
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশি উচ্চাভিলাষী সংস্কার করে ফেলেছে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের পক্ষে হজম বা সহ্য করা কঠিন হতে পারে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুরোটা না হলেও সংস্কারের মূল নির্যাসটুকু নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করবে। কারণ, জনগণের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই তাদের কাজ করতে হবে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, অনেক বড় বড় সংস্কার হচ্ছে অধ্যাদেশের মাধ্যমে; যেটা আমরা বুঝতেও পারছি না। আমরা যারা এগুলো করছি, আমাদেরও এর ইমপ্লিকেশন (অন্তর্নিহিত অর্থ) পুরোটা বুঝতে সময় লাগবে। কিন্তু এগুলো সবই বহুদিন ধরে সংস্কার কমিটিতে ছিল। আমাদের নিজেদের মন্ত্রণালয় থেকেও সংস্কারের অনেকগুলো প্রস্তাব হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমার নিজের ধারণা যে, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক বেশি সংস্কার করে ফেলেছে এবং বেশি উচ্চাভিলাসী সংস্কার অনেকখানি করে ফেলেছি। যেগুলা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে হজম করা বা সহ্য করা একটু কঠিন হতে পারে।
‘কিন্তু আশা করবো যে, পুরোটা না হলেও এর অন্তত বেশিরভাগই, অন্তত এর নির্যাসটা, যেটা অন্তর্নিহিত সেই জিনিসগুলো গ্রহণ করবে। কারণ, নির্বাচিত সংসদই জনগণের চাহিদার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল রাখতে পারবে।’
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, সম্প্রতি বিচার বিভাগকে স্বাধীন বা পৃথকীকরণের যে অধ্যাদেশ হয়েছে তাতে পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয় নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিল। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু দেওয়া হয়েছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে বিষয়টি নতুন সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। কারণ, এখন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত—জামিন, রিমান্ড বা দণ্ড কোনোটিই আর আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। নতুন সরকার অবশ্যই বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করবে।
চলমান অস্থিরতা ও দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের হাতে সময় খুবই কম। অথচ এই সময়ে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষকরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন, যখন কি না সামনেই পরীক্ষা। সবার মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, এটাই শেষ সুযোগ, এখনই যা পারো আদায় করো। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর কিছু করা যাবে না—এমন ভাবনা থেকে দুদিনের আলটিমেটাম দেওয়া হচ্ছে। এটি আমার কাছে অদ্ভূত লাগে।
সর্বস্তরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, আমরা কি খুব অস্থির হয়ে গেছি? এখনই না পেলে আর কখনো পাবো না, এমন মনে হয় কেন? এই অস্থিরতা থেকে সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষক ও ছাত্র সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
‘দেশ ভালো হোক তা সবাই চায়। কিন্তু তার জন্য একটি সুস্থির পরিবেশ দরকার—যেখানে ছাত্ররা পড়বেন, গবেষকরা গবেষণা করবেন এবং পরিকল্পনাবিদরা পরিকল্পনা করবেন। দেশের সব সমস্যার দায় মাথায় নিয়ে কেউ টিকতে পারে না। নিজের জায়গায় দায়িত্ব পালন করলেই দেশ এগিয়ে যাবে’— যোগ করেন উপদেষ্টা।
আমার বার্তা/এমই

