বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ করতে চলেছে ভারত। এছাড়া বিএসএফের ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টিও শিগগিরই ভারত সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে চলেছে।
এতে প্রায় ১৭ হাজার নতুন সৈন্য যুত্ত হবে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি শিগগিরই সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে চলেছে, যাতে প্রায় ১৭ হাজার নতুন সৈন্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিম এবং পূর্ব ফ্রন্টে দুইটি নতুন ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার বা অগ্রবর্তী সদর দপ্তর স্থাপন করা হবে বলেও সরকারি বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রগুলোর মতে, এই পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে এবং এখন শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ছাড়ের অপেক্ষা। অনুমোদন মিললে বিএসএফের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
বিশেষ করে গত বছর বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে (ভারতের) পূর্ব সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং এপ্রিলের ২২ তারিখে পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তান সীমান্তেও নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন ব্যাটালিয়ন এবং সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা বিএসএফের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ভারতের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মিরের আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে জম্মুতে একটি নতুন সেক্টর সদর দপ্তর তৈরি হবে এবং বাংলাদেশ সীমান্তের নজরদারি বাড়াতে মিজোরামে একটি নতুন সেক্টর হেডকোয়ার্টার হবে।
বিএসএফের বর্তমান সেক্টর সদর দপ্তরগুলো জম্মুর রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু শহর এবং ইন্দ্রেশ্বর নগরে অবস্থিত। মিজোরাম ও কাচার ফ্রন্টের সদর দপ্তর আসামে, যার অধীনে সিলচর, আইজল এবং মণিপুরে সেক্টর সদর দপ্তর আছে।
নতুন ব্যাটালিয়নগুলোর জন্য পুরুষ ও নারী কর্মী নিয়োগের জন্য শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে বিএসএফ। নিয়োগের পর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা হবে।
পিটিআই বলছে, বিএসএফের প্রায় পৌনে তিন লাখ সদস্য রয়েছে এবং এই বাহিনী কয়েক বছর আগে ২০-২১টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সীমান্তের জটিল ভূপ্রকৃতি এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার।
বিএসএফ বর্তমানে ভারতের ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্তে দায়িত্বপালন করে থাকে, যার মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) ৩৩৯ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই বিশাল সীমান্তের মধ্যে প্রায় ১০৪৭ কিলোমিটার এখনও বেড়াবিহীন রয়েছে। কারণ ওইসব অংশ নদী, জঙ্গল এবং দুর্গম অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে এবং এসব স্থানে বিএসএফের মোট ১ হাজার ৭৬০টি সীমান্ত পোস্ট রয়েছে। নতুন এই ব্যাটালিয়নগুলো এই পোস্টগুলোর নিরাপত্তা ও কার্যক্রম আরও মজবুত করবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই