দেশের গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গবেষণা থেকে বাজার: একাডেমিয়া–শিল্পখাত গবেষণা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্ভাবন ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনাসভাটি আয়োজন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, এই আয়োজন সহযোগী ছিল বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তির প্রয়োগই ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ভিত্তি নির্ধারণ করবে। আমরা এমন এক সময়ের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তির প্রয়োগই অর্থনৈতিক শক্তির মূল নির্ধারক হয়ে উঠবে।
গবেষণাগার ও শিল্পখাতের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকারের গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগকৃত প্রতিটি টাকাই যেন উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গবেষণা ও শিল্পখাতের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সময়োপযোগী, তবে এ উদ্যোগ সফল করতে নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা অপরিহার্য।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক প্রবাসী বিজ্ঞানী দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী, তারা কোনো আর্থিক প্রণোদনা নয়, বরং সম্মান ও দেশপ্রেমের টানে কাজ করতে চান।
তিনি বলেন, সরকারের একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত ফল দিতে পারছে না।
স্থানীয় অনেক গবেষক বিদেশে গিয়ে প্রকাশনার মাধ্যমে নিজেদের পরিচিত করতে বেশি আগ্রহী, কিন্তু সেই জ্ঞান দেশের কল্যাণে ব্যবহার করতে আগ্রহী নয়—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শিল্পখাতের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাবে এসব গবেষণার ফল বাজারে পৌঁছায় না। আমরা চাই, আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাজারে প্রবেশাধিকার লাভ করুক।’
গবেষকদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তাদের এমন সফর বন্ধের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তা খুব একটা সফল হয়নি।
তবে তিনি কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে দেশীয় বিজ্ঞানীদের অবদানের প্রশংসা করেন। অনেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, যার ফলে এখন ১৮ কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ সম্ভব হয়েছে, যেখানে একসময় সাড়ে সাত কোটি মানুষোর খাদ্য যোগান দেওয়া কঠিন ছিল, বলেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, কখনও কখনও নীতি নির্ধারকেরা গবেষণার ফল মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হন, কারণ গবেষণা প্রতিবেদনগুলো বছরের পর বছর তাদের টেবিলেই আটকা পড়ে থাকে।
এ অবস্থার পরিবর্তনে তিনি বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের আহ্বান জানান এবং নতুন উদ্ভাবন ও প্রয়োগমুখী গবেষণায় মনোনিবেশের পরামর্শ দেন।
দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একসময় তারা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল না, কিন্তু নিজেদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা আজ বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নিজেদের স্বার্থের বাইরে এসে মানুষের বৃহত্তর কল্যাণে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করুন।
আমার বার্তা/এমই