সমুদ্র নিয়ে কোনো সময়েই মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। আর যদি সাগরতলের আশ্চর্য জগৎ হয়, তাহলেতো আগ্রহের মাত্রার শেষ নেই। সেই মাত্রায় সরাসরি সাগরতলের প্রাণীর দেখা পেলে বিস্ময়ে চোখ যেন কপালে উঠে যায়! কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে বঙ্গোপসাগরের মাছ, জীবন্ত জীবজন্তু দেখে বিস্ময়ে চোখ যেন কপালে ওঠার দশা।
সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখা গেলো, বঙ্গোপসাগরের তলদেশের প্রায় ৩শ প্রজাতির মাছ ও জীবজন্তু অ্যাকুরিয়ামে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাগরতলের নাম না জানা হরেক প্রজাতির মাছ ও জীবজন্তু দেখতে ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও পর্যটকরা।
কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড যেন সাগরতলের এক আশ্চর্য জগৎ। বঙ্গোপসাগরের দূর্লভ মাছ-প্রাণী নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ফিশ ওয়ার্ল্ড। সত্যিই এই ফিশ ওয়ার্ল্ড যেন কক্সবাজারের বিস্ময়!
ফিশ ওয়ার্ল্ডের নিচতলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বিশাল এক সামুদ্রিক কচ্ছপের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। একটু এগোলেই বড় বড় ক্যাট ফিশ। আরেকটু সামনে বড় সামুদ্রিক কোরাল মাছের খুনসুঁটি। সামুদ্রিক ইল খাবি খাচ্ছে পানির নিচে। চিংড়ির খেলাও দেখা যাবে। আছে লাল কাঁকড়া। বিচিত্র ভঙ্গিতে খেলা দেখাচ্ছে জেলি ফিশ!
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের চারতলা ভবনের তিনতলাজুড়েই নান্দনিক শিল্পকর্ম সমৃদ্ধ ছোট-বড় শতাধিক অ্যাকুরিয়াম। বৈদ্যুতিক আলোয় ঝলমলে অ্যাকুরিয়ামের স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটছে হাঙর, কোরাল, পাঙাশ, মাইট্যা, কামিলা, রুপচাঁদা, ইলিশ, জেলি ফিশ, লবস্টারসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। সুড়ঙ্গের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে গেলে সেগুলোও যেনো পা মেলায়। অ্যাকুরিয়ামগুলোয় রাখা হয়েছে কৃত্রিম প্রবাল। সেই প্রবালের ফাঁকে ফাঁকেই নানা রং-বেরংয়ের মাছ সাঁতরে বেড়াচ্ছে।
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪০ প্রজাতির মাছ সামুদ্রিক। এছাড়া নোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণে বেড়ে ওঠা মাছ আছে ২০ ধরনের। আর মিঠা পানির আছে ৩০ প্রজাতির। প্রতিনিয়ত নতুন মাছ সংযোজন করা হচ্ছে। কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ওপর তৈরি করা এধরনের ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম বাংলাদেশে প্রথম।
রেডিয়েন্ট ওশ্যান রিসার্চ এন্ড এডুকেশন সেন্টার এ্যাকুরিয়াম ভিত্তিক আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের মাঝে এ্যাকুরিয়াম, সমুদ্র, সামুদ্রিক সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষা ও গবেষণা উইং “রেডিয়েন্ট ওশ্যান রিসার্চ এন্ড এডুকেশন সেন্টার” (রোরেক) এর মাধ্যমে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণে উৎসাহিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দক্ষ আগামী প্রজন্ম বিনির্মাণ এবং সমুদ্র ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতিকে জাগ্রত করার লক্ষে একগুচ্ছ প্যাকেজের ব্যবস্থা রয়েছে যেমন- এ্যাকুরিয়াম গাইডেড ট্যুর, সেলফ গাইডেড ট্যুর, ইনডোর- আউটডোর প্যাকেজ,রেগুলার প্যাকেজ, একাডেমিক প্যাকেজ, ওপেন ওশ্যাব এক্সপ্লোরেশন, ডে লং প্যাকেজ, থ্রি ডেইজ প্যাকেজ, উইকলি প্যাকেজ।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে প্রথম বিশ্বমানের সী এ্যাকুরিয়াম
শফিকুর রহমান চৌধুরী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, কক্সবাজার
বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র অবারিত সম্পদ ও শক্তির উৎস বাংলাদেশকে করে তুলেছে অপার সম্ভাবনার এক দেশ। শুধুমাত্র সমুদ্রের উপরিভাগের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের গভীরের অদেখা জগৎ ও সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র সম্পর্কে জানতে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড পর্যটনের এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে।যেখানে ইকোট্যুরিজম বান্ধব নির্মল বিনোদনের পাশাপাশি সমুদ্র শিক্ষার এক দারুণ সুযোগ রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণীর সমাহার। তিনি বলেন, এসব মাছ কোনটাই দেশের বাইরের নয়।এর মধ্যে আছে হরেক রকমের অক্টোপাস শামুক হাঙ্গর কাঁকড়া চিংড়ি জেলিফিশসহ দেশের জানা-অজানা অনেক আকর্ষণীয় মাছ রয়েছে। দেশের সমুদ্রকে সবার সামনে তুলে ধরতে এর সবই বঙ্গোপসাগর থেকে সংগ্রহ করা। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে লোনা পানির নতুন নতুন বিচিত্র প্রজাতির মাছ। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একুরিয়ামটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভ্রমণপিপাসু সমুদ্র প্রেমের শিক্ষার্থী ও সাধারণ পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহের পরিণত হয়েছে। এখানে প্রবেশমুল্য জনপ্রতি ৩০০টাকা। এছাড়া লম্বায় ৩ ফুটের দৈর্ঘ্যের কম শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে।
লেখক: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সাপ্তাহিক খোঁজখবর, অর্থ সম্পাদক, গ্লোবাল এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।
আমার বার্তা/এমই