
রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর ভাসানী ভবনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সদ্য প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত পূর্ব আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মোগল আমলের কারওয়ান বাজার। এখানে নদী ছিল। নৌকা, জাহাজ আসত। এই নদী আমরা রক্ষা করিনি। তাড়াতাড়ি ভরাট কর, জায়গা দখল কর। কোনো প্লানিং ছাড়াই আমরা বাড়ি বানাবো, ভাড়া দেবো অথবা বিক্রি করে টাকা আয় করবো। গ্রামের জমি বিক্রি করে ঢাকায় এসে ফ্লাট কিনছে। মানুষ অতিদ্রুত বড় লোক হতে চাচ্ছে। সেই বিস্তৃর্ণ ধানক্ষেত, সেই নদী, সেই পুকুর আর রাখতে চাচ্ছে না। টাকাকেই ভাবা হচ্ছে দেবতা। এ কারণেই আজ সামন্য প্রকৃতিক দুর্যোগে আমরা কেঁপে গেছি। এ জন্য বলছি, যার যে কাজ, রাজনীতিবিদ যারা, যারা রাজনীতি করছে তাদের ওপর রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া। এখানে অন্য কেউ যদি আসে ওই উপলব্দিটা বুঝবে না।
রিজভী বলেন, ‘আজকে সমাজে মূল্যায়ন হয় নানাভাবে। যারা খাল দখল করেছে...। আমি তখন ছাত্রদলের রাজনীতি শেষে স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতি করি। মিরপুরের পাইকপাড়ায় থাকি। পকেটে পয়সা ছিল না। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে পরিবাগে আসতাম। সেখানে একটা খাল ছিল; এখন সেটা নেই। খাল পার হয়ে আবার রিকশা নিয়ে নয়াপল্টন অফিসে আসতাম। বেশি দিন আগের কথা নয়, ৯৭-৯৮’র দিকের কথা।
তিনি বলেন, এই ঢাকায় এতো বড় বড় নেতা, গবেষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ধোলাইখাল বন্ধ করে দেওয়া হলো। এটাকে পুনঃখনন, পরিষ্কার করে পানিটা যাতে ক্লিন থাকে সেই ব্যবস্থাটা আমরা কেন করলাম না? মিরপুরের পাইকপাড়ায়-এই এলাকায় খাল ছিল, তা গাবতলী গিয়ে মিলত। সেটা এখন আর দেখি না।
রিজভীর দাবি, ভূমিদস্যুদের কাছে খাল, পরিবেশ, নির্মল বাতাস শত্রু পক্ষ। শুধুমাত্র ঢাকা নয়; সারা বাংলাদেশ যেন সমাজের কর্তা, তাদের কাছে শত্রু পক্ষ। এরা কেউ ভাবেনি ধোলাই খালটা রক্ষা করতে হবে, আমাদের সন্তাদের সুস্থ রাখতে হবে। এদের সবার টাকা দরকার।
এক দেড় কাঠা পৈতৃক জায়গার ওপর তলার পর তলা করে দশ তলাও করেছে বলে উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, কেন? আগে বাড়ির সামনে একটা বাগান থাকতো। সেটা নেই। এখন একটি শিশু ফ্লাটে বন্দি জীবন-যাপন করে। তিনি বলেন, কই ইংল্যান্ড-আমেরিকায় তো তা হয় না। সেখানে তো কোনো খাল বা জলাধার বন্ধ করে দেওয়া হয় না।
দেখতে দেখতে ঢাকার জলাধার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এরা ভূমিদস্যু, এরাই আবার রাজনৈতিক নেতা হচ্ছে, এরাই সমাজের অধিপতি হচ্ছে।এদের অনেকে ম্যাট্রিক পাসও করেনি। খাল, বিল, পুকুর এবং জায়গা দখল করে এখন বিরাট ফার্মের মালিক। এদের কাছে গিয়েই বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য ধর্ণা দিচ্ছেন- সমাজ এমনভাবে বিভাজিত হয়েছে। এটা শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি করে গেছে। তা না হলে ঢাকা শহরে পঞ্চাশটির বেশি ক্যাসিনো থাকতে পারে? অথচ এর সঙ্গে জড়িতদের আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়নি বা বহিষ্কার করা হয়নি। ত্বকী হত্যার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ছিল, শেষ পর্যন্ত সে এমপি ছিল। অর্থাৎ খারাপ মানুষ, সন্ত্রাসী, ভূমি দখলকারী এদেরই প্রটেকশন দেওয়া হলো। এদেরই টিকিয়ে রাখা হলো। যার কারণে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দশজন মানুষ মারা গেল।
যতটুকু বিল্ডিং কোড রয়েছে, তাও মানা হয় না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আপনারা জানেন এই ঢাকা শহরে রাজউকের যে এলাকা সেখানেও ৯৫ শতাংশ অনুমোদনহীন বিল্ডিং তৈরি হয়। এখানে রাজউক বা অন্যান্যদের চোখ বন্ধ।
ভূমিকম্পের মধ্যেদিয়ে আমাদের উপলব্দি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সবার উপলব্দি করার সময় এসেছে। তা যদি করতে না পারি, তাহলে একটি শূন্য গর্তে হারিয়ে যাব। আসুন আমরা বাসযোগ্য বাংলাদেশ এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।
এ সময় বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাবেক ছাত্রনেতা পটুর ব্যক্তিগত জীবন ও রাজপথের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তার সহযোদ্ধা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক নেওয়াজ আলী।
আমার বার্তা/এমই

