নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সুদক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি মন্ত্রণালয়ের কল্যাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌ পরিবহন খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি, মৎস্য সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় নিয়ে নদী রক্ষায় সার্বিক ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সার্বিক নির্দেশনায় নৌ-সেক্টর দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদী বন্দরের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির চাহিদা মেটাতে একবিংশ শতাব্দীর যুগোপযোগী, আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে।
সরকারের মেগা প্রকল্প হিসাবে পায়রা বন্দরে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি বাল্ক টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বিদ্যুৎ প্লান্ট, মডার্ন সিটি, বিমান বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ ১৯টি কম্পোনেন্টের কাজ চলমান রয়েছে।
২০২৩ সনে পায়রা বন্দরকে একটি আধুনিক বন্দর এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের ও আটটি জাহাজের উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল, ৬-লেন সংযোগ সড়ক এবং সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এসব উন্নয়ন কাজের ফলে বন্দরটি পরিপূর্ণ সক্ষমতার সাথে কাজ করতে পারবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যার সুফল বাঙালি জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে।
ইতিমধ্যে এই বন্দরে ২৮৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং ১,০১৪ টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ আগমন করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৭৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপর অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং ব্যাপক সংখ্যক জাহাজ এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে সরকার কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। সেখানে ১৬ মিটার গভীরতা এবং ৮,০০০ টিইইউ’স (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে।
মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নের প্রাথমিক কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে। মাতারবাড়ী বন্দর জেটিতে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বপ্রথম ২০০মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১০ মিটার প্রস্থের জাহাজ ভিড়েছে। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার ফলে জাহাজে কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়বে ও পণ্য পরিবহন খরচ কমবে। ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম কমে সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে; দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করা হবে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল চালু করার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক দুর্যোগ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একটু পিছিয়ে আছে। বে-টার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল যেটি চট্টগ্রাম বন্দর করবে সেটির ডিটেইল প্লান তৈরি হচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে বে-টার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল যেটি চট্টগ্রাম বন্দর করবে সেটি চালু করা হবে।
নৌপথ খননে ৩৮টি ড্রেজার সংযোজিত হয়ে ৪৫টিতে উন্নিতসহ ২০০ এর অধিক জলযান সংযোজিত হয়েছে। আরো ৩৫টি বিশেষায়িত ড্রেজারসহ ১০০টি জলযান আগামী ২ বছরে সংযোজিত হবে। ফেরি পারাপারের লক্ষ্যে ১৭টি ফেরি নির্মাণ করা হয়েছে। নৌপথ খননে আরও বেশি ড্রেজার সংগ্রহ এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিংকার্যক্রম চলমান রয়েছে।
১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কার্যক্রম, নদী তীর দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর পুনঃদখলরোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে নদীর উভয় তীরে ওয়াকওয়ে, পাকা সিঁড়ি, বসার বেঞ্চ, ইকোপার্ক নির্মাণ, নদীর পাড় বাঁধাই, গাইড ওয়াল নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা এবং দখল ও দূষণরোধে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠন করা হয়েছে।
পানগাঁওয়ে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের গতিশীলতা আনয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মেরিটাইম সেক্টরে মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও পাবনায় চারটি নতুন মেরিন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে; আরও ছয়টি জাহাজ সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে এবং ঢাকার মতিঝিলে একটি ২৫তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশি জাহাজে কর্মরত নাবিকদের জন্য মেশিন রিডেবল পরিচয়পত্র ‘আইডি কার্ড’ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে নৌযান দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে নৌযানের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি উন্নত এবং নৌযানের ডিজাইন অনুমোদন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন ও অনলাইনে করা হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরসহ নতুন দশটি স্থলবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গবন্ধু ও নদীমাতৃক বাংলাদেশ’; ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও সুনীল অর্থনীতি’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু ঃ শাশ^ত বাংলার প্রতিরূপ’ সেমিনারের আয়োজন করেছে।
