পৃথিবী যে ভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, গত সোয়া এক লাখ বছরেও তা দেখা যায়নি। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো এবং গাছপালা কেটে ফেলা, যত্রতত্র ময়লা ফেলা এবং প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে প্রতিনয়ত পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের অদূরদর্শী ব্যবহার ভিতরে ভিতরে পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে ক্যানসারের মতো।
৫ জুন সারাবিশ্বে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকবে এর মধ্য দিয়েই কাজ করতে হবে। হতাশ হলে চলবে না। পরিবেশ দূষণ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্ত করা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে সবুজ বাংলাদেশ দিতে হবে।
পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। পরিবেশ দূষণের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির সূচকের মধ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি ছিলো ১০/১০, ভূমিকম্প ৯.২/১০ সুনামি ৮.২/১০, মহামারী ৭.২/১০, সাইক্লোন ৬.৯/১০ খরা ৩.৯/১০। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় হুমকি। তার বাস্তব প্রমাণ কিছুদিন আগে আশঙ্কা করা হচ্ছিল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ফলে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের তলিয়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তচ্যুত বাংলাদেশির সংখ্যা হবে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও, প্রতিনিয়ত উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন এবং লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চুক্তি হয়েছিল। সেখানে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চেষ্টার কথা বলা হয়েছিল।
''এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নামিয়ে আনতে হলে কপ-২৬ হচ্ছে শেষ সুযোগ'' তখন এমনটিই বলেছিলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ সম্মেলনে অংশ নিয়ে উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস সম্মেলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, কার্বন-নির্গমন কমিয়ে আনার জাতীয় মাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলির প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।
পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার ও বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করছেন বিভিন্ন মানুষ। এমনই দু’জন মানুষ মাছুম একরাম জোয়াদ্দার ও মো. ইফাজ উদ্দন বিশ্বাস।
বিশ্বের ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় একমত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে। পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণের কারণে বাড়ছে মানুষের ফুসফুসের ক্যান্সার, এ্যাজমা, মানসিক সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রজনিত রোগ।
পরিবেশবাদি সংগঠন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ ঝুঁকিগত ২৫ শতাংশ রোগের জন্য দায়ী জলবায়ু, দুষণমুক্ত রাখতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রশাসনকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।
এবি/টিএ