সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়, নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা চাই বাংলাদেশের পর্যটন এক নতুন যুগে প্রবেশ করুক। আটাব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে—পর্যটনের শক্তি দিয়েই একটি উন্নত, মর্যাদাপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। - আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ
আমার বার্তা : বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কীভাবে দেখছেন?
আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ : বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ইউনেস্কো স্বীকৃত সুন্দরবন, পাহাড় ও জলপ্রপাতে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। এসবকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাতকে আয় ও কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। প্রয়োজন কেবল পরিকল্পিত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ।
আমার বার্তা : পর্যটন উন্নয়নে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আব্দুস সালাম আরেফ : পর্যটন খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল অবকাঠামো, সীমিত প্রমোশন, দক্ষ জনবল ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি, বিদেশি পর্যটকদের জন্য কঠিন ভিসা প্রক্রিয়া, ও স্থানীয় পর্যায়ে সেবার মানের ঘাটতি। পাশাপাশি, অনেক সম্ভাবনাময় অঞ্চল এখনও পর্যটন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়নি।
আমার বার্তা : পর্যটন খাতের অন্তরায় হিসেবে আপনি কী বিষয়গুলো দেখছেন?
আব্দুস সালাম আরেফ : সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো বেসরকারি খাতের পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব। যদিও পর্যটন একটি লাভজনক খাত, তবু বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি নীতির অভাবে তারা পিছিয়ে আছে। পর্যাপ্ত ফ্যাসিলিটি, প্রশিক্ষিত গাইড, গন্তব্যভিত্তিক উন্নয়ন না থাকাও বড় বাধা।
আমার বার্তা : বেসরকারি খাত কোন কোন ক্ষেত্রে পর্যটনে বিনিয়োগ করতে পারে?
আব্দুস সালাম আরেফ : বেসরকারি খাত চাইলে সিনেমা হল, শপিং সেন্টার, ফুড কোর্ট, রিসোর্ট, প্যারাগ্লাইডিং, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ওয়াটার রাইডস, রিসোর্ট, পাঁচতারকা আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে।
আমার বার্তা : বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আনতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
আব্দুস সালাম আরেফ : প্রথমত, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এয়ার টিকিটের মূল্য অনেক কমানো জরুরি, যেন বাজেট ট্যুরিস্টরাও বাংলাদেশকে পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন। পাশাপাশি সাশ্রয়ী আবাসন, নিরাপত্তা, তথ্য সহায়তা, পরিবহন এবং গাইড সেবার মান উন্নয়ন অপরিহার্য। পর্যটকদের এমন পরিবেশ দিতে হবে যেখানে তারা কম খরচে সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা পায়—এটাই আন্তর্জাতিক পর্যটনের মূলমন্ত্র।
আমার বার্তা : এই প্রক্রিয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কী ভূমিকা থাকা উচিত?
আব্দুস সালাম আরেফ : পর্যটন একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়িক খাত। তাই শুধুমাত্র পর্যটন মন্ত্রণালয় বা কর্পোরেশন নয়—সব মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিটিবি, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বন্দর কর্তৃপক্ষ—সকলকে পর্যটন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্রত্যেক পর্যায়ে সমন্বয় ও সহযোগিতার মানসিকতা থাকতে হবে। পর্যটক যেন কোথাও হয়রানির শিকার না হয় বা বিভ্রান্তির মধ্যে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাই বড় দায়িত্ব। কোন ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা যেন না থাকে।
আমার বার্তা : নদীভিত্তিক পর্যটন উন্নয়নে কী ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়?
আব্দুস সালাম আরেফ : নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো পর্যটনের জন্য অপরিসীম সম্ভাবনাময়।বড় ক্রুজ শিপ চালুর পরিকল্পনা করা যায় , যা আধুনিক লঞ্চ ও ভেসেল দিয়ে পরিচালিত হবে। এতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বিলাসবহুল নদীভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাবেন। এছাড়া ভেসেল ও ওয়াটার ট্যুরিজমে বেসরকারি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করা দরকার।
আমার বার্তা : কমিউনিটি ট্যুরিজমে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কী এবং এ ক্ষেত্রে আটাব কী পরিকল্পনা করছে?
আব্দুস সালাম আরেফ : গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটি ট্যুরিজম হতে পারে টেকসই পর্যটনের মূলমন্ত্র। আটাব দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট কমিউনিটিতে ঘর নির্মাণ, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ফোক সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, ও লোকাল ট্র্যাকিং পর্যটন কার্যক্রমে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
আমার বার্তা : বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের কি সংস্কার প্রয়োজন আছে?
আব্দুস সালাম আরেফ : পর্যটন কর্পোরেশন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে। প্রজেক্ট-ভিত্তিক পরিকল্পনা, দক্ষ নেতৃত্ব, আধুনিক মার্কেটিং, এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। কর্পোরেশনের কার্যক্রমে মানুষের আস্থা ফেরানো এখন জরুরি।
আমার বার্তা : বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সংস্কার দরকার আছে কি?
আব্দুস সালাম আরেফ : বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাদের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে, পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার জন্য নিজস্ব আয় সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি জেলায় পর্যটন বোর্ডের অফিস, জনবল ও বাস্তবায়ন ইউনিট থাকতে হবে। পর্যটনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদেরকে বোর্ড সদস্য ও পরামর্শক হিসেবে যুক্ত করতে হবে। এতে নীতিনির্ধারণে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হবে।
আমার বার্তা : ভবিষ্যতে আটাবের পরিকল্পনা কী?
আব্দুস সালাম আরেফ : ডিজিটাল ট্যুরিজম, স্মার্ট ট্যুরিস্ট গাইড, মোবাইল অ্যাপস, ই-ভিসা ও বুকিং সুবিধা চালু করা এখন সময়ের দাবি। আটাব আগামী দিনে এসব প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে চায়। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে পর্যটনকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশল্পে পরিণত করার লক্ষ্য আমাদের।
আমার বার্তা : তরুণদের জন্য আপনার বার্তা কী?
আব্দুস সালাম আরেফ : পর্যটন খাত তরুণদের জন্য একটি সোনালী সম্ভাবনার ক্ষেত্র। প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও আন্তরিকতা নিয়ে যারা কাজ করতে চান, তাদের জন্য পর্যটন একটি চমৎকার ক্যারিয়ার। আমি তরুণদের আহ্বান জানাই—নিজের এলাকা, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরুন। পর্যটনের নেতৃত্বে তরুণরাই হোক আগামী বাংলাদেশের দূত।
আমার বার্তা/এমই