
গণভোট ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মতভেদ নিয়ে সংঘাতের শঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হবে। যারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে, তাদের বলব জাতীয় নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়লেই তা অংশগ্রহণমূলক হবে।
শনিবার (১ নভেম্বর) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি কাঠামো অপেক্ষা রাজনৈতিক সদিচ্ছা বেশি জরুরি’ শীর্ষক ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, দলগুলোর প্রতি আহ্বান– আগামীতে কোনো মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্য করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও গণতন্ত্রায়ণ জরুরি। মেধাবীদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর সংসদ হওয়া উচিত। জুলাই যোদ্ধাদের জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা তাদের দ্বিচারিতা। এনসিপির উচিত দর কষাকষি না করে জুলাই সনদে সই করা।
অন্তর্বর্তী সরকার কিছু তরুণকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিপথগামী করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিসি ও ইউএনও অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা খবরদারি করছে। সরকারের ভেতরে সরকার তৈরি হয়েছে। যার ফলে সংস্কার ও আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গণফোরামের শীর্ষ এ নেতা বলেন, শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অব্যাহতভাবে চলবে। সে জুলাই অভ্যুত্থানকে সহিংস আন্দোলন বলে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছে তা হাস্যকর ও ছেলেমানুষি। সে যে গণহত্যা করে পালিয়েছে, ভারতকে বলব– তাকে আশ্রয় দিয়ে এসব উসকানিমূলক কথা বলার সুযোগ দেবেন না, তাকে থামান। আমাদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবেন না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, পঙ্গু হয়ে, অন্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছে। জুলাই শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান বাংলাদেশ। যে ঐক্যের মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে সেই ঐক্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। জুলাই সনদ জাতির এক ঐতিহাসিক দলিল ও একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এই সনদ বাস্তবায়নের ওপর আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। জুলাইয়ের চেতনা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হবে। এই ব্যর্থতার দায়ভার বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ কেউই এড়াতে পারবে না। জুলাই সনদের মাধ্যমে দেশের মানুষ চেয়েছিল ঐক্যের বাংলাদেশ। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতপার্থক্যের কারণে তৈরি হচ্ছে অনৈক্যের বাংলাদেশ। এজন্য যদি ফ্যাসিবাদী অপশক্তি আবার ফিরে আসে, তাহলে কোনো দলই তাদের প্রতিশোধের আগুন থেকে রেহাই পাবে না। তাই এই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অপরিহার্য।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অপশক্তি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভন্ডুলের অপচেষ্টা করছে। বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছে। ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। দেশে এখন ত্রিমুখী রাজনৈতিক লড়াই চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করে জাতিকে স্বস্তি দিতে হবে। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেও কাজ করবে।
ছায়া সংসদে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক আসিফ সুমিত ও সাংবাদিক লামিয়া তিথি।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
আমার বার্তা/এমই

