটেড বিলাসবহুল বাস, ইয়ট সার্ভিস) সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এছাড়া, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে, দ্রুতগতির ডিজিটাল কানেক্টিভিটি পর্যটকদের জন্য অপরিহার্য। অনেক প্রত্যন্ত পর্যটন এলাকায় এখনও দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ একটি বড় বাধা, যা ডিজিটাল মার্কেটিং ও অনলাইন পর্যটন পরিষেবাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেলের অভাব এবং যেগুলো আছে সেগুলোতে পরিষেবার উচ্চমূল্য একটি বড় বাধা। একটি সরকারি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের মোট পর্যটন বিনিয়োগের একটি বিশাল অংশ (আনুমানিক ৬৫%) এখনও প্রধানত রাজধানী ও কিছু বাণিজ্যিক কেন্দ্রে সীমিত। গ্রামীণ বা পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ইকো-লজ বা হোম-স্টে-এর মতো টেকসই আবাসনের ধারণা এখনও জনপ্রিয়তা পায়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যটকদের নিরাপত্তা। বিশেষ করে বিদেশি অতিথিদের জন্য, ২৪/৭ মনিটরিং ও গাইড সার্ভিস নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে, অপরিচ্ছন্নতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থানকে ম্লান করে দিচ্ছে। টেকসই পর্যটন (Sustainable Tourism) নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে জোর দিতে হবে।

বিশ্ব পর্যটন অর্থনীতির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেসব দেশ সফল, তারা তাদের জিডিপি-তে পর্যটন থেকে উচ্চ অবদান রাখে (যেমন: ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অনেক দেশের জিডিপি-র ২০%-এরও বেশি)। সেখানে আমাদের প্রত্যক্ষ অবদান এখনও ২ শতাংশের আশেপাশে স্থির হয়ে আছে। এই ব্যবধানের অন্যতম কারণ হলো, আমরা এখনও পর্যন্ত 'ব্র্যান্ড বাংলাদেশ'-এর একটি একক ও সুসংহত আইডেনটিটি তৈরি করতে পারিনি। আমাদের প্রচারণায় বৈচিত্র্য থাকলেও সমন্বয়ের অভাব প্রকট। একই সঙ্গে, ডেটা অ্যানালিটিকস-এর ব্যবহার খুবই সীমিত। কোন দেশ থেকে বা কোন বয়সের পর্যটকরা বাংলাদেশে বেশি আগ্রহী, তাদের খরচ করার প্রবণতা কেমন— এই ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ না করে মার্কেটিং করা হলে তা লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে। আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর কনটেন্ট ও প্রচারণার মানও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে একটি কার্যকর ও লাভজনক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নিম্নলিখিত কৌশলগুলি গ্রহণ করা আবশ্যক:

১. স্মার্ট ট্যুরিজম জোন ও আঞ্চলিক মহাপরিকল্পনা: নির্দিষ্ট কিছু সম্ভাবনাময় এলাকাকে (যেমন: কক্সবাজার-টেকনাফ অর্থনৈতিক করিডোর, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল) 'স্মার্ট ট্যুরিজম জোন' হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আঞ্চলিক মহাপরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যা ল্যান্ডস্কেপ ও পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল হবে।

২. নিরাপত্তা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন: পর্যটকদের জন্য পর্যটন পুলিশ এবং বিশেষ ট্যুরিস্ট গাইড সার্ভিস বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সাথে, পর্যটন শিল্পে কর্মরতদের, বিশেষ করে গাইড, ড্রাইভার ও হোটেল কর্মীদের বিদেশি ভাষা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আতিথেয়তার (Hospitality) ওপর উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া আবশ্যক, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. ডেটা-নির্ভর ও ডিজিটাল মার্কেটিং: বিশ্বব্যাপী ট্রাভেল ফেয়ারগুলোতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি, গুগল, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লক্ষ্যভিত্তিক (Targeted) প্রচারণা চালাতে হবে। পর্যটন সম্পর্কিত ডেটা বিশ্লেষণ করে (যেমন: চীনা, জাপানি বা ইউরোপীয় পর্যটকদের আগ্রহের ধরন) সেই অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করতে হবে।

৪. যোগাযোগ এবং বিনোদন ব্যবস্থা উন্নয়ন: নির্ধারিত পর্যটন এলাকায় ভ্রমনের জন্য আরামদায়ক এবং বহুমাত্রিক নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই বিষয়ে সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মানের বিনোদনকেন্দ্র (সিনেমা হল, মিউজিয়াম, উন্নতমানের ব্যাংকিং ইত্যাদি)-র ব্যবস্থা করতে হবে।

পর্যটন শিল্প একটি বহুমাত্রিক খাত, যা শুধু অর্থ নয়, দেশের পরিচয়কেও বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে। বাংলাদেশের এই সুপ্ত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে হলে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি খাত, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছতা জরুরি। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও বিশ্বমানের পরিষেবাকে ভিত্তি করে যখন দেশের পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি সুসংগঠিত ব্র্যান্ডিং করা হবে, তখনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আকৃষ্ট হবে। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে পর্যটন শিল্প আগামীতে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তার পথরেখা আজই প্রস্তুত করতে হবে। এই শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই।

লেখক : ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ল্যাবএইড গ্রুপ।

আমার বার্তা/সাকিফ শামীম/এমই

শেখ হাসিনার অধীনে পরপর ৩টি নির্বাচনেই জাতীয় পার্টিকে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে

বিশিষ্ট কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ- মাসরুর মওলা বলেছেন- “শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে পর পর ৩টি নির্বাচনে অংশ

রোহিঙ্গা ঢেউ, আরাকান আক্রমণ: তহবিল সংকটে তৎপরতা

রোহিঙ্গাদের বাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে এখন পাঁচ লাখেরও কম রোহিঙ্গা রয়েছে, এবং আরাকান আর্মির চলমান নিপীড়ন

মিয়ানমারে রাশিয়া এবং আমেরিকার আগ্রহ ও প্রভাব

বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো তাদের প্রভাব বলয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। সামরিক

ডিজিটাল ইকোনমিতে তরুণদের অংশগ্রহণে বাড়ছে প্রবৃদ্ধির গতি

গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি,
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

গজারিয়ায় বাউশিয়ায় দুস্থদের সহায়তা দিলেন কামরুজ্জামান রতন

আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাটের, বিএনপির সংস্কারের: সালাউদ্দিন

পিবিসির মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় যোগ দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতায় বসান, ক্ষমতাচ্যুত করেন: ধর্ম উপদেষ্টা

ফ্যাসিবাদের দালালি করা গণমাধ্যম টিকে থাকার অধিকার রাখে না: রিজভী

জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ঐক্যবদ্ধ না হলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে: তারেক রহমান

তামিম-বুলবুলসহ তিন ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন নিলেন ৬০ জন

শেখ হাসিনার অধীনে পরপর ৩টি নির্বাচনেই জাতীয় পার্টিকে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে

সেন্টমার্টিনে পর্যটন বন্ধ করা হয়নি, পরিবেশ রক্ষায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে

সরাইলে ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ২৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

কুলিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে উদযাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলন

মাদারগঞ্জে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: মুহাম্মদ তাহের

ই-রিটার্ন ব্যবহারের মাধ্যমে আয়কর প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান ঢাকা চেম্বার সভাপতির

মুসলিম পর্যটকদের জন্য জাপানের শপিংমলে আলাদা নামাজ কক্ষ

বিসিএস ২২ ব্যাচ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক