আওয়ামী লীগ নীরবেই প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে
প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হবে
চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ অনেকটা নীরবেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুরু করেছে।
সারা দেশে ৮টি বিভাগে ৮টি বুথে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমা নেয়া হবে। যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে।
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা নেয়া হবে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়নপত্রের দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা।
এখন আর কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। তবে অনেক মন্ত্রী আবার আলাপ-আলোচনার বিষয়টি একেবারে বাতিল করে দিচ্ছেন না। এ উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশি চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে দৃশ্যমান মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সংঘাতের পর থেকে বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগাদা দেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সেটি নাকচ করে দিয়েছেন।
আপাত দৃষ্টিতে এখন মনে হচ্ছে তারা উপেক্ষা করতে চাইছে বলেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত বেশ শক্ত ভাষাতেই বলেছেন যে, কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। তবে অনেক মন্ত্রী আবার আলাপ-আলোচনার বিষয়টি একেবারে বাতিল করে দিচ্ছেন না।
অপরদিকে বেশ কয়েক জেলার নেতাদের আগামী নির্বাচনের জন্য নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছে বলে তাদের দাবি। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই।
ঢাকায় সময় না দিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সময় দেন। জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তাদের কথা শোনেন। প্রতিটি ভোটারের কাছে ধরণা দেন। কারণ আগামী নির্বাচন হবে কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এমনকি কোনো ধরনের কোন্দল থাকলে সেটাও মিটিয়ে নেয়ার তাগাদা গিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে জোটের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগির একটা বিষয় থাকবে। সেদিকটাও মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পরিস্থিতি বুঝে শেষ মুহূর্তে হয়তো কয়েকটি আসনে রদবদল হতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে গত ১২ আগস্ট দলের বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই বার্তায় জোর দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক ঐক্যের ওপর।
অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পাবেন বা পেতে পারেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করতে বলেছেন। দলীয় সভাপতি বলেছেন, দলের উন্নয়ন প্রচার না করে এমপি কি করলো, সেটা নিয়ে লেগে থাকেন।
এতে দলের বদনাম হয়। আমি পরিস্কারভাবে বলছি, কাকে মনোনয়ন দেবো, সেটা জরিপ করে দেখছি। এখনো জরিপ চলছে। কিন্তু যারা এমপিদের বিরুদ্ধে বলে, দলের বিপক্ষে বলে, তাকে মনোনয়ন দেবো না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট এক জেলার তরুণ নেতা জানান, তাকে এরইমধ্যে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। দলের সংকেত পেয়ে রাত-দিন নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন তিনি। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। শেষ মুহূর্তেও যদি তাকে সরিয়ে দেয়া হয় তারপরও তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করে যাবেন বলে মন্তব্য করেন।
গত রোববার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোথায় দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা নেয়া হবে তা পরিদর্শন করেন এবং দেশের ৮টি বিভাগের মনোনয়নপত্র বিক্রি কোন রুমে হবে তা নিয়েও দিকনির্দেশনা দেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে।
পরে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি এবং জমা নেয়া হবে। নির্বাচনের সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমের দাম এবার বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
কবে থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা জানাব। নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু করেছি। আবার কেউ যদি অনলাইনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে চান, সেটারও সুযোগ আছে। পরে ওবায়দুল কাদের যেসব বুথে মনোনয়নপত্র বিক্রি হবে তা ঘুরে ঘুরে দেখেন। তিনি ৮টি বিভাগকে ৮টি ভাগে ভাগ করে দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াকে নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ জানান, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করবে। আমরা নির্বাচনী মাঠে নেমে যাব।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এখন নির্বাচনী আমেজ বইছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্রের দামও ঠিক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, আগামী জানুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানান, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। নির্বাচনী প্রস্তুতি আমাদের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ড যাকে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত দেবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এবি/ওজি