ঐক্যবদ্ধভাবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে একমত প্রকাশ করেছে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, অতীতের মতোই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটানোর প্রয়াসে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াত।
ইতিমধ্যে অবরোধ, হরতাল, সমাবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা মাঠেও নেমেছে। এদের মোকাবিলা করতে চৌদ্দ দলকে মাঠে নামতে হবে। গত ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশের মধ্য দিয়ে চৌদ্দ দল মাঠে রয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলেও নেতৃবৃন্দরা জানান।
আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)’কে। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ ছয়টি শরিক দল নৌকা প্রতীকে ভোট করার চিঠিও দিয়েছে। শরিকরা নৌকা প্রতীক নিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জয় নিশ্চিত করতে চায়। বর্তমানে এ নিয়ে সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া জমে উঠেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শরিকদলের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে চৌদ্দ দলের শরিকদের প্রত্যেক দল থেকে একজন করে বক্তব্য দেন। এতে চলমান রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ নানা সংকট নিয়ে তারা কথা বলেন।
বৈঠকে বক্তব্য শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌদ্দ দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তার এ আহ্বানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন শরিক দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আপাতত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসব বিদেশি শক্তি চাপ সৃষ্টি করবে তাদের মেনে নেয়া হবে না।
দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের কারও মাতব্বরি কাম্য নয়। আমাদের দেশের রাজনীতির সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করব। আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা এখন ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু না হলেও জোটের শরিকরা আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেশি অর্থাৎ ১০০টির মতো আসন চাইতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিকরা অনেক আগ থেকেই বলে আসছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে। এ নিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন শরিক দলগুলোর নেতারা। ওই সময়ে জোট নেত্রী বলেছেন, প্রত্যেক দলকে অন্তত একটি করে প্রার্থী দেব।
এর বাইরেও যদি কোনো দলে একাধিক প্রার্থী যোগ্য থাকেন, তাদেরও ১৪ দলীয় জোটে প্রার্থী দেয়া হবে। এতে অনেকটা আশ^স্ত হয়েছিলেন শরিক দলগুলোর নেতারা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার কার্যক্রম গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বিএনপি আসবে কি আসবে না, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নেব, না এককভাবে অংশগ্রহণ করব, সেটি সিদ্ধান্ত হবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপিকে সঙ্গে নিয়েও মহাজোট হতে পারে। আর বিএনপি না এলে জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি আলাদা প্রতীকে নির্বাচন করবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এক বৈঠকে জানান, ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। জোট শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন। শিগগিরই তিনি জোট নেতাদের ডাকবেন, তাদের সঙ্গে বসেই এটা ঠিক করবেন।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচন করবে, নাকি জোটগতভাবে করবে? জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোটে থাকবে কি না? নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তার দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সময়মতো সব জানানো হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগসহ ৮টি রাজনৈতিক দল। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেয়ার জন্য শনিবারই ছিল শেষ সময়। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জমা দিয়েছে-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি- জেপি (মঞ্জু), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও তরিকত ফেডারেশন। আর আলাদাভাবে ভোটে অংশ নিতে আবেদন করেছে জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ বলেছে, তারা জোটবদ্ধ ও এককভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করবে। আর সভাপতির স্বাক্ষরে তারা নমিনেশন দেবে। তবে আওয়ামী লীগ কোন কোন দলের সঙ্গে জোট করবে ইসিতে দেয়া চিঠিতে তা উল্লেখ করেনি। সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে করবে বলেছে। গণতন্ত্রী পার্টিও নৌকা প্রতীকে ভোট করবে বলে চিঠি দিয়েছে। জাপার দুটি চিঠি এসেছে। জিএম কাদের বলেছেন, তার সইয়ে মনোনয়ন হবে। আবার রওশন এরশাদ বলেছেন, তারা জোটে ভোট করবেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে ১৪ দলের ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই খুব দ্রুত ১৪ দলকে নির্বাচনী ইস্যুতে আসন বণ্টন করে প্রার্থীদের এখনই মাঠে নামিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সদুত্তর পাইনি। তবে ৩০টি আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার কাজ শুরু করেছি।
জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল বলেন, এবারও কেন্দ্রীয় ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরাও দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কাজটি করছি। পরে প্রার্থীদের তালিকা জোটনেত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি সব কিছু ঠিক করবেন। আমরা গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুটি অপশনই রেখেছিলাম। এবারও ইসিতে চিঠি দিয়ে সেটাই জানিয়ে দিয়েছি।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। তবে এখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
আমার বার্তা/ওজি