রাজধানীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। কোনো এক পণ্যের দাম কিছুটা কমলেই, সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় অন্যটির। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাছ-মুরগির বাজার হয়ে ওঠে একেবারে লাগামহীন। এই অস্থির বাজারে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতারা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, যা গত এক মাস আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। দেশি মুরগির দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার নিচে নেই। জনপ্রিয় মাছ যেমন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ও চিংড়ির দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০–৫০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই বলছেন, অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দামের বিশাল ব্যবধান তৈরি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, আগে মাসে কয়েকবার দেশি মুরগি কিনতাম, এখন সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে। মাছ কিনতে গেলেও গুনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দাম। বাজারের সঙ্গে আয়-রোজগারের কোনো মিল নেই। অসাধু চক্রের সদস্যরা অদৃশ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আরেক ক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, বাজারে আসলে দেখি কোন জিনিসের দাম একটু কম, সেটাই কেনার চেষ্টা করি। কখন যে কোনটার দাম বাড়ে, বলা যায় না। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু পণ্য আনতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি নেই।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বাজার মনিটরিং দুর্বল হয়ে পড়ায় এই ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট’ দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। পাইকারি-খুচরা দামের ব্যবধান কমাতে না পারলে নিত্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।
বাজারে এসে ক্রেতারা—বলছেন গরু-খাসির মাংস অনেক আগেই নাগালের বাইরে গেছে; এখন মুরগি ও মাছও বিলাসী খাবারের তালিকায় ঢুকছে। বেসরকারি চাকরিজীবী ফারজানা হক বলেন, আগে সপ্তাহে একদিন বাজারে যেতাম, এখন দুই দিনে যাই। কারণ প্রতিদিন দাম বাড়ে। সংসার চালাতে এখন বুদ্ধি খাটিয়ে বাজার করতে হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও দামের লাগাম টানার মতো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারের নিয়মিত নজরদারি ও সিন্ডিকেট শনাক্তকরণ ব্যবস্থা না থাকায় বাজারে অস্থিরতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারাও দাম বৃদ্ধির দায় নিচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, পাইকারি পর্যায়েই প্রতিদিন দাম ওঠানামা করছে। খামারিরা ফিড, পরিবহন খরচ ও উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, ফলে খুচরা বিক্রেতাদেরও বাধ্য হয়ে সেই দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, আগে ১৪০–১৫০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন ১৮০–২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা এক কেজির বদলে আধা কেজি নিচ্ছেন। আমরা পাইকারি দামে বেশি কিনে বেশি দামে বিক্রি না করলে লোকসান গুনতে হয়।
বনশ্রী এ ব্লকের মাছ বিক্রেতা মোদাসসের আলী বলেন, ঘাট থেকে সরাসরি মাছ কিনতে পারি না, আড়তের মাধ্যমে কিনতে হয়। ফলে দাম বেড়ে যায়। বাজারে এসে ক্রেতারা আমাদের ওপর ক্ষোভ দেখান, কিন্তু আসলে দামের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।