ই-পেপার শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হামাসকে নির্মূলের ইসরায়েলের ভ্রান্ত পরিকল্পনা

মো. জিল্লুর রহমান:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪৮

হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব কিনা, সে সম্পর্কে গত ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। উক্ত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের বক্তব্য হচ্ছে, রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র রাস্তা। কিন্তু ইসরায়েলের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, তবে তারা হামাসকে নির্মূল করার ভ্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে গাজা যুদ্ধ প্রলম্বিত করছে। ইহুদিবাদী যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু থেকে শুরু করে তার সরকারের প্রায় সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন, তাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য হামাস নেতাদের নির্মূল করা। সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস নেতারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাদের প্রাণভিক্ষা দেয়া হবে। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতেও বার বার একটি স্লোগান দেখাচ্ছে-- 'টুগেদার উই উইন' অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে লড়ে জিতব। কিন্তু সত্যিই কি এই বিজয় সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করছেন -স্পষ্টতই না। বরং তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ইসরায়েল অভিযান চালিয়ে হামাস নেতাদের মারতে পারবে কিন্তু তাদের মতাদর্শ ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

হামাসের গত ৭ অক্টোবরের আকস্মিক হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমাবর্ষণ ও হত্যাযঞ্জ চালিয়ে যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক চাপ উপেক্ষা করে দক্ষিণের রাফা সীমান্তে এ আগ্রাসন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালাচ্ছে এবং তাদের আগ্রাসী হামলায় ইতোমধ্যে প্রায় ২৯ হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আহত কিংবা চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছে। বহু হামাস যোদ্ধারও মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এইভাবে হামাসকে খতম করা সম্ভব নয়। কারণ, হামাস কেবলমাত্র একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন নয়। একজন জার্মান বিশেষজ্ঞের মতে, গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার হামাস যোদ্ধা আছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, গাজা উপত্যকার মানুষ হামাসকে ভালবাসে এবং প্রবল সমর্থন করে। তাদের কাছে হামাস একটি জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন, যারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।

ইসরায়েলের সেনা দাবি করেছে, উত্তর গাজা থেকে অন্তত ৫০ হাজার বেসামরিক মানুষ দক্ষিণ গাজার দিকে পালিয়েছে এবং তারা তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। ফোন করে, লিফলেট দিয়ে তাদের শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েলের সেনারা উত্তর গাজায় শহরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। তারা হামাসের সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করে আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, হামাস যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রকেট প্রস্তুতকারক ব্যক্তি ইসরায়েলের সেনার হাতে নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজায় হামাস তার ক্ষমতা হারিয়েছে। এখনো দক্ষিণ গাজায় তারা লড়াই চালাচ্ছে এবং সে কারণেই হাজার হাজার মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছে। উত্তরের দখল কার্যত এখন ইসরায়েলের সেনার হাতে এবং তাদের দাবি, তারা উত্তর গাজায় হামাসের ১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। সুড়ঙ্গ হচ্ছে মাটির নিচের সুরক্ষিত বাংকার। ইসরায়েলের দাবি, বেসামরিক বাড়ি, হাসপাতালের নিচে বাংকার বানিয়ে হামাস নিজেদের 'সন্ত্রাসী' কাজকর্ম চালাতো। সে কারণেই হামাসকে আক্রমণের সময় বহু বেসামরিক ভবনে আক্রমণ চালাতে হচ্ছে।

কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে কি আসলেই সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব? অবশ্য হামাসকে ইসরায়েল নির্মূল করতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছে। গত ডিসেম্বরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই মাস ধরে হামলা চালানোর পরও হামাসকে নির্মূলের ধারে কাছেও নেই ইসরায়েল। গত ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা ৬৬ দিন যুদ্ধের পরও হামাসকে নির্মূলের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডসের ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত যুদ্ধে মাত্র ৫ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

হামাসের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী ইরানও একই কথা গত ডিসেম্বরে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ইহুদীবাদী ইসরায়েল ও তার ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে কখনোই নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হবে না এবং ইসরায়েল কেবলমাত্র সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘে দেওয়া এক বক্তৃতায় হামাসকে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, "ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র কখনোই হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই হামাসের হাতে আটক বন্দিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব"। এছাড়া হামাসকে ইসরায়েল কিভাবে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে তা নিয়ে জর্ডানও ইতোমধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, হামাসকে ইসরায়েল কিভাবে নিশ্চিহ্ন করবে; সেটি তারা বুঝতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল বলছে তারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে যায়। এখানে অনেক সামরিক ব্যক্তিবর্গ আছেন। আমি বুঝতে পারি না এ লক্ষ্য কিভাবে অর্জিত হবে।’

হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা পরিচালনা ও শাসন করছে। তাদের একটি সামাজিক কর্মসূচী আছে যার নাম দাওয়াহ। এই দাওয়াহ-তেই কাজ করে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ। তারা যোদ্ধা নন, বরং সেচ্ছাসেবী। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব স্টাডিসের একজন অধ্যাপক বলেছেন, ''ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে, এর ফলে সেখানে হামাস নেতাদের মারা সম্ভব কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শকে ধ্বংস করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়।'' তিনি আরও বলেন, অভিযান চালিয়ে হামাসের নেতাদের ইসরায়েল খতম করতে পারবে কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানকে ধ্বংস করতে পারবে না। ফলে রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র রাস্তা।

হামাসের আরেকটি সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হচ্ছে ইসরায়েলী আগ্রাসনে যারা মৃত্যু বরণ করে তাদেরকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে এবং শহীদ হওয়া ফিলিস্তিনীদের পরিবারের যাবতীয় ভরণ পোষণের জন্য এককালীন ও নিয়মিত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে হামাস, যার পরিমান ৫০০ থেকে ৫০০০ ডলার হয়ে থাকে। এছাড়া হামাস ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, স্কুল বা মসজিদ পুনঃনির্মাণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দিয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সেবায় হামাস নিজেকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বা দাতা দেশ থেকে আসা সাহায্য ও আর্থিক অনুদান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে হামাস; অপরপক্ষে ফাতাহ গোষ্ঠী এই দিকে আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জ। হামাসের এই সামাজিক কার্যক্রমের জনপ্রিয়তা শুধু গাজা ভূখণ্ডেই নয়, বরং ফাতাহ শাসিত পশ্চিম তীর এমনকি আশেপাশের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং তাদের সুখ্যাতি আছে।

যদিও ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে একটি সন্ত্রাসী ও ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে কিন্তু এটি গাজা উপত্যকায় এমন একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন যেটি ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা শাসন করছে। এটি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকার করে না এবং ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। হামাস ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের উপর একটি দখলদার অবৈধ শক্তি হিসাবে বিবেচনা করে। হামাস গাজা উপত্যকায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইরান এবং কাতারের মতো দেশের আর্থিক সহায়তার এর সক্ষমতা, অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমেরিকার একজন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, "হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। হামাস একগুচ্ছ ব্যক্তি বা সরঞ্জাম এবং পরিকাঠামোর একটি সেট নয়, বরং এটি একটি ব্র্যান্ড, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত ফিলিস্তিনিদের একটি দল আছে যারা নিজেদের হামাস বলতে চায়, হামাস এখনও সর্বত্র বিদ্যমান। এমন একটি যুদ্ধ ঘোষণা করা অত্যন্ত বোকামি যা লক্ষ্য করা যায় না। তবুও ইসরাইল এটাই করেছে এবং যতক্ষণ না ইসরায়েলি নেতৃত্ব যুদ্ধের লক্ষ্য সম্পর্কে তাদের বাগাড়ম্বর কমাতে শুরু করে, ইসরায়েলের কার্যক্ষমতা ততই ব্যর্থ হবে কারণ তারা নিজেরাই অপ্রাপ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং তারা তাদের নিজস্ব ঘোষণা দিয়ে হামাসের বিজয় ভাষণ লিখছে।"

মূলত ১৯৯০-এর দশক থেকেই ইসরায়েলি স্টার্টআপ জগৎ জমজমাট হতে শুরু করে। এরপর দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের পরই আছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি। সব মিলিয়ে ৫০০–এর বেশি বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলে ব্যবসা পরিচালনা করে, যাদের মধ্যে রয়েছে গুগল, অ্যাপল, আইবিএম, মেটা, মাইক্রোসফট ও ইনটেল করপোরেশন। যে শিল্পটি একনাগাড়ে ভালো করছে, সেটি হলো উচ্চ প্রযুক্তি খাত। অনেক বছর ধরেই এ খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ইসরায়েলের দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশ আসে এ খাতে থেকে, আর নিশ্চিত করে মোট কর্মসংস্থানের ১৪ শতাংশ। গাজা যুদ্ধের কারণে অনেক কারখানার উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং নতুন বিনিয়োগ পাওয়া যাচ্ছে না।

ইসরায়েলি অর্থনীতির যে খাতটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি হলো পর্যটন। কোভিডের আগে দেশটির জিডিপির ২.৬ শতাংশ আসত এই খাত থেকে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা ভ্রমণ করা কমিয়ে দিয়েছেন। পুরো ইসরায়েল জুড়ে দেখা গেছে রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট খালি। দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও গাজায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর তেল আবিবে ফ্লাইট বাতিল করে অনেক উড়োজাহাজ কোম্পানি। একই সময় প্রচুর পর্যটক ইসরায়েলে তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনাও বাতিল করেন। পরে অবশ্য লুফথানসার মতো কিছু বড় এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট আবার চালু করে। হামাসের ‘অপারেশন আল–আকসা ফ্লাড’ অভিযানের আগে প্রতি মাসে তিন লাখের বেশি পর্যটক ইসরায়েল ভ্রমণ করতেন। নভেম্বরে এই সংখ্যা ৩৯ হাজারে নেমে আসে বলে খবরে বলা হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধ কেবল বিষাদময়ই নয়, এটা একই সঙ্গে ব্যয়বহুলও বটে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পর্যটনের ওপর এর প্রভাব একবারে জলজ্যান্ত সত্যি ব্যাপার এবং এটা অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই। অন্যদিকে, ইসরায়েলি জিডিপির ১৪ শতাংশ আসে নির্মাণ খাত থেকে। যুদ্ধ শুরুর পর এ খাতও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলজুড়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। দেশটির নির্মাণ খাতের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ শ্রমিকই ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল তাঁদের কাজের অনুমতি দেওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। ফলে ইসরায়েলের শিল্প ও পশ্চিম তীরের অর্থনীতি উভয়েই ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

গত নভেম্বরে ব্যাংক অব ইসরায়েল দেশটির অর্থনীতির ওপর যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে একটি মোটাদাগের হিসাব দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির ওপর প্রভাবের আর্থিক মূল্য হবে ৫,৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ১৯,৮০০ কোটি শেকেল। ২০২৩–২৪ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা আগে হিসাব করা হয়েছিল, যথাক্রমে ২.৩ শতাংশ ও ২.৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুদ্ধের সবচেয়ে তীব্র পর্যায় শেষ হলে চলতি বছরে ইসরায়েলের ব্যয় দাঁড়াতে পারে ১,৩৮০ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয় এমন একটি হিসাব দিয়েছিল। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বিশেষজ্ঞরা নজর রাখছেন মাঠপর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের হালহকিকত কেমন দাঁড়াচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েল যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, এখন তার পঞ্চম মাস চলছে। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের নিজের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। সংবাদ মাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সরকার প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার সংরক্ষিত সৈন্যকে বেতন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের গাজায় মোতায়েন করা হয়েছে, এদের অনেকে নিহত কিংবা চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছে। এসব সেনাদের অনেকেই উচ্চ প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন, যাঁরা আর্থিক খাত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ওষুধ শিল্প ও কৃষির মতো অর্থনীতির বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। গাজা যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং প্রলম্বিত যুদ্ধ ব্যয়ের কারণে স্বাভাবিকভাবেই হামাসকে নির্মূল করা ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয় এবং এটা ইসরায়েলের একটি ভ্রান্ত পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচিত।

সাম্প্রতিককালে ইসরায়েলের সাথে বৈরি সম্পর্ক ছিলো এমন অনেক মুসলিম দেশ যখন ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করছিল, তখনই তারা ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা করে। হামাস বলছে এ ধরনের সম্পর্ক স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায় এবং তাদের মূল দাবী ১৯৬৭ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের অবৈধ দখলকৃত জায়গা ইসরায়েলকে ছেড়ে দিতে হবে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন মূলত পরাশক্তি দেশগুলোর একছত্র ইসরায়েল সমর্থন অনেকাংশেই এই সংকটকে টিকিয়ে রেখেছে এবং পরাশক্তিগুলোর বিরোধিতার কারণেই আজও স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি, তাদের কাছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র অনেকটা পুতুল নিয়ে খেলা করার মতো। এক্ষেত্রে হামাস মূলত ইসরায়েলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একটি কার্যকর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইছে এবং হামাসকে কোনক্রমেই নির্মূল করা সম্ভব নয়। হামাস মধ্যপ্রাচ্য কোন ভুঁইফোড় সংগঠন নয়, বরং ৭ অক্টোবরের হামলার পর এটি সারাবিশ্বে বেশ আলোচিত ও গাজায় বেশ জনপ্রিয় স্বাধীনতাকামী সংগঠন। ইসরায়েল মূলত তাদের রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা ঢাকা আর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই হামাসকে নির্মূল করার ভ্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে বাগাড়ম্বর করছে।

লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট।

আমার বার্তা/মো. জিল্লুর রহমান/এমই

ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়

ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রলাভের অধিকার প্রত্যাখ্যান করে  ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোটের

নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বনাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে অধিকার

যুদ্ধ আক্রান্ত বৈশ্বিক সংকট ও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো সম্প্রতি ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিক
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার রাশিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী

নতুন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি ড. ইউনূসের

এক দফা দাবিতে ‘জাতীয় ঐক্যে’র ডাক বিএনপির

আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল সাগরের, ফিরলেন লাশ হয়ে

দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে

সাংবাদিক সাঈদ খানকে গ্রেপ্তারে বিএফইউজে ও ডিইউজের নিন্দা

ঢাকাসহ চার জেলায় আজ ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন আজ

নদীর বুকে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন

পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে

২৭ জুলাই ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

এক দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিল বিএনপি

গণ-আন্দোলন দমাতে কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চাইছে

সহিংসতায় ঢাকায় ২০৯ মামলা, গ্রেপ্তার ২৩৫৭

নাহিদ-আসিফসহ তিন সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি

দুই সমন্বয়ককে নিয়ে সরকার পতনের আলোচনা করেন নুর

বিক্ষোভকারী প্রবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে মালদ্বীপ

প্রতিটি হামলার বিচার হবে, শিক্ষার্থীদের হয়রানি নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী