
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারসহ মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে সমাজ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য দেশব্যাপী ডিএনসি’র অপারেশনাল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে যার ফলস্বরূপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) রাজধানীতে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমান মাদক জব্দ করা হচ্ছে।
ডিএনসি’র গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে এবং এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসি’র কাছে গোপন তথ্য ছিল যে একটি চক্র ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দেশব্যাপী অবৈধ মাদকদ্রব্য সিসা সরবরাহ করছে। ঊক্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএনসি’র মহাপরিচালকের নির্দেশে অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে গত ১৬/১১/২০২৫ইং তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ টিম উপপরিচালক জনাব মোঃ মেহেদী হাসানের নেতৃত্ত্বে ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট ছদ্মবেশে পরিচালিত অভিযানে মোট ১৮ কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেট, সিসা সেবনে ব্যবহৃত চারকোল, সিসিটিভি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন “সিসা বার”-এ কঠোর নজরদারি ও অভিযান চালানোর ফলে চক্রগুলো এখন নতুন কৌশলে অনলাইন অর্ডার, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও গোপন ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সিসা সরবরাহ করছে। এই উদীয়মান প্রবণতা বন্ধে ডিএনসি বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে।
ডিএনসি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীতে সক্রিয় একটি অনলাইনভিত্তিক সিসা সরবরাহ চক্র শনাক্ত করে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্স ও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে অর্ডার নিত।
ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে ডিএনসি সদস্যরা প্রথমে চক্রের একজন ডেলিভারিম্যান - মোঃ আশিকুর রহমান সামি (১৯) এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে হাতিরঝিল এলাকায় পণ্য ডেলিভারির সময় ও স্থান নির্ধারণ করেন। গত ১৬/১১/২০২৫ তারিখ রাত ১১ ঘটিকায় হাতিরঝিল মহানগর প্রকল্প এলাকায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সামি সিসার জারভর্তি ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হলে ডিএনসি দল তাকে ছদ্মবেশী ক্রেতার ফাঁদে ফেলে আটক করে। তার স্কুলব্যাগ তল্লাশিতে ২ কেজি AL FAKHER সিসা পাওয়া যায়।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সামি জানায়, সে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন অর্ডার অনুযায়ী সিসা সরবরাহের ডেলিভারি বয়, এবং সে শুধু একাই নয় - এটির পিছনে একাধিক ব্যক্তি কাজ করছে। সে আরও স্বীকার করে যে, এ চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক হলেন মোঃ আব্দুল আলিম ওয়াসিফ (২৮)।
সামির দেওয়া তথ্য যাচাই করে ডিএনসি দল দ্রুত উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়াম প্লাজায় অবস্থিত “ইনোভেট” দোকানটিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে। উপপরিচালক জনাব মোঃ মেহেদী হাসান–এর নেতৃত্বে গোয়েন্দা টিম সেদিন রাতেই দোকানে প্রবেশ করে সন্দেহজনক কার্যকলাপ নিশ্চিত হলে দোকানের মালিক মোঃ আব্দুল আলিম ওয়াসিফ (২৮) - কে আটক করে।
পরবর্তীতে স্টোর রুম তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয়—
• ১৬ কেজি AL FAKHER সিসা (১৬ জার)
• ৩টি হুক্কা সেট, ২টি পাইপ
• চারকোল ১০ প্যাকেট
• আইফোন–১৩
• ৫টি ওয়াইফাই সিসিটিভি ক্যামেরা
ওয়াসিফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, তিনি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিসা সরবরাহ করতেন এবং সামি তার হয়ে ডেলিভারি দিত। জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিফ স্বীকার করে যে, সে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে সিসা সরবরাহ করত এবং তার একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল।
গ্রেফতার দুই আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে; শিগগিরই আরও অভিযান পরিচালিত হবে।
অনলাইনভিত্তিক সিসা কারবার—উদীয়মান ঝুঁকি ও ডিএনসির সতর্ক অবস্থান
• সাম্প্রতিক অভিযান ও নজরদারির ফলে অনেক অবৈধ সিসা বার বন্ধ হয়ে গেছে।
• ফলে চক্রগুলো অনলাইন–ডেলিভারি মডেল গ্রহণ করে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে।
• প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেন, মোবাইল নম্বর, আইপি অ্যাড্রেস ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে আরও সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করা হয়েছে।
রাজধানীতে অনলাইনভিত্তিক মাদক বিতরণ রোধে ডিজিটাল নজরদারি, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও মাঠ–গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে।
আমার বার্তা/জেএইচ

