জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা। অনুষ্ঠানে জলবায়ু সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার শপথ নেন সবাই।
বুধবার (৩ আগস্ট) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের উদ্যোগে এবং ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাট লোকাল লেভেল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘বায়োফিলিয়া: মানুষ, জলবায়ু ও সংস্কৃতির পুনঃসংযোগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
দিনব্যাপী এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কল নেটওয়ার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, যা সুইজারল্যান্ডের সহায়তায় নয়টি সুইস এনজিও সিবিএম (ক্রিশ্চিয়ান ব্লাইন্ড মিশন), এনফ্যান্টস ডু মন্ডে, জিএআইএন (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন), হেক্স-ইপিইআর, হেলভেটাস বাংলাদেশ, সলিডার সুইস, সুইসকন্ট্যাক্ট, সুইস রেড ক্রস এবং টের দেস হোমস এবং বাংলাদেশের আঠারোটি অংশীদার প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ উদ্যোগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ ও বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতা জরুরি। আমাদের হাতে সীমিত সময় ও সম্পদ রয়েছে, তাই যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংকট শুধু টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও বহু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গেও জড়িত।
উৎসবের সমাপনী সেশন এবং জলবায়ু অঙ্গীকার অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন এবং প্রধান জলবায়ু শপথ পাঠকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান।
অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স করিন হেঁচো পিনিয়ানি এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত প্রমুখ।
উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যদি আমরা আমাদের নদীগুলো এবং এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকা রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের দক্ষতা ও সবুজ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের শ্রমশক্তির ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় নয়, বরং পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ায় নিহিত।
সমাপনী বক্তব্যে করিন হেঁচো পিনিয়ানি সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করার জন্য তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান জলবায়ু শপথ পাঠকারী মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান সবাইকে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য অঙ্গীকার করতে এবং এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেন।
আয়োজনের শেষ ভাগে আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় শিল্প ও জলবায়ু সুরক্ষার প্রতি উপস্থিত সবার সমর্থন এক হয়ে ধরা দেয়। জনপ্রিয় ব্যান্ড জলের গান-এর এক দারুণ পরিবেশনা, যা প্রকৃতি, নদী ও মানুষের টিকে থাকার গল্পকে সুরে–সুরে ছড়িয়ে দেয়। উৎসবের সমাপ্তি হয় ‘ইকোস অফ দ্য ডেল্টা’ শীর্ষক নৃত্য, সংগীত এবং গল্প বলার এক কাব্যিক সংমিশ্রণে, যা দর্শকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আয়োজকরা বলেন, এই উদ্যোগের জলবায়ু যোগাযোগ অংশীদার এবং যুব-নেতৃত্বাধীন থিঙ্ক-অ্যান্ড-ডু ট্যাঙ্ক ‘জেনল্যাব’ উৎসবের আয়োজন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে। অনন্য এই আয়োজন মানুষ, জলবায়ু এবং সংস্কৃতিকে সংযুক্তকারী ঐক্য ও প্রতিশ্রুতির এক অনন্য প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আমার বার্তা/এমই