ই-পেপার বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রা: আর কত প্রাণহানি?

সাদিয়া সুলতানা রিমি
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৩
আপডেট  : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৬

বিশ্বায়নের এই যুগে উন্নত জীবনের আশায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে অভিবাসন একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বৈধ উপায়ে ভিসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। ফলে তারা ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ পথে ইউরোপসহ অন্যান্য উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত এই বিপজ্জনক যাত্রায় অংশ নেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, এবং অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান সাগর, মরুভূমি ও পাচারকারীদের হাতে। অবৈধ অভিবাসন এখন একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও এক ভয়ংকর বাস্তবতার সৃষ্টি করছে।

অবৈধ অভিবাসনের কারণ

অবৈধ অভিবাসনের পেছনে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ কাজ করে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো—

১. দারিদ্র্য ও বেকারত্ব

উন্নয়নশীল দেশের বহু মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটায়। কর্মসংস্থানের অভাব ও ন্যূনতম জীবিকা নির্বাহের সুযোগ না থাকায় তারা ইউরোপের মতো দেশগুলোতে একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছল জীবনের আশায় যাত্রা করে। বৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ সীমিত হওয়ায় তারা মানব পাচারকারী চক্রের সহায়তায় অবৈধ পথ বেছে নেয়।

২. রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধ

মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত লেগে আছে। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপের দিকে ছুটছেন।

৩. মানব পাচার ও প্রতারণা

আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র এই অবৈধ অভিবাসনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে। তারা উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে মানুষকে বিপজ্জনক পথগুলোতে ঠেলে দেয়। অনেক সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিবারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়।

৪. আইনি অভিবাসনের কঠিন শর্ত

অনেক দেশেই বৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। ফলে দরিদ্র মানুষদের জন্য এই সুযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

অবৈধ অভিবাসনের ভয়াবহ পরিণতি

অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এর প্রধান ভয়াবহ পরিণতিগুলো হলো—

১. ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি

অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ভূমধ্যসাগরে। ছোট ও নড়বড়ে নৌকায় করে হাজার হাজার মানুষ সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসব নৌকা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় প্রায়ই ডুবে যায়, আর এতে শত শত মানুষ সাগরে প্রাণ হারান। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ এই বিপজ্জনক যাত্রায় সাগরে ডুবে মারা যায়।

২. সাহারা মরুভূমিতে মৃত্যু

যারা স্থলপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের অনেকেই সাহারা মরুভূমি অতিক্রম করতে গিয়ে প্রাণ হারান। প্রচণ্ড গরম, পানির অভাব ও চরম প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এখানে অসংখ্য মানুষ মারা যান। অনেক সময় পাচারকারীরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মরুভূমিতে ফেলে রেখে চলে যায়, ফলে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পতিত হন।

৩. পাচারকারীদের নির্মমতা

মানব পাচারকারী চক্রের হাতে অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী নির্মম অত্যাচারের শিকার হন। অনেক সময় তারা জিম্মি হয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের ফাঁদে পড়েন। নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হন, আর অনেককে দাসত্বের জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়।

৪. ইউরোপের কঠোর নীতি ও বন্দিত্ব

যারা ভাগ্যক্রমে ইউরোপে পৌঁছাতে সক্ষম হন, তাদের অনেকেই সীমান্তে আটক হন এবং শরণার্থী শিবিরে বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়াকড়ির কারণে অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশকেই দেশে ফেরত পাঠানো হয় বা আটক করে রাখা হয়।

সমস্যার সমাধানের উপায়

অবৈধ অভিবাসন রোধ করতে হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধান হলো—

১. সচেতনতা বৃদ্ধি

অবৈধ পথে অভিবাসনের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে প্রচার চালিয়ে বোঝাতে হবে যে এই যাত্রা কতটা বিপজ্জনক ও জীবনহানির কারণ হতে পারে।

২. মানব পাচার রোধ

আন্তর্জাতিকভাবে মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচারকারী দালালদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

৩. বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি

যদি উন্নত দেশগুলো বৈধ অভিবাসনের সুযোগ সহজ করে দেয়, তাহলে অনেক মানুষ অবৈধ পথে ঝুঁকি নেবে না। দক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা যেতে পারে।

৪. স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন

দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশগামীদের জন্য দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিলে তারা ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার চিন্তা করবে না।

৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

বৈশ্বিক পর্যায়ে এই সংকট মোকাবিলায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে হবে।

অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান, যা একটি ভয়াবহ মানবিক সংকট। উন্নত জীবনের আশায় মানুষ নিজের জীবনকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি, মানব পাচার প্রতিরোধ, বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করা সম্ভব। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যথায়, অবৈধ অভিবাসনের ভয়াবহ পরিণতি চলতেই থাকবে, এবং আরও অসংখ্য স্বপ্নের মৃত্যু ঘটবে সাগরে, মরুভূমিতে ও পাচারকারীদের হাতে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন আর একটি প্রাণও অবৈধ অভিবাসনের বলি না হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।

আমার বার্তা/জেএইচ

চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”: উন্নয়ন না ঋণের ফাঁদ?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে যখন “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” বা সংক্ষেপে BRI ঘোষণা

জুলাই সনদ ও গণভোট : গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির সতর্ক অবস্থান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও দুটি শব্দ কেন্দ্রবিন্দুতে—‘সংস্কার কমিশন’ এবং ‘গণভোট’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি সংবিধান সংস্কারের

রাজনীতির অস্থিরতার ফাঁদে চট্টগ্রাম বন্দর!

ষাটোর্ধ মোহাম্মদ সেকান্দর। তাকে অপহরণ করার ঘটনায় আৎকে উঠি। সীতাকুণ্ডের পরিচিত মুখ সেকান্দর। বয়সে আমাদের

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় AEZ ভিত্তিক মিশ্র অনুজীব সার উদ্ভাবন

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের ধনী ও অতি মুনাফালোভী শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী হলেও এর প্রভাবে সবচেয়ে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সালাহউদ্দিনের উত্থান: যুক্তির ভাষায় নতুন রাজনৈতিক আখ্যান

আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণা করল বিসিবি

দেশে রাজনীতি মুক্ত ক্রীড়াঙ্গন চান তারেক রহমান: আমিনুল হক

তিন দলকে প্রতীক বরাদ্দ, শাপলা কলি পেল এনসিপি

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে অস্ত্র চুরির অভিযোগ তদন্তাধীন

বিনার গবেষণায় ২২ ফসলের ১৩৭ জাত উদ্ভাবন, পেনশন দাবি

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩৭ বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে সরকার

ছাত্রলীগের ৩৮৫ জনের তালিকা প্রকাশ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দুবলার চরে রাস পূর্ণিমা পুজা ঘিরে কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তা জোরদার

অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার, কেজিপ্রতি দাম ছাড়াল ১০০ টাকা

নাচোলের ইউএনওর বাবা-মা নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত দুদকের

তিন শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত

রোহিঙ্গা নারীদের ৯৭ শতাংশই শিক্ষার বাইরে, বৈশ্বিক প্রতিনিধিদলের উদ্বেগ

বাংলাদেশ-মার্কিন বস্ত্রখাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিজিএমইএ ও মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনের নতুন তালিকা প্রকাশ

কপে মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে

মাদারীপুর-১ আসনে মনোনয়ন স্থগিত করলো বিএনপি

নিবন্ধন না পেয়ে আমরণ অনশনে আমজনতার তারেক

আকবর আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের এশিয়া কাপের দল ঘোষণা

দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১০১ জন