বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি কংগ্রেস। কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঢাকার রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে দু’দিনব্যাপী দেশি-বিদেশি শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন, অভিজ্ঞতা বিনিময়, লাইভ ওয়ার্কশপ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে প্রথম দিনের আয়োজনের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা।
এসময় ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা অংশগ্রহণকারীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় এটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
কংগ্রেসের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশি (ইভেলিনা চিলড্রেন হাসপাতাল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য)। শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন প্রধান অতিথি (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
এসময় অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশি তার কর্মজীবনের অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করেন, যা তরুণ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও রিসাস ইনস্টিটিউটের প্রধান কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. ফজিলাতুন্নেসা মালিক, অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার (প্রাক্তন সভাপতি বিপিএ ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিএনএফ) এবং অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সফিউদ্দিন (আহ্বায়ক-বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি ও ডিন-মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)।
বিশেষ অতিথিরা শিশুদের জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। বর্তমানে শুধু ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে এই বিশেষায়িত সুবিধা আছে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিশুদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কংগ্রেসে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি, প্রযুক্তি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়
আয়োজিত লাইভ ওয়ার্কশপে- দেশে প্রথমবারের মতো তিনজন রোগীর শরীরে ভেনাস পি-ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয় এবং দ্বিতীয়বারের মতো একজন রোগীর শরীরে মাই-ভাল প্রতিস্থাপন করা হয়। এসব প্রক্রিয়া সরাসরি ক্যাথ ল্যাব থেকে সম্প্রচারিত হয়, যা অংশগ্রহণকারীরা কনফারেন্স হলে বসে পর্যবেক্ষণ করেন।
ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন স্যার অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা এবং ডা. শিবাকুমার। একইসঙ্গে হাতে-কলমে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনটি বিশেষ প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালিত হয়। সেগুলো হলো- মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন, সেন্ট্রাল লাইন ইনসারশন, ইকোকার্ডিওগ্রাফি। এতে ১১০ জন প্রশিক্ষণার্থী অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে সরাসরি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে ক্যাথ ল্যাব থেকে জটিল শিশু হৃদরোগের লাইভকেস সম্প্রচার করে অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়, যা চিকিৎসকদের জন্য ছিল অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক।
কংগ্রেসের সমাপনী বক্তব্যে কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা অংশগ্রহণকারী, বক্তা ও সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার উন্নয়ন যাত্রায় এই কংগ্রেস একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমার বার্তা/এমই