সঞ্চয়পত্র কেনাবেচায় আলাদা বাজার তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। একইসঙ্গে বেসরকারি বন্ড কেনাবেচার জন্যও আলাদা বাজার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বন্ড ও সুকুক মার্কেটের সম্ভাবনা নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসই আয়োজিত সেমিনারে এ পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
গভর্নর বলেন, সঞ্চয়পত্র এখন বাজারের সঙ্গে আংশিক যুক্ত। কিন্তু এটিকে পুরোপুরি লেনদেনযোগ্য করতে হবে। এতে গ্রাহকরাও উপকৃত হবেন এবং সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হবে, বাড়বে তারল্য। সাধারণ মানুষ সরকারি বন্ড কিনতে পারছে, এই বিষয়টিও ইতিবাচক। এখন বেসরকারি বন্ডও লেনদেনযোগ্য করতে হবে ও সঠিক কাঠামোর আওতায় আনতে হবে। এতে রাতারাতি বন্ড মার্কেট দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং বাজার অনেক প্রাণবন্ত হবে।
তিনি বলেন, বন্ড কেনার ক্ষেত্রে সরকারের পেনশন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস হতে পারে। এছাড়া, কর্পোরেট পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড— এসবকেও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব। সরকার চাইলে এসব বিষয়ে খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। সেজন্য পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দরকার। সব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তহবিল গড়ে তুলছে, বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো বৈশ্বিক অর্থনীতির তুলনায় আলাদা। এক অর্থে এটি উল্টো। বাংলাদেশে আর্থিক কাঠামো ব্যাংক নির্ভর; কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা মূলত বন্ড নির্ভর। বৈশ্বিকভাবে প্রায় ১৩০ ট্রিলিয়ন বা ১৩০ লাখ কোটি ডলারের বন্ড ইস্যু করা হয়েছে; এটি বৈশ্বিক জিডিপির ১৩০ শতাংশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো স্টক মার্কেট; এই বাজারে বিনিয়োগ আছে প্রায় ৯০ ট্রিলিয়ন বা ৯০ লাখ কোটি ডলার। তৃতীয়ত, মানি মার্কেট (ব্যাংক ঋণসহ সবকিছু) মোট ৬০ ট্রিলিয়ন বা ৬০ লাখ কোটি ডলারের, অর্থাৎ এটি বন্ড বাজারের অর্ধেকেরও কম। ফলে আমাদের কাঠামোটি একেবারেই উল্টো। পেনশন বা বিমা খাতের কথা বলছিই না, সেগুলো এতই ছোট যে বাংলাদেশে জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ। অর্থাৎ গণনায় ধরার মতোও নয়। এই হলো বাস্তব চিত্র।
তিনি বলেন, আমাদের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকমুখী। তারা বন্ড ইস্যু করতে চায় না, বরং অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের কাছে যায়। কেন যায় তা সঠিক জানি না। এর পেছনে হয়তো কোনো প্রণোদনা কাজ করে। হয়তো ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ আছে, হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো যায়; কিছু সুবিধা যে আছে, তা স্পষ্ট। তাই আমাদের ব্যাংকনির্ভর করপোরেট সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই