”নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তে নাবিক রেটিং ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে নৌ অধিদপ্তরে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন মন্তব্য করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম।
উল্লেখ্য যে, গত ৯ আগষ্ট নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সমন্মিত নাবিক রেটিং ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর রূপ ধারন করে বহিরাগতদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহন, পরীক্ষায় অবৈধ ভাবে কমিউনিকেশন ডিভাইস সম্বলিত ক্যালকুলেটর ব্যবহার সংক্রান্তে অপরাধে ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তর পৃথক পৃথক ভাবে ৩টি মামলা দায়ের করে। বিশেষ অভিযান চালিয়ে তিন মামলায় ১৮ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনার বর্ননা দিয়ে এই প্রতিনিধি ভারপ্রাপ্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম এর নিকট জানতে চান- আটককৃত আসামীদের সাথে প্রশ্ন ফাঁসে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন- “অপরাধী যেই হোক তাদের ছাড় দেয়া হবেনা। বিশেষ করে- নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী - জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে”। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন- “এ ঘটনায় মন্ত্রনালয় থেকেও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে”।
অনুসন্ধানে জানা যায়- গত ৯ আগষ্ট নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে সমন্বিত নাবিক রেটিং ভর্তি পরীক্ষায়- পরীক্ষার্থীর রুপ ধারন করে বহিরাগতদের পরীক্ষায় অংশগ্রহন এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থী কর্তৃক অবৈধ ভাবে কমিউনিকেশন ডিভাইস সম্বলিত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। শেরে বাংলা নগর থানার মামলা নং- ১১,১২, ও ১৩ তারিখ ১০ আগষ্ট ২০২৫ ইং। ধারা ৪২০, ৪০৬, ১৮৮,১০৯ দন্ডবিধি। মামলার বাদী-নৌ অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ও পরীক্ষক কাজী মুহাম্মদ আহসান, নটিক্যাল সার্ভেয়ার ও পরীক্ষক মোঃ আবুল বাশার এবং ইঞ্জিনিয়ার ও শিব সার্ভেয়ার মোঃ আরাফাত হোসেন। বাদীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক কমডোর মোঃ শফিউল বারী- তার দপ্তরের স্মারক নং- ১৮.১৭.০০০০.০০১.৯৯.০০৩.১০১১.১০০২ তাং ১০/০৮/২০২৫ খ্রীঃ এক অফিস আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের - ঘটনায় মামলা দায়ের ক্ষমতা অর্পন করেন। এ ঘটনায় ৩ টি মামলায় ১৮ জন আসামীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। আটক কৃতরা হলেন- মো. হাবিবুর রহমান, মোঃ সুজন আলী, মোঃ শাহজাহান সরদার, মোঃ সেলিম মিয়া, মোঃ রনি, মোঃ মহিউদ্দিন, মোঃ নাহিদুল ইসলাম, মোঃ আক্রারুজ্জামান রাসেল, আলাউদ্দিন, শাকিব হাসান সরকার, মোঃ ইব্রাহিম মোল্লা, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, মোঃ হৃদয় হোসেন ও শিব্বির আহমেদ। এ ঘটনায় আরো ৪০/৪৫ জড়িত আছে। যাদের তাৎক্ষনিক গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গত ৩১ শে আগষ্ট রাত ৮ টার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বাড্ডা থানাধীন আফতাব নগরের নন-কাবাব রেস্টুরেন্ট এর সামনে থেকে মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে মুন কামাল ওরফে এক্সিমিনার জাহিদ নামে একজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনার এক নিবিড় অনুসন্ধানে জানা যায়- “নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত সি ডি সি সনদ, মাস্টার ড্রাইভার সনদ পরীক্ষা, পশুর নদী জ্ঞান পরীক্ষা, মেরিন একাডেমী সমূহে ভর্তি জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার কার্যক্রমের সাথে আটককৃত মোঃ মিজানুর রহমান জড়িত। অনুসন্ধানে- আরো জানা যায়- মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে মুন কামাল- সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার নিকট স্বীকার করেন। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে নগদ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়- নৌ পরিবহন অধিদপ্তর- নটিক্যাল সার্ভেয়ার বিভাগের একজন উধ্বতন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন যাবৎ এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। বিগত স্বৈরশাসন আমলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে একজন সচিবের ছত্রছায়ায় তিনি এ ধারনের অপরাধ করে আসছিল। বৈদেশিক জাহাজে তার চাকুরি কালীন আয়ের অর্থ বাংলাদেশে কিভাবে এসেছে- তার অর্জিত সম্পদের আয়ের উৎস সর্ম্পকে নতুন করে অনুসন্ধানের দাবী- এখন গনদাবীতে রুপ নিয়েছে।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক কমোডর মো. শফিউল বারী এনডি এন ডি সি, পি এস সি- এই প্রতিনিধিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন- “নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর এর সকল কার্যক্রমকে সর্ম্পূন দূর্নীতিমুক্ত করতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ব। এই দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েই তিনি কাজ করছেন। এ কাজে তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সর্বাত্বক অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করছেন”।
তদন্তে অনিয়ম প্রমানিত হলে- নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের বিগত ১ বছরের পরীক্ষা কার্যক্রমে যারা পাশ করেছে- তাদের সনদ বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা গ্রহনে দাবী জানিয়েছে ভূক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা। তাদের এ সনদ বাতিল হলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ঘুষ কেলেঙ্কারীর সাথে যুক্ত অপরাধীদের চেহারা চিনতে আরো সহজ হবে” এমন দাবী দেশের সচেতন মঙ্গলের।
উল্লেখ্য যে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোঃ শফিউল বারী- নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে যোগদান করে- এ দপ্তরের বিরাজমান অনিয়ম দূর করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছেন। তার এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ইতিাবাচক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আমার বার্তা/এমই