ই-পেপার শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

কোরআনে নারীর শালীনতা ও পুরুষের দৃষ্টির হেফাজত নিয়ে যা বলা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৬

পোশাক মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্যতম। একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার জন্য প্রাকৃতিকভাবে যেসব প্রয়োজন অনুভব করে তার একটি পোশাক। পোশাক পরিধানে সর্বোচ্চ শালীনতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান। কারো জন্য পোশাকের শালীনতায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয়নি। নারী-পুরুষ সবাই আল্লাহ প্রদত্ত শালীনতা বিধানের অন্তর্ভুক্ত।

নারীর পোশাকে শালীনতার বিষয়টিতে জোর দিলেও অনেকেই মনে করেন এক্ষেত্রে পুরুষের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ মানব জাতির আদি পিতা ও আদি মাতা জান্নাত থেকে বের হওয়ার পর দুজনেই একসঙ্গে নিজের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেন এবং গাছের পাতায় নিজেদের শরীর ঢেকে নেন।

পবিত্র কোরআনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে—

فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡاٰتُهُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَ نَادٰىهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡهَكُمَا عَنۡ تِلۡكُمَا الشَّجَرَۃِ وَ اَقُلۡ لَّكُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

...অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষফলের আস্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল...।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ২২)

সচেতন সমাজের সবাই পোশাকের শালীনতা বজায় রেখেই চলেন। পোশাকের শালীনতায় সবাই সমান হলেও নারী-পুরুষের গঠন ও আকৃতিগত পার্থক্যের কারণে পোশাকের ধরনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

সাধারণত নারী যেমন পোশাক পরিধান করে থাকেন পুরুষ একই ধরনের পোশাক পরেন না। আবার নারীও পুরুষের মতো পোশাক পরেন না। এই ভিন্নতা বজায় রাখার নির্দেশ হাদিসেও দেওয়া হয়েছে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত—

আল্লাহর রাসূল সা. লানত করেছেন সেই পুরুষের ওপর যে মেয়েলী পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীর ওপর, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৮৮৬)

তাই নারী-পুরুষকে শালীনতার পাশাপাশি নিজেদের পোশাক ও স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে হবে।

পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের মূল নির্দেশ হলো নিজেকে ঢেকে রাখা এবং অন্যকে আকষর্ণ করতে পারে এমন কিছু প্রকাশ না করা। ক্ষেত্রে পুরুষকে পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে নজরের হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ ؕ ذٰلِكَ اَزۡكٰی لَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ

‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে অবগত। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সূরা নুর, আয়াত : ৩০)

পাপের প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয় দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে। এজন্য পুরুষকে দৃষ্টির হেফাজাতের কথা বলা হচ্ছে। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বনী আদমের উপর কিছু কিছু ব্যভিচার (যিনা) হবে জানিয়ে দিয়েছেন, তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। চক্ষুর যিন হল তাকানো, ...। (বুখারি, ৬২৪৩, ৬৬১২, মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৭)

বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাই আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টির হেফাজতের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।

পুরুষের প্রতি দৃষ্টি হেফাজতের নির্দেশের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা নারীকেও তার সাজ-সজ্জা প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। পর-পুরুষ যেন তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে তাই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে—

وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِهِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ

‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। ’ (সূরা নুর, আয়াত : ৩১)

কোরআনের আয়াতের প্রেক্ষিতে মুফাসসিরগণ বলেন, নারীর এমন শালীন পোশাক বা এমন বোরকা পরিধান করা উচিত যাতে তার পুরো শরীর ঢেকে থাকে। পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡهِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِهِنَّ ؕ ذٰلِكَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী পোশাক) একটা অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। যেন তাদেরকে (স্বাধীন নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হয়। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)

আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘পরপুরুষকে সাজসজ্জার কোনো কিছু দেখাবে না। তবে যা লুকিয়ে রাখা সম্ভবপর নয় সেটা ছাড়া।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

