দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়নে অধিক সংখ্যক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি (সিআরএ) গড়ে ওঠায় ব্যাংকিং খাত এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। রেটিং নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী কাজ না থাকায় তারা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গুণমান ও মূল্য যাচাইয়ে আপস করায় এ দুরবস্থার তৈরি হয়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আয়োজিত এক সেমিনারে ‘কি নোট’ প্রেজেন্টেশনে এ তথ্য জানান আমেরিকার নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কবির হাসান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক এম কবির হাসান তার প্রেজেন্টেশনে দেখান, বাংলাদেশ তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানে ৮টি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি রয়েছে। এত বেশি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২টি, মালয়েশিয়ায় ২টি, চীনে ৩টি, কোরিয়ায় ৩টি এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে মাত্র ২টি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি রয়েছে।
তিনি বলেন, বেশি সংখ্যক রেটিং এজেন্সি হওয়ায় প্রয়োজনীয় রেটিং কাজ না থাকায় এজেন্সিগুলো টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আপস করেছে। এতে তারা ব্যাংকগুলোর গুণমান ও মূল্য উভয় ক্ষেত্রেই যথার্থতা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে ব্যাংকগুলো মানহীন রেটিং থাকা সত্ত্বেও উচ্চতর রেটিং দেখিয়ে সুবিধা নিয়েছে।
এই অধ্যাপক আরও জানান, বাংলাদেশে ২০০৪-২০০৫ সালে মাত্র দুটি রেটিং এজেন্সি ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়ের কাজ করত। সেগুলো হলো– ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল) এবং ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিআরএবি)। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে ‘ব্যাসল-২’ চালু করার ক্ষেত্রে আরও কতগুলো ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আবেদন জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় পরে আরও ৬টি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অনুমোদন পেয়ে রেটিং নির্ণয়ের কাজ শুরু করে।
এই বিশ্লেষকের মতে, তখন কোনো প্রকার বাজার সমীক্ষা ছাড়াই এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর না দিয়েই ওই রেটিং এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
অধ্যাপক এম কবির হাসান ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে এবং বন্ড বাজারের জন্য মান নির্ধারণের পথ সহজ করতে রেটিং এজেন্সিগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা সমর্থন করার জন্য মানহীন রেটিং এ খাতের জন্য খুবই বিপজ্জনক বলে হুঁশিয়ারি দেন।
আমার বার্তা/এমই