দেশের গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা বহুবিধ পুষ্টি উন্নয়নে দেশীয় ফলের কোন বিকল্প নেই। দেশীয় ফলের সর্বাধিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয় যগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে দেশীয় ফলের উৎপাদন বিপনন, সংরক্ষণ, মাননিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানী বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এই সফলতাকে আরো সম্প্রসারিত করতে গত সপ্তাহের ১৯ থেকে ২১ জুন ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় ফল মেলা ঢাকার খামারবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। "দেশীয় ফল বেশী খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই" এমন স্লোগানের মধ্য দিয়ে আয়োজিত জাতীয় ফল মেলার শুভ উদ্ভোধন করেছেন কৃষি উপদেষ্টা লেঃ জেঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবঃ) এ সময়ে কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান উপস্থিত ছিলেন।
দেশব্যাপী - ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত টেকসই বাংলাদেশ গড়তে কৃষি মন্ত্রনালয়ের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা লেঃ জেঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশনায় কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এর সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধানে কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে ১৮ টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এরই অংশ হিসেবে এ বছর জাতীয় ফল মেলা সফল ভাবে শেষ হয়েছে। তিন দিন ব্যাপী জাতীয় এ ফল মেলায় ২৬ টি সরকারী- ৪৯ টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অংশ দিয়েছে। মেলায় মোট ৭৫ টি স্টলে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ফলের চাষ, প্রদর্শনী, বিক্রয় ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বানিজ্য করনে দেশীয় ফলের বর্তমান অবস্থা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিতে একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার ও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদান উল্লাহ মিয়ান তার মন্ত্রনালয় নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান সমূহের পেশাগত কার্যক্রম সার্বক্ষনিক তত্ত্ববধান করছেন। এর ফলে এ বছর সফলভাবে ফলের উৎপাদন, বিপনন, সংরক্ষন, মান নিয়ন্ত্রন, নিবিড় গবেষনা ও রপ্তানী খাতের ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে । ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম- এ স¤র্পকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
কৃষি মন্ত্রনালয় নিয়ন্ত্রিত কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠান - ৬২ প্রজাতির ফলের ১০৪টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্লাজম সেন্টার ২৫ প্রজাতির ফলের ৮৪টি উচ্চ ফলনশীল জাতসহ এসব ফলের দ্রুত প্রজনন ও চাষাবাদে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সব প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর
এবং দেশে প্রায় ১২ নাসারী মালিকদের এক শক্তিশালী কার্যক্রমে দেশে ফল উৎপাদনে অনন্য ভূমিকা রাখছে। দেশীয় ফলের পাশাপাশি এ দেশে বিদেশী ফল চাষের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবিত হচ্ছে।
দেশে মূলত আম কাঁঠাল কলা, আনরস, পেঁপে, পেয়ারা সাধারনত বেশী উৎপাদিত হয়। এ সব ফলের বাইরে জাম, লিচু, কুল, কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা ,সফেদা, লটকন, তরমুজ উৎপাদিত হচ্ছে। সারা দেশে কমবেশী ফল উৎপাদন হলেও রাজশাহী, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ দিনাজপুর পিরোজপুর ঝালকাঠি অঞ্চলে দেশীয় ফল বেশী উৎপন্ন হয়। তবে কাঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় আম ও পেয়ারায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বর্তমানে এ সব ফলের রপ্তানী চাহিদা বাড়ছে। এ সব ফল সংরক্ষনে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে কৃষি মন্ত্রনালয় বাস্তবমূখী নানা পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এ বাস্তবায়নে-কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।
গত ১ বছরে কষি মন্ত্রনালয় দেশীয় ফলকে অর্থকরী ফসলে রূপ দিতে তথা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে কৃষি সচিব এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রনালয়ের সাথে কার্যকরী সমন্বয় করছেন। ফলে আম, কাঠাল, লেবু, ড্রাগন, পেয়ারা, নারকেল সহ ৩০ ধরনের ফল রপ্তানী হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে বিভিন্ন দেশ-তথা জাপান, কানাডা, হংকং, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এ সব ফল রপ্তানী হচ্ছে । এ রপ্তানি ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আম রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৩৬ দেশে। ইতিমধ্যে ২৫ দেশে ৬০০ টন আম রপ্তানী হলেও- এ রপ্তানী চলতি মৌসুমে ১২০০ টনে ছড়িয়ে যেতে পারে। কৃষি মন্ত্রনালয় এ ক্ষেত্রে সার্বক্ষনিক কাজ করছে। এ রপ্তানী আরো সহজ করতে বিশেষ করতে করে আকাশ পথের ভাড়া যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনতে কৃষি মন্ত্রনালয় কাজ করছে।
কৃষি মন্ত্রনালয়-দেশীয় ফলকে বৈদেশিক মুদ্রা অজনের একটি অন্যতম খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সম্ভব যা যা করণীয় তা বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ডিএডিসি, ডি এ ই ও কৃষি বিপনন অধিদপ্তর সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কাজ কৃষি সচিবের নেতৃত্বে কাজ করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ২০ জেলায় রপ্তানীযোগ্য ফল বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তুলতে সক্ষম হবে কৃষি মন্ত্রনালয়।
“এ বছরে জাতীয় ফল মেলায়-কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা-পার্টনার, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ঐঙজঞঊঢ ঋঙটঘউঅঞওঙঘ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট, মশরুম উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি মন্ত্রনালয়কে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছে। কৃষি উপদেষ্টা লেঃ জেঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধরীর নেতৃত্বে কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এর ইতিবাচক তত্ত্ববধানে এ কার্যক্রম অব্যহত থাকলে দেশীয় ফল উৎপাদন খাত থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে” এমনটাই প্রত্যাশা করছে এদেশের দেশ প্রেমিক নাগরিক সমাজ।
আমার বার্তা/এমই