একটি রাজনৈতিক দল হয়ে বিএনপি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধে পক্ষে না বলে আরও একবার নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন মির্জা ফখরুল।
আওয়ামী লীগ এবং তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের কথা আর কি বলবো! দেশের সবচেয়ে পুরনো দল হওয়ার পরেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলেছে। তারা সমস্ত চরিত্রকে বিলীন করে দিয়ে একটা ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। ফলে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসাও নেই, আস্থাও নেই। আওয়ামী লীগের যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা ইনস্টিটিউশন নষ্ট করায় জড়িত তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত, পাশাপাশি দণ্ডও দেয়া উচিত।’
আওয়ামী লীগকে দণ্ড দেয়া এবং দল হিসেবে তাদের রাজনীতি করতে না দেয়া- এই বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলি, এ ব্যাপারে অনেক কথা বলতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে। এটা নিয়ে বাংলাদেশে অনেক কথাবার্তা চলছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আগেও বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান এবং অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান সাহেবও বলেছেন যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। কিন্তু যদি সেই রাজনৈতিক দল কোনো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দেয়ার জন্য দায়ী হয় তাহলে নিশ্চয়ই তাদের শাস্তি পেতে হবে।
আমি একটা রাজনৈতিক দল, আরেকটা রাজনৈতিক দলকে ব্যান করতে যাবো কেন? কিন্তু যদি সেই পার্টি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, প্রতারণা করে, গণহত্যা করে তাহলে অবশ্যই তার বিচার হতে হবে।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা এ ব্যাপারে জনগণের মাঝে যে আস্থার অভাব রয়েছে, সে প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারিতেই হবে। তবে যে অবিশ্বাস মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে সে অবিশ্বাস দূর করে বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে, সেভাবে এগুতে হবে।’
ড. ইউনূসও নির্বাচন করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে তিনি খুব দৃঢ়চিত্তে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর, এটা আপনারা নিশ্চিত হয়ে গেছেন। আমার দৃষ্টি থেকে যতটুকু দেখি, রাজনৈতিক দলগুলো জানে যে, নির্বাচন হবে। সেনাবাহিনীর অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও জানে যে, নির্বাচন হবে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশে সহজ সরল ব্যাপার নাই। এটা সবসময় একটা জটিলতার মধ্যে পড়েছে। যেকোনো কারণেই হোক আমাদের শত্রুরা বাংলাদেশকে একটা অস্থির অবস্থার মধ্যে রাখতে চেয়েছে।’
আওয়ামী লীগ বিভাজনের রাজনীতি তৈরি করেছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আনফরচুনেটলি ১৫ বছরের রাজনৈতিক যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিভাজনের ফলে রাজনৈতিক দল, মিডিয়া কিংবা সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সে অবিশ্বাসটাকে দূর করা দরকার। এখন মানুষের মধ্যে আস্থা স্থাপন করা দরকার। আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি এবং আপনার নেতার প্রতি রাজনৈতিক দলের প্রতি, তার নিজের প্রতি, সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি করেই আপনাকে সামনে এগুতে হবে। এটা কিন্তু খুব বড় কাজ।’
‘নির্বাচন নিয়ে বিপরীত দিকে হাঁটছে এনসিপি-জামায়াত’- এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব হচ্ছে রাজনৈতিক দলের ন্যাচার। দল সবসময় একটা বার্গেইন করতে থাকে। বার্গেইন করে সেরাটা আনতে চায়। এটা আমি কোনো অপরাধ মনে করি না। যদি কোনো দল বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ম্যানুপুলেশন করে যদি কিছু আনতে পারে, এটা সেই দলের যোগ্যতা। দলগুলো যে জিনিসগুলো নিয়ে আবদার করছে, এটাকে আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা খুব কঠিন ব্যাপার নয়। এরইমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেকটা জায়গা তৈরি হয়েছে যেখানে আরো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’
রাজনৈতিক দলকে সফরে এনে ড. ইউনূস এক টেবিলে আলোচনা করতে চাইছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিউইয়র্কে আসার পর ড. ইউনূসের সঙ্গে একটা ইভেন্টে দেখা হয়েছে। তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কথা হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে আসার পর আজই কথা হলো। পাশাপাশি রুম হওয়ায় একমাত্র এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’
দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। প্রত্যেক দলের নিজস্ব নীতি রয়েছে। সব সময় একইরকম হবে তা নয়। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক খারাপ হয়নি। দল করতে হলে সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে।’
ভারতীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনি যদি চান এই লোকটাকে মিডিয়ার মাধ্যমে ঝামেলায় ফেলবেন, সেটা ইচ্ছা করলেই পারেন। কিন্তু আমার সঙ্গে তাদের (এই সময় পত্রিকার) সেরকম কোনো কথাই হয়নি। আমি পড়েছি (প্রকাশিত সাক্ষাৎকার)। আমি তো কিছুদিন আগে বলেছিই যে, আওয়ামী লীগের তার কাজের জন্য বিচার হওয়া উচিৎ। জাতীয় পার্টির কথা বলেছি যে, তারা যদি কোনো অপরাদের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। কিন্তু জাতীয় পার্টিকে ব্যান করে দেয়া- এটা আমি কখনো বলিনি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকের রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘যেই মুহূর্তে সব লিগ্যাল সমস্যাগুলো শেষ হবে, যেই মুহূর্তে আমরা মনে করবো, রাজনৈতিকভাবে সময় তৈরি হয়েছে তখনই তারেক রহমান দেশে আসবেন। তিনি এখন জাতীয় নেতা। তার সমস্ত নিরাপত্তা আমাদের দিতে হবে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও দল যখন মনে করবে তিনি আসতে পারেন তখন তিনি ফিরে আসবেন।’
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা।
আমার বার্তা/এমই