উপরে উল্লেখিত আয়াতে নারীর শারীরিক সৌন্দর্যের মতো তার পোশাকসহ অন্যান্য সৌন্দর্য গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নারী-পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষক পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে।

অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাকে পুরুষের ক্ষেত্রেও একই বিধান। অর্থাৎ, আকর্ষণ করে এমন পোশাক পরিধান থেকে পুরুষকেও বিরত থাকতে হবে এবং নিজের চোখের হেফাজত করতে হবে।

পোশাক ও শালীনতার বিধান মানার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খলা এড়ানোর পাশাপাশি এর মাধ্যমে তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতি অর্জন হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এমনই বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে—

بَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡكُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِكُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِكَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِكَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُوۡنَ

‘হে আদম সন্তান! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি এবং তাকওয়ার পোশাক—এটাই সর্বোত্কৃষ্ট।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ২৬)

অর্থাৎ, বাহ্যিক পোশাকের মাধ্যমে গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া ও আল্লাহভীতি। এ আল্লাহভীতি পোষাকের মধ্যেও এভাবে প্রকাশ পায়। তাই পোষাকে যেন গুপ্তাঙ্গগুলি পুরোপুরি আবৃত হয়। উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর না হয়। অহংকার ও গর্বের ভঙ্গিও না থাকা চাই। অপব্যয় না থাকা চাই। এর প্রত্যেকটির ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আমার বার্তা/এমই

রাতে যে সূরা তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না মহানবী (সা.)

সূরা মুলুক পবিত্র কোরআনের একটি ফজিলতপূর্ণ সূরা। এই সূরা পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত

তায়েফবাসীর জন্য যে দোয়া করেছিলেন মহানবী (সা.)

মক্কার কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিয়ে হতাশ হলেন মহানবী (সা.)। মক্কার অদূরে তায়েফের লোকদের কাছে ইসলামের

পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরলেন ৮০ হাজার ৫০০ জন হাজি

২০২৫ সালের পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরলেন ৮০ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশি হাজি। বুধবার (৯

দেশে ফিরলেন ৭৩ হাজার ৪৯৩ হাজি

২০২৫ সালের পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরলেন ৭৩ হাজার ৪৯৩ জন বাংলাদেশি হাজি। শনিবার (৫
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রাহ্মণপাড়ায় এক মাদকসেবীর কারাদন্ড ও যানজট সৃষ্টির দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

ট্রলারডুবি: ৪ দিন পর সাগরে ভেসে এলেন ৯ জেলে,এখনো নিখোঁজ ৩

বীরগঞ্জে ভাঙা সেতুর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন শতাধিক পরিবার

মেলান্দহে নাশকতার মামলায় শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেফতার

বাগেরহাটে ইউএনও বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

কুমিল্লায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রীর আত্মহত্যা

আইসিসিতে শেখ হাসিনার বিচার চাইল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করার নির্দেশনা বাতিল

টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ শ্রীলঙ্কার

যশোর বোর্ডে এসএসসি পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে

নির্বাচনের কারণে পেছাতে পারে বিপিএল, নতুন আরেকটি ভেন্যু যুক্ত হচ্ছে

জুলাই ঘোষণাপত্রে মধ্যস্থতায় সরকার, লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে: আলী রীয়াজ

রাজনীতিতে যারা একেবারে এতিম, তারাই পিআর পদ্ধতি চায়: রিজভী

সংসদীয় আসনের পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চাইল ইসি

যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তা খাতে আরও সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নিষিদ্ধ পলিথিনে আর ছাড় নয়: যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান শিগগিরই শুরু

পোশাকশিল্পে শ্রম-নেতৃত্ব ও বিজিএমইএ’র মধ্যে মতবিনিময় সভা

ভোলায় দুর্যোগকালীন উদ্ধার অভিযান-অগ্নি নির্বাপণী প্রশিক্ষণ

শক্তিশালী বিচার বিভাগ গঠনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় কানাডা