পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় এবং বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রবাসী স্বামী আব্দুল জব্বারের নামে যৌতুক মামলার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী হিমায়ারা খাতুন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী জব্বার সৌদি আরবে কর্মরত। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচদিঘল গ্রামে। তার স্ত্রী হিমায়ারা খাতুন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মল্লিকপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের হেলালুর রহমানের মেয়ে।
জব্বার ও তার পরিবারের দেয়া তথ্য মতে জানা গেছে, তিন বছর সৌদি আরব থাকার পর দেশে ফিরে ২০২২ সালের ১ মে হিমায়ারা খাতুনকে বিয়ে করেন জব্বার। বিয়ের দেড় মাস পরই পুনরায় সৌদি আরব ফিরে যান তিনি। প্রবাসে থেকে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে হিমায়ারার নামে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান জব্বার। যার প্রমাণপত্র তার কাছে রয়েছে।
জব্বারের দাবি, ২০২৪ সালে দেশে ফেরার পর শ্যালকের সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানের জন্য স্ত্রী হিমায়ারাকে টাকা দেন। জমি কট নেয়ার জন্য শ্বশুর হেলাল ও বড় চাচা শ্বশুর বেলালকে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে হিমায়ারা ও তার পরিবারকে মোট ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। পরে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানকালে স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক পরকীয়া প্রেমঘটিত বার্তা দেখে বিষয়টি শাশুড়িকে জানান তিনি। কিন্তু শাশুড়ি বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান।
জব্বার বলেন, আমি পরিবারের শান্তি রক্ষায় আবারও সৌদি আরবে ফিরে যাই। তবে কিছুদিন পর এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে হিমায়ারা’র প্রেমিক বলে দাবি করে আমাকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘তোমার হিমায়ারার ওপর কোনো অধিকার নেই। ফোনে কথা বলবে না, ফেসবুক থেকে ছবিও ছাড়বে না, সেই অধিকার হারিয়ে ফেলেছ’।
জব্বার জানান, পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটলে জব্বার ও তার পরিবার হিমায়ারা’র সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে উল্টো হুমকি দেয় হিমায়ারা, তার বাবা, মা ও বড় চাচা। হিমায়ারা বাদি হয়ে জব্বার ও তার পরিবারের ৪ জনকে আসামি করে পাবনার আদালতে একটি যৌতুক মামলা করেন। এরপর থেকে জব্বারের মোবাইল নাম্বার ব্লাকলিস্ট করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় হিমায়ারা ও তার পরিবার। আর বিদেশ জীবনে কষ্টার্জিত টাকার হিসাব না পেয়ে জব্বারের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মা বাদি হয়ে হিমায়ারার বাবা, মা, বড় চাচাকে আসামি করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন।
জব্বারের মা বলেন, বিয়ের পর থেকে বউটা তাদের বাড়িতেই থাকতো। কখনও আমার বাড়িতে আসে নাই। হিমায়ারা ও তার মায়ের কাছে আমার ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতো। জমি কট রাখার জন্যও অনেকগুলো টাকা মেয়ের বাবা, চাচাকে দেয়া হয়েছে। পরে হিমায়ারা, তার বাবা-মায়ের নানারকম কীর্তিকলাপ দেখে আমার ছেলে যখন হিসাব চাইছে, টাকা চাইছে তখনই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করছে, হুমকি দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের নামে মিথ্যা মামলাও করছে। আমি ন্যায্য বিচার চাই।
এ বিষয়ে জব্বারের স্ত্রী হিমায়ারা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমাকে বউ দাবি করে, কিন্তু তার সে কোনো দায়িত্ব পালন করে না। কোনো ভরণ পোষণ দিবে না, আর হুট করে এসে বলবেন ১২ লাখ টাকা দিছি, এটা আমি মানবো নাকি। একটা বিবাহিত মেয়ে তার নিজের পরিবার, বন্ধু বান্ধব, ক্লাসমেটদের সঙ্গে কথা বলবে না তো সে কি করবে। যেকোনো মানুষের জীবনে চলতে গেলে বন্ধু বান্ধব লাগবে, তাদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। আর কথা বললেই যে তার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক থাকবে তার কোনো মানে নাই। সে টাকা দেবার যে ডকুমেন্টস দিচ্ছে সেটা সত্য নাকি মিথ্যা তা কোর্টে প্রমাণ হবে।
এ বিষয়ে হিমায়ারা খাতুনের বাবা হেলালুর রহমান বলেন, আমরা যখন কোর্টে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা দিছি, তখন সে আবার আমাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দিছে ১৪ লাখ টাকার। যে মামলার কোনো ভিত্তি নাই। আবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে সেটা হলো জব্বার আগে একটা বিয়ে করেছিল। সেই পক্ষের একটা বিয়ের উপযুক্ত মেয়েও আছে। সেটা আমাদের কাছে লুকিয়েছিল। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের গ্রামে, ফাঁড়িতে, থানায় বসে কয়েকটা শালিস হয়েছে। সে কোনো শালিসই মানে নাই। দুই পক্ষেরই কোর্টে মামলা চলমান। সেখানে যা হবার হবে।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। থানায় কোনো অভিযোগও আসেনি। যেহেতু বলছেন আদালতে মামলা করেছে উভয়পক্ষ তাহলে সেখানেই ফায়সালা হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই