দখলে-দূষণে মৃতপ্রায় ইছামতি নদীর প্রাণ ফিরাতে ১ হাজার ৭৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত যেন শুরু হতে পারে এনিয়ে খোদ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুরও আগ্রহ রয়েছে। কারণ এই প্রকল্প এলাকাটি হচ্ছে রাষ্ট্রপতির নিজ জেলা পাবনায়। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার এই প্রকল্পটি প্রাক মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)-এর সভায় উত্থাপিত হবে বলে জানা গেছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ‘পাবনা জেলার ইছামতি পুনরুজ্জীবিতকরণ’ প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে। প্রকল্পের শুরু এবং সমাপ্তের মেয়াদ ধরা হয়েছে- জুলাই ২০২৩ হতে জুন ২০২৬ সাল। প্রকল্পটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী, পাবনা সদর, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে যাবে। ইছামতি নদী মূলত এসব জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বৃ-শালিকা নামক স্থানে হুরাসাগর নদীতে পতিত হয়েছে।পাবনা শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই সুপ্রাচীন ইছামতি নদী একসময় খরোস্রোতা ছিল। কিন্ত দখল ও দূষণের কবলে পড়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মূল ডিপিপি’র অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট অংশ পাবনা সেচকার্যের প্রধান খাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইছামতি নদীর সর্বোচ্চ প্রস্থ ১৪০ মিটার, সর্বনিম্ন প্রস্থ ৩০ মিটার এবং গড় প্রস্থ ১২০ মিটার রয়েছে।
বর্তমানে এই নদীর বিভিন্নস্থানে কচুরীপানা, জঙ্গল ও আবর্জনায় ভরে রয়েছে। এই নদীর পানি চরমভাবে দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ও মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। যার ফলে পাবনাবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির সাথে বর্জ্য ও মাটি জমা হওয়ায় নদীটি ভরাট হয়ে গেছে।
এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে ইছামতি নদীর জরিপ কাজ পরিচালনা করে ২৮৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫১ জনে। বর্তমানে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই অবস্থা চলমান থাকলে অচিরেই এই নদীটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এরকম নাজুক পরিস্থিতির কবল থেকে ইছামতি নদীকে উদ্ধার করতেই ইছামতি পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- এটি বাস্তবায়ন হলে ইছামতি ফিরে পাবে তার পূর্ব ঐতিহ্য। সেইসাথে বৃদ্ধি পাবে পাবনা জেলা শহরের সৌন্দর্য। এছাড়াও আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ পরিবেশের উন্নয়ন সাধিত হবে। প্রকল্পের মধ্যে শহর অংশে সৌন্দর্য বর্ধন ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের কথাও বলা আছে। বিশেষ করে মৎস্য চাষ এবং সেচ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছর জুড়েই ইছামতি নদীতে পানি থাকবে। এতে করে নৌ চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ঘটবে। জানা যায়, ভরাট হয়ে যাওয়া ইছামতি নদীকে পুনঃখননের মাধ্যমে সচল করে এই নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনা হবে। এক্ষেত্রে পদ্মা ও যমুনা নদীর সাথে ইছামতি নদীর সংযোগ ঘটানো হবে।
ইছামতি পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে- এই নদী ও সংযোগ খালের উপর বাঁধ অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ডাম্পিং বেড প্রস্তুতকরণ, ৩৪ কিলোমিটার ইছামতি নদী পুনঃখনন, ইছামতি নদীর সংযোগ খাল পুনঃখনন, ইছামতি নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। এছাড়াও সুতিখালি নদী পুনঃখনন কাজ, ভারারা খাল পুনঃখনন কাজ, ২২টি ব্রিজ অপসারণ, নেভিগেশন লকসহ রামচন্দ্রপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণ, ভারারা ও সুতিখালী রেগুলেটর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, ইছামতি নদীর উভয় তীরে ড্রেন নির্মাণ, ২৩টি ব্রিজ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, ইছামতি নদীর মধ্যবর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘাটলা নির্মাণ, এই নদীর উভয় তীরে ওয়াক ওয়ে ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ, ইছামতি নদী ও সংযোগ খাল মেইনটেনেন্স, ড্রেজিং এবং বৃক্ষরোপণ করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এস, এম, শহিদুল ইসলাম জানান, ইছামতি নদীতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে ইছামতি নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিরও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। রাজশাহী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আগামী রোববার ইছামতি পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পটি প্রাক মূল্যায়ন কমিটি’র সভায় উত্থাপিত হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপশি সব শ্রেণির মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যা অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এবি/ জেডআর