শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটিয়ে সূচনা হলো দেবীপক্ষের। ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয়।
শুভ মহালয়া তিথিতে রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের পাশাপাশি ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
ভক্তিমূলক সংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা সভা ছিল দিনের আনুষ্ঠানিকতার অংশ। অনেক ভক্ত তাদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, শুভ মহালয়ার দিনে কৈলাস থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করেন এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। দশভুজা শক্তিরূপে দেবী মণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করেন। মহালয়ার ছয় দিন পর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা এবং দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার মূল পর্ব। এর আগের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমীতে দেবীর বোধন হবে। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে রোববার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে শুরু হয় মহালয়ার আচার অনুষ্ঠান। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে তিল-তর্পণ এবং সাড়ে ৮টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ছিল চণ্ডী বন্দনা।
মহালয়ার মূল আচার অনুষ্ঠান হিসেবে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজার মধ্য দিয়ে চলে মহাশক্তি, মহামায়া, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আবাহন। এ সময় শিল্পীরা আবাহন ও ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সুখী, শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী পূণ্যভূমির প্রার্থনা জানান দেবীর কাছে। পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এর আগে মন্দিরের নিজস্ব জলাশয়ে গত বছরের দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
ঢাকেশ্বরী দুর্গাপূজা মণ্ডপের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী বলেন, মহালয়ার দেশ ও জাতির শুভ কামনার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এদিন দেবী দুর্গার ঘট বসানোর মাধ্যমে দেবী দুর্গা বেলতলায় অবস্থান নিয়েছেন। অর্থাৎ কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা।
রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও ছিল অনুরূপ আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে চণ্ডীপাঠ ছাড়াও আবাহন সংগীত পরিবেশিত হয়।
মহালয়া উদযাপন উপলক্ষে ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বনানী মাঠের পূজামণ্ডপে দেবীবরণের আয়োজন করে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিথি ও আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। শারদীয় দুর্গোৎসবকে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল ধর্মই আমাদের অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা জোগায়। আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। মানবসেবা ও দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে।
অনুষ্ঠানে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অসীম জোয়ারদারসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিচালনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ সেনগুপ্ত।
এ ছাড়া স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও মণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ, আবাহনী সংগীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
আমার বার্তা/এল/এমই