
সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে অনুমোদন হয়েছে। ফলে অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকতে থাকা ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (লিকুইডেট) প্রক্রিয়া শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর আওতায় এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নের বিধান রয়েছে। তবে অবসায়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন নেয়া আবশ্যক। রোববার পর্ষদ এ বিষয় অনুমোদন করেছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে কোন কোন প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করবে, তা চূড়ান্ত করবে।
প্রাথমিকভাবে, আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি—এই তিন সূচককে ভিত্তি ধরে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘অব্যবহারযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৯টি এনবিএফআই-এর ঋণের বিপুল অংশ খেলাপি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: এফএএস ফাইন্যান্স: ৯৯.৯৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্স: ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি: ৯৭.৩০ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: ৯৬ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং: ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৪ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা, আভিভা ফাইন্যান্স: ৮৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার লিজিং: ৭৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স: ৫৯ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স: ৭৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
২০২৩ সালে প্রণীত ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন’ অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, আমানতকারীর স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম, দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততা এবং মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে। লাইসেন্স বাতিলের আগে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হয়। গত ২২ মে এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না আসায় অবসায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দেশের মোট ৩৫টি এনবিএফআই-এর মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মোট ঋণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ। বিপরীতে বন্ধকি সম্পদের মূল্য মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানের ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৭.৩১ শতাংশ, গত বছর তারা ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ৪৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ২০ প্রতিষ্ঠানের আমানত ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে আরও ৫ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। গ্রাহকদের নিট ব্যক্তি আমানতের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অবসায়ন ও পুনর্গঠনের প্রাথমিক ধাপে এই অর্থের জোগান দেয়া হবে। সংস্থাগুলোর অবসায়নের পর কর্মরত কর্মচারীরা চাকরিবিধি অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন।
আমার বার্তা/এমই

