ই-পেপার শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হত্যা ও আন্তর্জাতিক আইন

সাদিয়া সুলতানা রিমি
১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:২৭

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হওয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। অনেক প্রতিবেদন ও গবেষণায় অভিযোগ উঠেছে যে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ও নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের অবস্থা একাধিক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে জটিল। ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের পর উভয় পক্ষেই বেশ কিছু সীমান্ত সমস্যা ও বিতর্ক নিয়ে কাজ শুরু করে, যার ফলস্বরূপ কিছু অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু পাচার এবং চোরাচালানের ঘটনা ঘনঘন ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর শ্যূট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতির ব্যবহার এবং নির্দোষ নাগরিকদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, গত কয়েক দশকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বারংবার ঘটেছে। উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে উল্লেখ আছে যে, ১৯৯৬ থেকে ২০২০ এর মধ্যে হাজার হাজার বাংলাদেশী নাগরিক নিরীহ অবস্থায় সীমান্ত পারাপারের সময় হত্যা বা গুরুতর নির্যাতনের শিকার হন।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ঘটনায় যেমন কিশোরী ফেলানির নির্মম হত্যা (কুড়িগ্রাম) ও স্বর্ণা দাস হত্যার মতো ঘটনা আন্তর্জাতিক নজরে এসেছে। এই ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে—নিরস্ত্র ও অসহায় নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুলি চালানো হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন-বিধানের পরিপন্থী।

এছাড়া, প্রতিবেশী উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকা সত্ত্বেও এইসব হত্যাকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার নীতিমালার আওতায়, কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরীহ নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুর বা অযৌক্তিক বল প্রয়োগ করা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘের মৌলিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে এবং শেষ উপায় হিসেবে বল প্রয়োগ করা উচিত। এসব হত্যাকাণ্ডকে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।আন্তর্জাতিক আইনের আওতায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতিমালা ও জেনেভা কনভেনশন, নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ গুলি চালানো বা নিষ্ঠুর নির্যাতনের অনুমতি দেয় না।জেনেভা কনভেনশন ও অতিরিক্ত প্রোটোকল অনুযায়ী, যুদ্ধ বা সংঘর্ষের সময়ও নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর প্রতি সহিংসতা নিষিদ্ধ।জাতিসংঘের আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা স্পষ্টভাবে বলেছে যে, আইন প্রয়োগকারী বাহিনী শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য সীমিত ও প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করতে পারে, অতিরিক্ত ও নির্বিচারে গুলি চালানো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নিয়মিতভাবে সীমান্তে থাকা নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এইসব

হত্যাকাণ্ডের ফলে:

অসংখ্য পরিবার শোকান্ত হয়েছে।স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সাম্প্রতিক সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক দলের নেতৃবৃন্দ ভারতের এই নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের দাবী জানাচ্ছেন। বিশেষ করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ও অন্যান্য বিশ্লেষকরা দাবি করছেন—ভারত সীমান্তে চলমান সিরিয়াল হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করা উচিত।

দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও বাস্তবায়নের ঘাটতি:

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক প্রটোকল স্বাক্ষরিত থাকলেও, এসব চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ও একতরফা ব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠে এসেছে। অনেক সময় এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আত্মরক্ষার দাবি হিসেবে নিরীহ নাগরিকদের প্রতি অত্যধিক বল প্রয়োগ করা হচ্ছে।বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষার কড়া নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠন এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।ভারতীয় পক্ষ কর্তৃক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, মাঠের বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন।

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরীহ নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখার দাবি উঠেছে। উক্ত ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে—সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবহৃত বলের মাত্রা কি আইনসম্মত? ও কি এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক তদন্ত ও হস্তক্ষেপের আহ্বান করা হচ্ছে।

এই বিষয়টি একটি জটিল দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা, যেখানে রাজনৈতিক, আইনী ও মানবিক দিকগুলো একসাথে বিবেচনার দাবি রাখে

লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/জেএইচ

শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য: ১-১২তম ব্যাচের নিবন্ধিতদের ন্যায়বিচার দাবি

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন এক অন্ধকার গহ্বরে নিমজ্জিত। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)

শিক্ষা-শিল্প ফাঁক কমাতে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গত এক দশকে বিস্তারের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা

হাদির ওপর হামলা, শান্তির পথে কাঁটা ছড়াচ্ছে কারা?

বহু প্রতীক্ষা ছিল। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছিল দেশ। নির্বাচন কমিশন ‘তফসিল’ ঘোষণা করল। নির্বাচনের ট্রেন

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। তবে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক করলো মাউশি

ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে অন্তত তিনজন নিহত

চীনা যুদ্ধবিমানের বড় ক্রেতা পাকিস্তান

মানিকগঞ্জে পেঁয়াজের চারা রোপণ শুরু

বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

জেলা প্রশাসক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে কারাগারে ২ জন

বুড়িগঙ্গায় যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেডের দুই শ্রমিক নিখোঁজ

ঘন কুয়াশায় মেঘনায় যাত্রীবাহী আরও দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, আহত ১২

আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ রিমুভ, কারণ জানালেন নিজেই

আজ বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা যা থাকছে

সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ১০০৭ কোটি টাকা

পোস্টাল ভোট: মালয়েশিয়া প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল ৪১ হাজার

জামায়াতে আগ্রহীদের প্রতি যে বার্তা দিলেন শফিকুর রহমান

এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ দেবে এসিআই মটরস

আজ মসজিদে হারাম ও নববিতে আজ জুমার নামাজ পড়াবেন যারা

খুলনায় মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে গ্রেপ্তার

ইংল্যান্ডকে ১১০ রানে গুটিয়ে ৪২ রানে লিড পেল অস্ট্রেলিয়া

পুরো বিশ্বে বিপিএলের জমজমাট লড়াই দেখা যাবে যেভাবে

খুলনা নদীবন্দরে অর্ধেকে নেমেছে পণ্য খালাস

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: ২৭ ডিসেম্বর থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড