ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামের তনিমা সুলতানা। বুধবার (৯ জুলাই) রাতে তার ঘরে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। পরে গবাদিপশুসহ পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশী শাহজাহান মজুমদারের দোতলা ভবনের ছাদে।
শুধু তনিমাই নয়, এলাকার আশপাশের দশটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন এ ছাদে। তাদের মতো দুর্ভোগের একই চিত্র পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজারো মানুষের। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। নদীর পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ অবস্থান করছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে।
আলো মজুমদার নামে দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গেল বছরের বন্যার সময়ও প্রতিবেশীর ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এবার পানি এখনো কম রয়েছে। বসবাস অনুপযোগী হওয়ায় জিনিসপত্র নিয়ে ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। সুপেয় পানির সংকটে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে।
আলীম নামে এক ব্যক্তি বলেন, এটি আমার মামার বাসা। তারা এলাকার বাইরে অবস্থান করলেও বাড়ির ছাদ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া দশটি পরিবার কোনোমতে দিনযাপন করছে। তবে নিরাপদ পানির বেশি সংকট রয়েছে। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে পানিও বাড়ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় টানা চার দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারও (১১ জুলাই) জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, বুধবার বিকেল থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আমার বার্তা/জেএইচ