আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা আয় কর দিতে হবে। বাজেট ঘোষণার পরে সারাদেশ জুড়ে এটি বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সবার মনে একটাই প্রশ্ন আয় না থাকলেও কেন কর দিব। স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে দিনমজুর সবার এখন একটাই জিজ্ঞাসা ইনকাম না থাকলে কিভাবে কর দিবো। তাদের সোজাসাপটা কথা, কেন কর দিতে হবে, কর তো দিবে ধনীরা। যারা কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের আরও জিজ্ঞাসা এক দিকে বলছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করলে আয় কর দিতে হবে না । আবার বলছে আয় না থাকলেও দিতে হবে ২ হাজার টাকা।
সাধারণের এই প্রশ্নসহ আরো নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে শুক্রবার ৬ জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সেখানে ২ হাজার টাকা আয় করের ব্যাখ্যা দিতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে উত্তর দিতে বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে টিআইএনের বিপরীতে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর আদায়ের প্রস্তাবকে অনেকে ‘বৈষম্যমূলক’ বললেও এ নিয়মে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছি। যাদের ক্ষেত্রে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক, সেই শ্রেণির মানুষদের জন্য এই ন্যূনতম কর বোঝা হওয়ার কথা নয়।
এনবিআর চেয়ারম্যানের এই কথা থেকে বোঝা গেলো সবাই কে নয় শুধু মাত্র যাদের টিআইএন আছে তাদেরকেই দিতে হবে ২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ অন্যায়। কারণ দেশে ইতোমধ্যে ন্যূনতম করের একটি বিধান রয়েছে। সেটি ৩ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই কর দিতে হয়। এছাড়া সবাই কর দেয় না, এটিও মনে করার কারণ নেই। কারণ নিম্ন আয়ের মানুষও ভ্যাট থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কর দিয়ে থাকে ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে সরকার ২ হাজার টাকা করের এই সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে। এর উত্তর খুব সুন্দর ভাবে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন এবং রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিক মন্দার ধাক্কা সামলাতে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে । 'আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর-জুলুম খাটবে না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।'
তিনি আরও বলেছিলেন, 'আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশ কারো ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, আত্মনির্ভরশীল হবে। আত্মমর্যাদাশীল হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের এটাই লক্ষ্য। 'আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা চমৎকার ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই কোভিড-১৯ এর অতিমারি, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। তার ধাক্কাটাও আমাদের ওপর এসে পড়েছে। এটা মোকবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেটা যেতে পারবো, আমরা যত বেশি কর আদায় করতে পারবো, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবো—তাহলেই এটা সম্ভব।'
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদিক বিবেচনায় গত ১লা জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
সেখানে প্রস্তাবিত ২ হাজার টাকা কর প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার এক বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘করমুক্ত আয় সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার বিষয়টি ভালো হলেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করারোপের প্রস্তাবটি বৈষম্যমূলক। কারো যদি আয় সাড়ে ৩ লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে ২ হাজার টাকা দিতে হবে।’
ফাহমিদা বলেন, ‘মানুষকে স্বস্তি দিতে এখানে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে, আবার যার করযোগ্য আয় নেই তার উপর ২ হাজার টাকার কর আরোপ করা এটা কীভাবে যুক্তিযুক্ত হয় তা আমরা খুঁজে পাই না।’
তখন এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আগে রিকোয়েস্ট করব আপনাদের, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সিই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। আপনি যেটা বললেন, সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে কিনা, সাধারণ গরিব মানুষেরতো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।’
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমি যে ক্যাটাগরিগুলো বললাম, আপনারা লিস্টে দেখবেন, এই ধরনের ক্যাটাগরিতে যে মানুষগুলো আছে, তাদের জন্য দুই হাজার টাকা বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে উন্নয়নের অংশীদার হওয়া, এটি একটি গর্বের বিষয় হওয়ার কথা। বোঝা মনে করার কথা নয়।’
এবি/টিএ