রাজধানীর নতুন বাজারের ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে কল্পিত 'অখণ্ড ভারত'-এর অংশ দেখিয়ে ভারতীয় নতুন পার্লামেন্ট ভবনে মানচিত্রের মুর্যাল স্থাপনের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবাদী সমাবেশ শেষে হাইকমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে যান রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় রেখে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হাইকমিশন অফিস জানায় তারা এধরনের স্মারকলিপি গ্রহণ করতে পারবে না।
পরবর্তীতে হাইকমিশনের বাইরে এসে স্মারকলিপিটি স্থানীয় জনতা ও দেশবাসীর উদ্দ্যশ্যে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পড়ে শোনান রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এর রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক।
তিনি বলেন, এভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূখণ্ডকে কল্পিত মানচিত্রে স্থাপন করা প্রতিবেশী দেশের জনগণের জন্য অমর্যাদাকর ও অসম্মানজনক।
তিনি আরও বলেন, সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্রকে স্থান দেয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগলিক স্থিতাবস্থাকে অস্থিতিশীল করার পথ তৈরি হয়েছে।
কাজেই, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে, আমরা বাংলাদেশের জনগণ এহেন সাম্রাজ্যবাদী খাসলতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং বিজেপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই অলীক ও অনৈতিহাসিক মানচিত্রকে আপনারা সংসদ ভবন থেকে নামিয়ে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।
আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই ভারতের সাধারণ মানুষের সাথে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কোনো দ্বন্দ্ব কিংবা বৈরীতা নেই। বরং দু'দেশের সাধারণ মানুষই একে অপরকে বন্ধু মনে করে। আমাদের বিরোধিতা হচ্ছে ভারতের শাসকদলের এইরূপ আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে। তাই ভারত সরকারের কাছে আমরা স্পষ্ট আহবান জানাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিবেশীর সম্পর্ক নিশ্চিত করতে অবিলম্বে এই কল্পিত মানচিত্রের মুর্যাল সরিয়ে ফেলা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে ভারতীয় শাসকদলের এইরূপ ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্র বরাবর এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দৃঢ় প্রতিবাদী অবস্থান ব্যক্ত করা হোক। বাংলাদেশ সরকার যদি এই বিষয়ে নতজানু আচরণ প্রদর্শন করে তাহলে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে।
প্রতিবাদী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এর জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য আদিল আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে ‘ভারত’ মানে বিশাল ভূখণ্ডব্যাপী হিন্দুদের একটি দেশ— এমন দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নাই। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকের বর্তমান ফেডারেল সংবিধানের মধ্যেও সেটি নাই। থাকলে সেটি ইউনিটারি সংবিধান হতো, ফেডারেল হতো না। পৌরাণিক ধারণা হিসেবে ‘ভারত’ এবং পৌরাণিক জম্বুদ্বীপের শাসক হিসেবে রাজা 'ভরত'-এর হদিস মিললেও, ভৌগলিক সীমানা হিসেবে পুরাণে ‘ভারত’ বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব মেলে না। বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড বা গ্রাম-সমাজগুলোকে গাঁথার ভিত্তি রচিত হয় মুঘল সাম্রাজ্যে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম মামুন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা এ অঞ্চলের দখল নিয়ে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড বা গ্রাম-সমাজগুলোকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক আওতায় আনে।
সাতচল্লিশের রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সেই প্রশাসনিক বন্দোবস্ত দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে বিন্যস্ত হয়— ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান। তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) তেইশ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি নব্য-ঔপনিবেশিক শাসনের জিঞ্জির ভেঙে অবশেষে ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেই হিসেবে সাতচল্লিশের পূর্বে বর্তমান ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রেরও কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল ইসলাম নয়ন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান সেলিম, মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, ঢাকা মহানগর উত্তর এর নেতা জাহিদ রশীদ রাণা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর নেতা মাহবুবুল হক মিল্টন, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলন-এর সমন্বয়ক কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান, মোনাব্বের নিশাতসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।