* ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা কমাতে হবে ৪৩ শতাংশ, না হলে বিশ্বজুড়ে আরও খরা, বনে আগুন এবং বন্যার প্রধান কারণ হয়ে উঠবে তাপমাত্রা
* ১২৫টি দেশের এক লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা গেছে ৮৯ ভাগই সরকার দ্বারা শক্তিশালী জলবায়ু ব্যবস্থা চায়
বিশ্বকে বাঁচাতে হাতে সময় আছে মাত্র দুই বছর। কথাটা শোনার পরই কেমন যেন মনে হবে। বিশ্বের কি হয়েছে? কোন রোগে আক্রান্ত? কেনই বা দুই বছর পর আর বিশ্বেকে বাঁচানো যাবে না ইত্যাদি নানা প্রশ্ন দেখা দেবে মনে। তবে প্রশ্ন যাই দেখা দেক না কেন কথা কিন্তু সত্য। জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সাইমন স্টিল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি বড় সতর্ক বার্তা জারি করেছেন। জানিয়েছিলেন যে, জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিশ্বের হাতে মাত্র দুই বছর বাকি আছে। এসময় বিশ্বের দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের জলবায়ু পরিকল্পনাগুলোকে জরুরিভাবে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে যে প্রতিটি দেশকে একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে।
জলবায়ু জরিপে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাস ছিল সর্বকালের সবচেয়ে উষ্ণ মাস। গত বছরের জুন মাসের পর এটি টানা দশম মাসে নতুন তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। এমনটাই বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু সংস্থা। সংস্থাটির দাবি, এল নিনো এবং মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবের কারণে এই দুর্ভোগ সইতে হয়েছে মানব সভ্যতাকে এবং ভবিষ্যতে আরও সহ্য করতে হবে।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে যে, মার্চ মাসে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৮৫০-১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রার থেকে ১.৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। পৃথিবীর বৈশ্বিক পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের গড়ের তুলনায় প্রায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ১২৫,০০০ বছরে সাম্প্রতিক বরফ যুগের আগে কখনও দেখা যায়নি। আর উষ্ণতা যাতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই সীমাবদ্ধ করা যায়, তার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে। আর না হলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই বিশ্বজুড়ে আরও খরা, বনে আগুন এবং বন্যার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস, প্রাথমিকভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেনের ঘনত্ব দ্রুত বৃদ্ধির কারণে ঘটে।
এ প্রসঙ্গে কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসর ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেছেন, এই উদ্বেগজনক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো কমিয়ে আনা জরুরি।
লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে সাইমন স্টিল বলেছেন যে, পৃথিবীকে রক্ষা করতে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর সুযোগ আমাদের হাতে এখনও রয়েছে। তবে তার জন্য আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকে বাঁচাতে হাতে সময় মাত্র ২ বছর। আপনি যদি প্রশ্ন করেন কার হাতে এই দু’বছর সময়? এর উত্তর হলো, আমাদের প্রত্যেকের হাতে এই সময়টাই বরাদ্দ। তার কথায়, গোটা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অনুভব করছেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ বিষয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার ডাক দিয়ে তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন এজেন্ডা থেকে জলবায়ু সংকটের মতো বিষয় সরে যাচ্ছে। যা চিন্তার বিষয় বলে দাবি সাইমনের। তিনি জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্ষতিকারক জ্বালানির পরিবর্তে গ্রিন এনার্জির পথ ধরে এগোতে হবে। পাশাপাশি, মূল কাজ ফেলে রাজনৈতিক নেতাদের একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পদ্ধতি এবার ছাড়তে হবে। কারও ঘাড়ে দোষ চাপানো কৌশল হতে পারে না। আবার জলবায়ুর বিষয়কে সরিয়ে রাখাও সংকটের সমাধান হতে পারে না। সকলকে এক জোট হয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটি দেশকে তাদের পরিকল্পনা পেশ করতে হবে। একইসঙ্গে জানান, তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিশ্বের ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে প্রতিটি জি ২০-এর সদস্যভুক্ত দেশগুলি। অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে ১২৫টি দেশের এক লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা গেছে, ৮৯ ভাগ মানুষই চায় সরকার দ্বারা শক্তিশালী জলবায়ু ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য, গোটা বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহ। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাস ছিল রেকর্ড উষ্ণতম মাস। পরপর ১০ মাস বিশ্বজুড়ে গড় তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। এহেন পরিস্থিতির মাঝে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিলের সতর্ক বার্তা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের বিষয় গোটা বিশ্বের কাছে।
আমার বার্তা/এমই