ঢাকা শহরে ১০ জন বিজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ারে বসে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব তাদেরকে (সংস্কার কমিশন) কেউ দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত প্রয়াত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোনো কমিশন বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝবে না। বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝবে রাজনীতিবিদগণ এবং এই পরিবর্তন আসতে হবে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ঢাকা শহরে ১০ জন বিজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ারে বসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না। তাদেরকে সেই দায়িত্ব কেউ দেয় নাই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করার জন্য আমাদের যে মূল কারণ ছিল সেটা হচ্ছে, আমরা যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। সুতরাং সে আমার বিরুদ্ধে বলুক, দলের বিরুদ্ধে বলুক, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলুক, আমার মত হচ্ছে, তার সেই স্বাধীনতা আছে বলার।
‘শত সংস্কার করেন, হাজার সংস্কার করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যদি রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতি না বদলায়, কোনো সংস্থার এখানে কাজ হবে না। সুতরাং বিএনপি সেই কাজটা করছে, তারেক রহমান সেই কাজটা করছে। আমাদের সকলকে সে কাজটাই করতে হবে—ঠান্ডা মাথায়। রাজনীতিতে মাথা গরম হলে আপনি হেরে গেছেন। মাথা গরম করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, তারা যে কাজগুলো করছে, দেশের মানুষ জবাব দেবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, যার জন্য দেশের মানুষ লড়েছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, জেল খেটেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে কেন? একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। যে বাংলাদেশে আমার ভোটাধিকার থাকবে, আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব। আমার প্রতিনিধি সবসময় আমার কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ থাকবে। সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্যই আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি।
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে খসরু বলেন, লন্ডনে তারেক রহমান সাহেবের সাথে ড. ইউনূস সাহেবের যে বৈঠকটা হয়েছে, সেদিন থেকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে, বাংলাদেশ একটি নির্বাচিত সংসদ গঠন করে, বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণ করতে হলে সেটা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।
সংস্কার কমিশনগুলো মানুষের মনের ভাষা বুঝবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে আমরা বলছি—এই কমিশন, সেই কমিশন। আমি সম্মান রেখে বলছি, কোনো কমিশন বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝবে না। বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝবে রাজনীতিবিদগণ, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ধারণ করবে রাজনীতিবিদগণ এবং এই পরিবর্তন আসতে হবে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ঢাকা শহরে ১০ জন বিজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ারে বসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না। তাদেরকে সেই দায়িত্ব কেউ দেয় নাই। এই পরিবর্তন আসতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এই পরিবর্তন হবে টেকসই। এই পরিবর্তনই বাংলাদেশের মানুষের নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে।
‘সুতরাং যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, অস্থিরতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে—তারা তো আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে বিবেচনা করে কীভাবে? আপনি রাজনৈতিক দল হবেন, নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচন করতে দেবেন না, নিজেও করবেন না! তো আপনি এক কাজ করুন না—ওই ‘পেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করেন। রাজনীতি করার দরকার কী? পেশার গ্রুপের তো একটা দায়িত্ব আছে। আর যারা রাজনীতি করতে চায় তারা রাজনীতি করুক।’
জামায়াত ও এনসিপিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এখন তারা বলছে, ইলেকশনেরও দরকার নাই! শেখ হাসিনা তো আমি-ডামি বলে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আর তারা বলছে, ইলেকশনের দরকার নেই। ইলেকশনের দিকে যাওয়ার দরকার নেই। ইলেকশনের প্রক্রিয়াও হতে পারবে না। তারা কি আসলে কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ্য হতে পারে? তারা কি গণতন্ত্রের বিপক্ষে শক্তি নয়? তারা কি জনগণের মালিকানা ফিরে পাওয়ার বিপক্ষে শক্তি নয়? শান্তিপূর্ণভাবে, সহনশীলতার মাধ্যমে, পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ রেখে বিএনপির রাজনীতিকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এটাই হচ্ছে আগামী দিনের বিএনপির রাজনীতি।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
আমার বার্তা/এমই