ই-পেপার বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিরোধে ২৩৭ বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন

রতন বালো
প্রিন্ট ভার্সন
০৫ জুন ২০২৩, ০৯:৩৩
আপডেট  : ০৫ জুন ২০২৩, ১০:১৮
ফাইল ফটো

  • গত ১২ বছরে ৩ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে
  • প্রত্যেক নাগরিকের জীবনরক্ষায় কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়--মো. কামরুল হাসান-সচিব- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

১৫ জেলায় ৩৩৬টি বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র (লাইটার অ্যারেস্টার) বসানোর কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ২৩৭টি লাইটিং অ্যারেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৯৯টি লাইটিং অ্যারেস্টার দ্রুত সময়ে স্থাপন সম্পন্ন করা হবে। গত ২০১১-এর শুরু থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছরে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ জনের। বজ্রপাত প্রতিরোধে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।

জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে, আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। তবে শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে টিআর আর কাবিখা নীতিমালা সংশোধন করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ স্থাপন প্রকল্প নেয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ স্থাপনে ৬ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জেলা বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে দিনাজপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, নবাবগঞ্জ। এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় স্থাপন করা হয়েছে বজ্রনিধোরক যন্ত্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে বজ্রপাতে মৃত্যু কমানো সম্ভব, তবে সচেতনতা এবং সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। এখনই এই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। সেজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় লাইটিং অ্যারেস্টার মেশিন স্থাপন করেছে। এই বজ্রনিরোধক দণ্ড ও যন্ত্র উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ সহজে নিরাপদে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। ৩০-৪০ ফুট লম্বা দণ্ডে তিন-চার ইঞ্চি জিআইপি পাইপ ও তামার তার থাকে। এছাড়া লাইটার অ্যারেস্টার হচ্ছে একটি ডিভাইস, যা বসানো হয় বজ্রনিরোধক দণ্ডের ওপর। এর মূল কাজ নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামিয়ে আনা। বজ্রনিরোধক যন্ত্রটি সব সময় সক্রিয় থাকে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, বজ্রপাত ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম, বজ্রপাতনিরোধক কংক্রিটের শেল্টার স্থাপন এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব। সেজন্য দেশের বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ১৫ জেলায় বজ্রনিরোধক দণ্ড ও যন্ত্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, কিউমুলোনিম্বাস বা ঝড়োপুঞ্জ মেঘ থেকে বজ্রপাত হয়। তাই একে বজ্রগর্ভ মেঘও বলা হয়। কয়েক বছর ধরে এপ্রিল ও মে মাসে দেশে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যতম কারণ বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দূষণ। বায়ুতে দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ঝড়, খরা, বন্যা ও বজ্রাঘাত প্রবণ অঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা সব মিলিয়ে যেন বজ্রপাত তৈরির আদর্শ পরিবেশ এ দেশের বায়ুমণ্ডল।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে ২৫০ জনের বেশি মানুষ মারা যায় বলে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভৌগলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন আর অসচেতনতার কারণে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও ডিজেস্টার সায়েন্স এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমানের বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানের কারণেই বজ্রপাত বেশি হয়। দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর, উত্তরে হিমালয় থাকায় গরম-আর্দ্র ও শীতল-শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। এই দুই ধরনের আবহাওয়ার সংঘাত ঘটলেই বজ্রপাত হয় সাধারণত। মার্চ থেকে শুরু হয় বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ। আমার বয়স ও অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বজ্রপাতে মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বাড়ছে। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন। বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে মূলত সতর্কতা না থাকার কারণেই। কৃষক মরছে বেশি। তারা বজ্রপাত আর বৃষ্টির মধ্যে মাঠে কাজ করেন। অনেকের কাজ না করে উপায়ও থাকে না। শহরে কিন্তু বড় বড় ভবন থাকার কারণে এর প্রভাব কম। শহরে মরছেও কম বলে অভিমত প্রকাশ করেন।

বজ্রনিরোধক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। সেখানে সরকারি হিসেবে গত ১০ বছরে সারা দেশে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে ২০১১ সালে মারা গেছেন ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৯৮ জন, ২০২০ সালে ২১১ জন এবং ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৯ জন।

বেসরকারি হিসেবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। বেসরকারি একটি সংগঠনের তথ্যমতে- ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে চলতি মাসের ৪ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়া বড় অংশই কৃষক। শহরের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বিশেষ করে ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।

বজ্রনিরোধক যন্ত্র ও দণ্ড স্থাপনের বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বজ্রপাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, দেশে বছরে বজ্রপাতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। কারণ প্রত্যেক নাগরিকের জীবন মূল্যবান, সেই মূল্যবান জীবনরক্ষায় নিয়মিত কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরামর্শে বজ্রপাত নিরোধক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বজ্রপাত শুরু হওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট আগেই সতর্কতামূলক বার্তা দেবে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’। এ সময়ের মধ্যে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবে বলে জানান সচিব কামরুল হাসান।

এবি/ওজি

কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে নষ্ট রাজনীতি

কিশোর গ্যাংয়ে এখন শুধু কিশোররাই নয়, জাড়িয়ে পড়ছে কিশোরীরাও। এ এক ক্ষমতার নেশা, পাড়া-মহল্লায় দাপিয়ে

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সফল প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

২০১৪ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদ (১০ বছর) অত্যন্ত সফলতার সাথে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ

১০০ দিনে ৫০০ অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা মন্ত্রীর

নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তাবায়নের পাশাপাশি দেশের ‘পরিবেশ রক্ষা’র বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিলো নতুন সরকারে। পরিবেশ দূষণ

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব

অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেও মাঠ পর্যায়ে কোনো সুফল মেলেনি। উল্টো বেশি ভাড়া
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোংলায় বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায় ও মোনাজাত

দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে, কমতে পারে রাতের

বিশ্বমঞ্চে বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশি জিন্নাত ফেরদৌস

যুক্তরাষ্ট্র টিকটক নিষিদ্ধ এখন শুধু বাইডেনের সইয়ের অপেক্ষা

ইসরায়েলের গভীরে হামলা হিজবুল্লাহর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান?

ঢাকার বাতাস আজও 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর'

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার এশিয়া: জাতিসংঘ

জিবুতিতে নৌকাডুবে ১৬ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জে বোমা বিস্ফোরণে বাবা-ছেলে আহত

হিট স্ট্রোকে পুলিশসহ চার দিনে ৩৩ জনের মৃত্যু

গাজায় এক কবর থেকেই উঠে আসছে শত শত লাশ

আড়াই বছরে নেই রিজার্ভের ২৩ বিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো প্লেন বিধ্বস্ত, দুজনের মৃত্যুর শঙ্কা

যুদ্ধের মধ্যেই রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আটক

আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

লোহিত সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিহত ৩৩

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর, মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের স্মরণ

২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা