ই-পেপার রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

অবৈধভাবে আসছে-যাচ্ছে স্বর্ণ

স্বর্ণ চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের গডফাদাররা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে
উমর হাদী
প্রিন্ট ভার্সন
২৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৭
সংগৃহীত

  • দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবে বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে ১০ গডফাদার
  • জড়িত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমসসহ বিমানবন্দরে কর্মরত অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী
  • মামলা সংক্রান্ত আইনি জটিলতার কারণে জব্দকৃত স্বর্ণ ১২ বছর ধরে ব্যাংকে পড়ে আছে

স্বর্ণ চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের নেপথ্যের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য প্রমাণ থাকলেও রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। বার বার শুধু চুনোপুঁটিরাই ধরা পড়ছেন।

গডফাদাররা এতটাই প্রভাবশালী যে, বিভিন্ন সময় চোরাচালানের ঘটনার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাদের পরিচয় জানার পরে তদন্তকারী কর্মকর্তারাই থমকে যান। এমনটি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। আবার অনেক সময় তদন্তকারীদের ম্যানেজ করে আড়ালেই থাকছেন সিন্ডিকেটের মূল হোতারা।

বলছেন, একাধিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে স্বর্ণ আনা এবং পরবর্তীতে সেগুলো পাচার করা ঠেকাতে হলে এমন সব শিল্পপতি ও প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন যাদের নাম শুনলেই মানুষ আঁতকে উঠবে। এরা এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের হাতের ইশারায় বড় বড় কর্মকর্তাদের রদবদল, পদোন্নতি ও চাকরিচ্যুতি হতে পারে।

জানা যায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক বেসরকারি এয়ারলাইন্সে কতিপয় ব্যক্তিরা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য পেয়ে শঙ্কিত হয়ে যান অনেকেই।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন এবং কাস্টমসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই বিমানগুলোতে চলছে স্বর্ণ চোরাচালান। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৬৫ টন স্বর্ণ দেশে প্রবেশ করছে।

তবে ছোট ছোট স্বর্ণের চালান একের পর এক ধরাও পড়ছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৭ মণ স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। জব্দকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রয়েছে। এর বাইরে আরও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাই পথে দেশে এসেছে এবং প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়েছে।

ওই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আনতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার যোগানদাতারা হলেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে পর্দার আড়ালেই থাকছেন গডফাদাররা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তন্মধ্যে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মীও রয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত ৩১৮টি মামলা হয়েছে। বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের ২৬০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ যোগানদাতারা থাকছে অধরা।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে প্রতি মাসেই স্বর্ণ দেশে প্রবেশ করছে। আবার এসব স্বর্ণের অধিকাংশই প্রতিবেশী দেশে পাচার হচ্ছে। স্বর্ণ চোরাচালানকারী সিন্ডিকেট দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে এসব স্বর্ণ। বিমানবন্দরগুলোর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও প্রতিবছর গড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টন স্বর্ণ চোরাই সিন্ডিকেট দেশে নিয়ে আসছে।

স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিমানবন্দরে মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে অবৈধভাবে যারা স্বর্ণ নিয়ে আসছেন তারা ধরা পড়ছে। জব্দ করা হচ্ছে স্বর্ণ।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে। তবে আগের চেয়ে এখন অনেক কমে আসছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশনের যারা জড়িত ছিলেন তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বসে নেই। স্বর্ণ পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোরভাবে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানির নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। এসব বিমানবন্দরে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী।

আছে শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা, এপিবিএন, কাস্টমস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আছে কথিত কঠোর নিরাপত্তা নজরদারি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান আগের চেয়ে এখন অনেক কমে আসছে।

আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে এবং সনাতন পদ্ধতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে স্বর্ণ নিয়ে আসলে কেউই পার পাচ্ছেন না। এতসব নিরাপত্তার মধ্যেও প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণের বড় বড় চালান আসছে।

মাঝে মধ্যে কিছু স্বর্ণ জব্দ করা হলেও বেশিরভাগই রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবৈধভাবে স্বর্ণ বহনকারীদের কেউ কেউ আটক হলেও নেপথ্যের গডফাদাররা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন।

এ অভিযোগ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানি ও পাচার করায় সরকার শুধু কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, বৈদেশিক মুদ্রাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

স্বর্ণ চোরাকারবারী গডফাদারদের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের তথ্য মতে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৯৪ কেজি ৯২২ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করেছে।

অথচ এ সময়ের মধ্যে ৫৩ টন স্বর্ণ অবৈধভাবে দেশে এসেছে। তবে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র বলছে, ২০২২ সালে দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসা ৫৩ মণ স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়েছে।

এ তিন বিমানবন্দরে ২০২০ সালে জব্দ করা হয়েছে ৭০ মণ, ২০২৩ সালে এপ্রিল পর্যন্ত ৩০ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। এসব স্বর্ণ অবৈধভাবে আমদানির সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় ৩২০টি মামলা হয়েছে। গত ২ বছরে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কারণে শাস্তি হয়েছে ২১৭ জনের এবং ১৭ জন চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে বছরে কি পরিমাণ স্বর্ণ অবৈধভাবে আসছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। তবে দেশে প্রতি বছর কি পরিমাণ স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির একজন কর্মকর্তা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, দেশে প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ টন নতুন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অবৈধ পন্থায় প্রতি বছর ১৬০ থেকে ১৬৫ টন স্বর্ণ আসছে।

চাহিদার চেয়ে বেশি স্বর্ণ আসলেও তা আর দেশের বাজারে থাকে না। প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি প্রতিষ্ঠান বা স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছে। তন্মধ্যে লাইসেন্সের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করা হয়নি। ২০২২ সালে মাত্র ৭টি লাইসেন্সে ২৪ কেজি এবং ২০২১ সালে ৯৩ কেজি স্বর্ণ আমদানি করা হয়েছে।

প্রতি ভরি স্বর্ণের জন্য শুল্ক কর দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এ জন্য লাইসেন্সধারীরা বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি করেন কম। অন্যদিকে একজন যাত্রী প্রতি ভরিতে দুই হাজার টাকা শুল্ক কর পরিশোধ করে স্বর্ণ আনতে পারেন। ফলে যাত্রীদের মাধ্যমেই অধিকাংশ স্বর্ণ আনা হচ্ছে।

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় আড়াই টন স্বর্ণ জব্দ করা হয়। শুল্ক ফাঁকির কারণে এ বাবদ ১ হাজার ২০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ২০০ জন। যাদের অধিকাংশই স্বর্ণ বহনকারী।

এবি/ওসমান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের রূপকার, চতুর্থবারের মতো অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সফল

আবেদ খানকে সাংবাদিকদের বেতন পরিশোধের আহবান  নেতৃবৃন্দের

দৈনিক জাগরণের সম্পাদক-প্রকাশক (মালিক) আবেদ খানকে সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

আমাকে জড়িয়ে 'আমার বার্তা ' পত্রিকায় গত ২১শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারে যে সংবাদ  পরিবেশন করেছে তা

সিআইডির এক এসআইয়ের নেতৃত্বে অপহরণকারী চক্র

‘আমি সিআইডির ওসি রবিউল বলছি, আপনার নাম কি মোস্তাফিজ? আগামীকাল দুপুরের মধ্যে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচন বন্ধে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বিএনপির চিঠি

৭ জানুয়ারি লুটেরা আর ভোট ডাকাতদের নির্বাচন: এবি পার্টি

নির্বাচনি জোয়ারে বিএনপির নেতাকর্মীও শামিল হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি গবেষককে গুলি করে হত্যা

নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজতখানা লাইব্রেরীর উদ্বোধন

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হামলা করে নৌকাকে বিতর্কিত করার পরিকল্পনা করছে: গাজী

নতুন বছরের প্রথম দিনে স্কুলে স্কুলে বই উৎসব

নতুন বছরে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ

মঈন খানের সঙ্গে এনডিআই-আইআরআই পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক

রাষ্ট্রীয় মদতে অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার অভিযোগ বিএনপির

মেরিন সেক্টরে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী

দেশের ৫ ভাগের একভাগ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন

৬০-৭০ শতাংশ ভোট না দেখাতে পারলে স্যাংশন আসবে

২০২৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৫৭৩ নারী

বিএনপি নির্বাচনে আসার জন্য দরকষাকষি করেছে

৭০ তম জন্মদিনে গায়ক রফিকুল আলমের প্রত্যাশা

ইনস্টাগ্রাম পোস্ট শেয়ারে নতুনত্ব

ভোট সুষ্ঠু করতে যত বাহিনী দরকার নামানো হবে

ইউএফএস ও আইসিবির এমডিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু