আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে নির্বিঘ্নে যাত্রী চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, মাদারিপুরের দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ও কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের নাব্যতা সংকট কেটে গেছে। ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় দেশের কোন রুটেই নাব্যতা সংকট নাই। সুষ্টুভাবে ফেরি, লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল আসন্ন ঈদে ঘরে ফেরা নৌপথে হবে স্বস্থির যাত্রা।
এমনটাই আশাপ্রকাশ করছেন সংশ্লিস্ট ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলীগণ
তারা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১২ ফুট, আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১২ ফুট ও আরিচা-বাঘাবাড়ি রুটে ১১ফুট পানি আছে। বিশেষ করে নৌপথ সচল রাখার জন্য বরিশাল অঞ্চলে ১৮টি, মানিকগঞ্জের আরিচা অঞ্চলে ১৬টি , খুলনা অঞ্চলে ১০টি, চট্রগ্রাম অঞ্চলে ৭টি, সিলেট অঞ্চলে ১০টি ড্রেজার কাজ করছে।
তারা জানান, বর্তমানে ফেরি চলাচলের এখন আতঙ্কে বিষয় নয়। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার কোন কারন নাই। যেখানে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ১২ ফুট, আরিচা-কাজিরহাট ১২ফুট ও আরিচা-বাঘাবাড়ি রুটে ১১ফুট পানি আছে। ফলে দেশের কোন রুটেই নাব্যতা সংকট নাই। সম্প্রতি কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের নাব্যতা সংকট কেটে গেছে। বর্তমানে এই নৌপথে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে ঈদের কারণে এ নৌপথে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবোঝাই ট্রাকের চাপ বেড়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা সংকট দেখা যায়। নাব্যতা সংকট দূর করতে নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ ৭টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু অপসারণের কাজ শুরু করে। টানা ১৪ দিন ড্রেজিং করার পরে চ্যানেলের পলি মাটি অপসারণ ও চ্যানেলের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়। ফলে এই নৌপথে ১৭টি ফেরি চলাচল শুরু করে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি ড্রেজিং বিভাগের সংশ্লিস্টরা জানান,বর্তমানে আমাদের লৌহজং চ্যানেলসহ কোনো নৌপথে নাব্যতা সংকট নেই। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে এখন আর পলি মাটির পড়ার সমস্যা নাই। তবে চ্যানেলের মুখে চর ভেঙে আসা মাটি জমা হলে নাব্যতা সংকটের তৈরি হয়। তবে আশা করছি ঈদের আগে ও পরে এই চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকবে না। তিনি আরও বলেন, একটি ফেরি দিয়ে চলাচলে ৮ ফুট গভীরতা দরকার। এই নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করতে আমাদের আরও একটি চ্যানেলে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানান।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কুশল কুমার সাহা বলেন, ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি। আমাদের পুলিশের একাধিক সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করছি। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
এদিকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পথে নাব্যতা সমস্যা দূর করায় বর্তমানে সারাদেশে ১০৭টি নৌপথের মধ্যে ৪৩টি পথ ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সংযোগকারী। এই ৪৩টি নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় দুইশ। আর শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজারে চলাচল করে ৮৭টি লঞ্চ।
ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-নাজিরপুর, ঢাকা ভোলা, ঢাকা- বগা- পটুয়াখালী, পটুয়াখালী- গলাচিপা, ঢাকা- ঘোষেরহাট, ঢাকা- বরগুনা, ঢাকা- শৌলা- মুলাদি, ঢাকা- শৌলা- মুলাদি নৌপথে নাব্যতা সমস্যা না থাকায় এবারের ঈদ যাত্রা হবে স্বস্থির।
বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের আওতাধীন ঢাকা-বরিশাল নৌপথে কীর্তনখোলা নদীতে পানির সর্বনিম্ন গভীরতা আছে ১১ ফুট। ঢাকা-নাজিরপুর নৌপথে তেতুলিয়া নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ১০ফুট। ঢাকা- ভোলা নৌপথে আইচা নদী, তেঁতুলিয়া নদী, ইলিশা নদী, মেঘনা লোয়ার নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ১০ফুট। ঢাকা- বগা-পটুয়াখালী নৌপথে কবাই, কারখানা, লাউকাঠি নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ১০ ফুট।
অপরদিকে পটুয়াখালী-গলাচিপা গলাচিপা নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ৯ ফুট। ঢাকা-ঘোষেরহাট তেতুলিয়া নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ৯ ফুট। ঢাকা- বরগুনা খাকদোন নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা রয়েছে ১০ ফুট। এছাড়া ঢাকা-শৌলা-মুলাদি নয়া ভাঙানি নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ৯ ফুট। কালাইয়া-ধুলিয়া-নুরাইনপুর নুরাইনপুর খাল, তেতুলিয়া নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ৯ ফুট, ঢাকা-ইলিশা নৌপথে মেঘনা নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ১২ ফুট ও ঢাকা-কালাইয়া নৌপথে কালাইয়া খাল, তেতুলিয়া নদীর পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ১০ ফুট।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা হতে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পথগুলোর মধ্যে একটিও নৌ-পথ ড্রেজিং না করার কারণে বন্দ হয়নি। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে কয়েকটি নৌ-পথে যাত্রী কমে যাওয়ায় লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ আছে। কিন্তু কার্গো নৌ-যান চলাচল করছে। ফলে নৌ-পদগুলোর নাব্যতার কোন সমস্যা নেই। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিগত ৩-৪ বছরে নৌপদগুলোতে ড্রেজিং-এর কোন চাহিদা না আসায় অর্থাৎ নাব্যতার কোন সমস্যা না থাকায় ড্রেজিং করা হয়নি। ফলে ইতিপূর্বে ড্রেজিং-এর অভাবে ঈদ যাত্রায় যে সমস্যগুলো হয়েছে এবার তা হবে না।
ঢাকা হতে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-পদগুলোর মধ্যে আসা করা যায় আসন্ন ঈদ মৌসুমে নাব্যতায় কোন সমস্যা হবে না। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ড্রেজিং বিভাগের বাজেটকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে সঠিক ও যোগোপযোগী এবং দক্ষভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। যেমন বিগত সময়ে ১ (এক) লিটার জালানীতে ১.৩৫ টন মিটার খনন করা হত। বর্তমানে ২০২২/২৩ সাল হতে ১ (এক) লিটার জ্বালানীতে সর্বনিম্ন ১.৮০ টন মিটার খনন করা হচ্ছে। যা পূর্বের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি হচ্ছে। ফলে জ্বালানীর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে।
এ ছাড়া নৌ-পথের কোথাও কোন চাহিদা থাকলে নৌ-পদ ব্যবহার কারী নৌ মালিক সমিতি ও নৌযান শ্রমিক সমিতি প্রতিনিধিদের অনুরোধে নৌপদগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। যদি কোন নৌ-পথ খননের চাহিদা আসে তা সাথে সাথেই খননের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
আমার বার্তা/রতন বালো/এমই