দূর আমেরিকার আলোঝলমলে শহর নিউইয়র্ক। এ শহর শুধু উঁচু দালান আর ব্যস্ত রাস্তায় ঠাসা নয়, এখানে স্বপ্ন বুনে বেঁচে থাকে লাখো মানুষ। সেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে, বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পুলিশ বাহিনী নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)-এ এখন দায়িত্ব পালন করছেন একজন বাংলাদেশি তরুণ। নাম তার আবু ইউসুফ রানা।
বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তিনগর গ্রামে রানা’র জন্ম। পরে পরিবার নিয়ে ঢাকার মধ্য বাড্ডায় চলে আসেন এবং সেখানেই বড় হন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে রানা শৈশব থেকেই ছিলেন স্বপ্নবাজ। তার বড় ভাই জুয়েল রানা ইতোমধ্যেই নিউইয়র্ক পুলিশে চাকরি করতেন, তাই হয়তো ছোট ভাই রানার মনেও সেই স্বপ্ন জন্ম নেয়। কিন্তু স্বপ্ন দেখা আর তা পূরণ করা, দুটি ভিন্ন জিনিস।রানা সেটা বুঝতেন। তাই থেমে থাকেননি।
২০১৩ সালে বাংলাদেশে এইচএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তখন তার হাতে ছিল তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন। ভর্তি হন নিউ ইয়র্ক সিটির ‘ সিটি টেক’ কলেজে। কিন্তু শুধু পড়াশোনাতেই নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। আমেরিকার মতো প্রতিযোগিতামূলক দেশে নিজের জায়গা তৈরি করতে শুরু করেন পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের দীর্ঘ যাত্রা।
২০১৭ সালে রানা যুক্ত হন এনওয়াইপিডি-এর ক্যাডেট প্রোগ্রাম-এ। এই প্রোগ্রামে কাজ করার মানে শুধু একটা চাকরি নয়, এটা ছিল একটি বড় দায়িত্ব ও আস্থা অর্জনের পরীক্ষা। টানা সাত বছর ধরে তিনি এই প্রোগ্রামে কাজ করে আইন প্রয়োগ, জরুরি সেবা, সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং একজন আদর্শ অফিসার হিসেবে গড়ে ওঠার সব ধাপ অতিক্রম করেন।
২০২০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এটি তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর পরও তিনি অপেক্ষায় ছিলেন এনওয়াইপিডি-তে অফিসিয়াল নিয়োগ পাওয়ার জন্য। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে ২০২৪ সালের অক্টোবরে, যখন তিনি অফিসিয়ালি এনওয়াইপিডি-এর একজন সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। এখন তিনি ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন, যা শেষ হবে ২০২৫ সালের মে মাসে। এরপর তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার হিসেবে নিউইয়র্ক শহরে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।
রানা শুধু নিজের স্বপ্নপূরণ করেননি, তার এই পথচলা হয়েছে হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশির অনুপ্রেরণা। প্রবাসে থেকেও দেশের নাম যেভাবে তিনি উজ্জ্বল করছেন, তা নিঃসন্দেহে এক গর্বের বিষয়। আবু ই্উসুফ রানা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি পরিচয়ে গর্ব করি। প্রবাসে থেকেও দেশকে ভুলিনি। এই যাত্রা আমি তাদের জন্য উৎসর্গ করছি, যারা স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে চাই।’
আবু ই্উসুফ রানা আরও বলেন, ‘আমি চাই, এই কমিউনিটির সঙ্গে মিশে থাকতে, পাশে দাঁড়াতে। এনওয়াইপিডি-এর একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সততা, পরিশ্রম আর ধৈর্য থাকলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই নিজেকে প্রমাণ করা যায়।’
তার এই সাফল্য শুধু একটি পরিবারের নয়, এটি গোটা প্রবাসী কমিউনিটির গর্ব। দুই ভাই—দুজনই নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত, এটা নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। এ যেন নতুন প্রজন্মের জন্য এক বাস্তব উদাহরণ—স্বপ্ন দেখো, চেষ্টা করো, এবং কখনও হাল ছেড়ো না।
আবু ই্উসুফ রানা’র এই যাত্রা প্রমাণ করে, সীমান্ত মানুষকে থামাতে পারে না। মন যদি বড় হয়, লক্ষ্য যদি পরিষ্কার হয়, তবে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে সফল হওয়া সম্ভব। তিনি দেখিয়েছেন, বাংলাদেশি পরিচয়ে, প্রবাসের মাটিতেও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়।
আমার বার্তা/এমই