বিআইডব্লিউটিএ
নৌপথ খননে ৩৮টি ড্রেজার সংযোজিত হয়ে ৪৫টিতে উন্নীতসহ ২০০ এর অধিক জলযান সংযোজিত হয়েছে। আরো ৩৫টি বিশেষায়িত ড্রেজারসহ ১০০টি জলযান আগামী ২ বছরে সংযোজিত হবে। প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ চলমান রয়েছে। নদী তীরের জায়গা অবৈধ দখল ও দূষণরোধে ( বিআইডব্লিউটিএ) ২০১০ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা শহরের চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু এবং তুরাগ নদীর তীরভূমি হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ২২,৫৩৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ৮৪১.৪৯ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখিত এলাকায় ভরাটকৃত ২ লক্ষ ঘনমিটার বালু/মাটি/রাবিশ এবং ১.৫ লক্ষ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। নদী তীর দখলের অভিযোগে বিভিন্ন জন থেকে ৩৮,৩৬,৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তীরভূমি দখল করে রাখা পণ্য নিলামের মাধ্যমে ১৮,৭২,৪৮,০০০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর উচ্ছেদকৃত তীরভূমিতে ‘সীমানা পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৭,৫৬২টি সীমানা পিলার নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৪টি ভারী জেটি এবং তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। এ পর্যন্ত ৪,৪৭৯টি সীমানা পিলার নির্মিত হয়েছে; ১,১০১টির কাজ চলমান এবং ১,৯৮২টির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।৬টি জেটি নির্মিত হয়েছে; ৮টি জেটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে; ৪২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণাধীন। দু’টি ইকোপার্ক নির্মিত হয়েছে; একটির নির্মাণ কাজ চলমান। সন্দ্বীপে ‘দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি’ উদ্বোধন করা হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ‘বাংলাদেশ হতে ভারতে নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম পরিবহন/রপ্তানি’ শুরু হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌ পথের ৩,৫০০ কিমি উন্নয়ন করে সব মৌসুমে প্রায় ৬,৫০০ কিমি নৌপথ সচল রাখা যাচ্ছে। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে নতুন দুটি কার্গো পোর্ট, একটি যাত্রী টার্মিনাল, তিনটি পুরাতন বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় ১৫টি লঞ্চ ঘাটের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজ শুরু হবে।
নতুন ১১টি ফেরি রুট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া আরিচা-কাজিরহাট এবং পাবনা-রাজবাড়ীর মধ্যে ইতিমধ্যে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। নগরবাড়ী, বাঘাবাড়ি, নোয়াপাড়া নদী বন্দর উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। হাইড্রোগ্রাফিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডিজিপিএস স্টেশনের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
কোভিডকালীন, প্রায় ২০ হাজার নৌ শ্রমিককে খাদ্য ভাতাসহ খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় দুই হাজার নৌ শ্রমিককে সরকারের এককালীন ২৫০০/- নগদ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। মাদারীপুর শীপ পার্সোনেল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।যানবাহন পারাপারে নাজিরগঞ্জ, পাবনা-ধাওয়াপাড়া, রাজবাড়ী ফেরিরুট এবং কাজীরহাট, পাবনা-আরিচা, মানিকগঞ্জ ফেরিরুট চালুকরণ।
নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, আরিচা ও শীমুলিয়ায় ড্রেজার বেইজসহ অফিসার্স ডরমেটরী নির্মাণ।প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাত্রী পারাপার ও মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী এলাকায় বিভিন্ন ঘাট পয়েন্ট সৃষ্টির মাধ্যমে জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধাদি প্রদান। সদরঘাট ২য় টার্মিনাল নির্মাণ, সদরঘাট টার্মিনালের এক্সটেনশন এবং সদরঘাট থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণসহ ঢাকা নদী বন্দর আধুনিকায়ন।
চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নগরবাড়ী নদী বন্দর আধুনিকায়ন। চিলমারী নদী বন্দর আধুনিকায়ন। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট নৌরুট আধুনিকায়ন। নারায়ণগঞ্জসহ খানপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আশুগঞ্জ এলকায় কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ও বাল্ক কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ।
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ।
এবি/ওসমান