কিছুদিন (৯ সেপ্টেম্বর) পর আইফোনের বার্ষিক উন্মোচন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে অ্যাপল। সেই অনুষ্ঠানে বহুল প্রতীক্ষিত আইফোন ১৭ সিরিজ উন্মোচন করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আইফোন ১৭ সিরিজের প্রি-অর্ডার শুরু হবে অনুষ্ঠান শেষের পর প্রথম শুক্রবার, অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে।
আইফোন ১৭ সিরিজে চারটি মডেল বাজারে আসছে আইফোন ১৭, আইফোন ১৭ এয়ার, আইফোন ১৭ প্রো এবং আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স। সেই সঙ্গে গুঞ্জন রয়েছে, আইফোন এয়ার নামে একটি পাতলা মডেলও বাজারে আসতে পারে। ইতিমধ্যে নতুন মডেলগুলোর সম্ভাব্য দামের বিষয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। ব্যবহারকারীরা নতুন আইফোনের দাম নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ, এ বছর শুল্কের কারণে কিছু কোম্পানিকে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে আইফোনের দাম বাড়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে অ্যাপল আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স মডেলের ১২৮ জিবি সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে, যার দাম ছিল ১ হাজার ৯৯ ডলার। এর পর থেকে এই মডেলের সবচেয়ে সস্তা সংস্করণ হলো ২৫৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের সংস্করণটি, যার দাম শুরু হয় ১ হাজার ১৯৯ ডলার থেকে।
চলতি বছরও অ্যাপল দাম বাড়াতে পারে বলে খবর রয়েছে। তবে অ্যাপল চায় না এই মূল্যবৃদ্ধিকে ট্রাম্প সরকারের শুল্কের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। যদিও ২০২৫ সালে অ্যাপলকে কিছু শুল্ক দিতে হয়েছে, তবে তা সরাসরি আইফোনের ওপর প্রভাব ফেলেনি।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অ্যাপল অন্তত কিছু আইফোন ১৭ মডেলে ৫০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়াতে পারে। সম্প্রতি অ্যাপল ‘আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোগ্রাম (এএমপি)’ নামে একটি উদ্যোগ ঘোষণা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা জানিয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে নতুন শুল্ক থেকে আইফোন ১৭ ছাড় পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবু মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব হবে না বলে অনেকের মত।
অ্যাপল যদি আইফোন ১৬ সিরিজের দামের কাঠামো বজায় রাখতে না পারে, তাহলে ৫০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে প্রো মডেলগুলোয় এই দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি নতুন আইফোন ১৭ এয়ার মডেলটির দামও পূর্বসূরি আইফোন ১৬ প্লাসের চেয়ে বেশি হতে পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য দাম হতে পারে—
১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭: ৭৯৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৭ হাজার ১৩৬ টাকা)
১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ এয়ার: ৯৪৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৮০ টাকা)
২৫৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ প্রো: ১ হাজার ৪৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৯০ টাকা)
২৫৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স: ১ হাজার ২৪৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৭ টাকা)
উল্লেখ্য, ২৫৬ জিবি স্টোরেজসহ আইফোন ১৭ প্রো-এর দাম ১ হাজার ৪৯ ডলার (প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৯০ টাকা) হলেও আগের ১৬ প্রো-এর ২৫৬ জিবি সংস্করণ ছিল ১ লাখ ৯৯ ডলার। অর্থাৎ ৫০ ডলার কমে বেশি স্টোরেজ পাওয়া যেতে পারে, যা একধরনের সুবিধা বলা যায়।
যদি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে দাম বাড়ায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে অনুরূপ মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে অ্যাপল অন্যান্য পণ্যের ওপর চাপানো শুল্কের খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।
দাম কি অপরিবর্তিত থাকবে
ভোক্তাদের জন্য ভালো খবর হতে পারে অ্যাপল যদি আগের বছরের আইফোন ১৬-এর দাম বহাল রাখে। সে ক্ষেত্রে চারটি মডেলের সম্ভাব্য দাম হতে পারে—
১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭: ৭৯৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৭ হাজার ১৩৬ টাকা)
১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ এয়ার: ৮৯৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৯৩ টাকা)
১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ প্রো: ৯৯৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ৯০৯ টাকা)
২৫৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স: ১ হাজার ১৯৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৮ টাকা)
এই দাম তখন সম্ভব, যদি অ্যাপল তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে পারে এবং কোনো শুল্কজনিত বাড়তি খরচ ক্রেতার ওপর না চাপায়। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে আমদানি শুল্ক কম বা নেই, সেখানে এই দামে ফোনগুলো পাওয়া যেতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, সবচেয়ে সাশ্রয়ী আইফোন হিসেবে আইফোন ১৭-এর ১২৮ জিবি মডেল থাকবে।
তবে সবকিছু এখনো অনুমানের পর্যায়ে রয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর অ্যাপল তাদের ইভেন্টে আইফোন ১৭ সিরিজ উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মডেলগুলোর দাম প্রকাশ করবে।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস ও ম্যাকরিউমার
আমার বার্তা/এল/এমই