বিশ্বের যে কোনো দেশে গেলে পাসপোর্ট আর ভিসা লাগবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, কম্বোডিয়া যেতে অনেক ক্ষেত্রে কিছুই লাগে না। না লাগে পাসপোর্ট, না লাগে ভিসা। তবে এই সুযোগ সবার জন্য নয়। দালালদের মাধ্যমে যারা কম্বোডিয়াতে বিক্রি হন শুধু তারাই পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া যেতে পারেন দেশটিতে। অবৈধ পথে পার্শ^বর্তী দেশ ভারত হয়ে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে দালালরা নিয়ে যায় কম্বোডিয়াতে। তবে অবৈধভাবে দেশ ত্যাগের বিষয়টি সীমান্তে কঠোর নজরদারির অভাব বলে মন্তব্য করেছেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল হাই।
এদিকে সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশির কোনোভাবেই মুক্তি মেলে না। তবে এক উপায়ে তাদের (প্রতারক) হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিন জন বাংলাদেশিকে দেশ থেকে তাদের কাছে এনে দিতে পারলে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
থাইল্যান্ডের পাতায়াতে অবস্থান করে যোগাযোগ করা হয় কম্বোডিয়াতে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগির সাথে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কম্বোডিয়াতে অনেকগুলো প্রতারক চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট আছে। সম্প্রতি এই সিন্ডিকেটের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় প্রধান হলো সরোয়ার। এরপরে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কামাল ওরফে কুত্তা কামাল, রাজু এবং রাসেল। এদের ছাড়াও আরো অনেকে আছে।
কম্বোডিয়া গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন মোবাশে^র আলী। ব্যাংককের পাতায়াতে অবস্থান করে অপর এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ১৫-২০ জন বাংলাদেশি এই পাচার চক্রের সদস্য। তারা বাংলাদেশি দালালদের সহায়তায় কম্বোডিয়ায় বাঙালিদের এনে সাইবার স্ক্যাম সেন্টারে বিক্রি করে। এখানে এমন অনেক লোক আছে যারা এখনও বন্দি। বের হয়ে আসতে পারছে না। রোমহর্ষক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি দালাল আমাকে একটা চাইনিজ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। সেই কোম্পানি কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তারা বন্ধ করার আগে আমাকে অন্য আরেকটি চাইনিজ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে চাইনিজরা। বাংলাদেশি দালালকে বললাম, আমি দেশে যেতে চাই, তারা দিচ্ছে না। তারা শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে দুই থেকে তিন জনকে এনে দিতে হবে অথবা ৫ হাজার ডলার দিতে হবে।
তিনি জানান, নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই আহত হচ্ছেন। কম্বোডিয়ার প্রভাবশালীদের সঙ্গে চাইনিজ এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক থাকায় মৃত্যুর পর দুর্ঘটনাজনিত বা আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়। হত্যার ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কম্বোডিয়ায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জানান, ‘এখানকার পরিস্থিতি ভয়ংকর। তারা এক হাজার ডলার ও কম্পিউটারভিত্তিক চাকরির টোপ ফেলে বাংলাদেশিদের এখানে নিয়ে আসে। কম্বোডিয়ায় আনার জন্য তারা কয়েক হাজার ডলার নেয়। এরপর এ লোকগুলোকে তারা দুই থেকে তিন হাজার ডলারে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে বিক্রি করে দেয়। এসব ক্যাসিনোতে এ লোকগুলো কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য আটকা পড়েন। তাদের ওপর নৃশংস অত্যাচারও চালানো হয়। যদি আপনি ভেবে অবাক হচ্ছেন এ বাংলাদেশিরা কেন কম্বোডিয়ার পুলিশের কাছে যাচ্ছে না, তাহলে আপনার উচিত আল জাজিরা’র ডকুমেন্টারি ‘ফোর্সড টু স্ক্যাম: কম্বোডিয়া'স সাইবার সেøভস’ দেখা। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন, কেন পুলিশের কাছে গেলে এ ব্যক্তিদের পরিণতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ দেশটির পুলিশদের এ স্ক্যামারদের সঙ্গে হাত রয়েছে।
থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল হাই আমার বার্তাকে বলেন, ঘরের দরজা যদি শক্ত হয় তাহলে চোর প্রবেশ করতে পারে না। ক্ষেতের বেড়া যদি মজবুত হয় তাহলে গরু-ছাগলে ক্ষেত নষ্ট করতে পারে না। ঠিক সীমান্ত এলাকা যদি কঠোর হয় তাহলে কেও অবৈধভাবে সীমান্ত ত্যাগ করতে পাারে না। আশ্চর্যের বিষয় হলো কোনো প্রকার ভিসা ছাড়া প্রবেশ করা যায় কম্বোডিয়াতে। অনেক ক্ষেত্রে পাসপোর্টও লাগে না।
মোহাম্মদ আব্দুল হাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ অধিক বেতনের লোভে যোগাযোগ করেন দালালের সাথে। দালালরা ভারতে ভিসা নিয়ে প্রথমে ভারতে প্রবেশ করান। পরে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করান কম্বোডিয়াতে। অনেক ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আর ভিসাও লাগে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করে। পরে মায়ানমার দিয়ে কম্বোডিয়া প্রবেশ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আমার বার্তা/জেএইচ