
কুয়েতে গৃহকর্মী (খাদেম) নেয়ার নামে মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেসিডেন্সি গোয়েন্দাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, অভিযুক্ত ওই প্রতিষ্ঠান কুয়েতি নাগরিকের নামে গৃহকর্মী নিয়োগ দেখিয়ে বিদেশ থেকে কর্মী আনত এবং কুয়েতে পৌঁছানোর তাদের অন্যত্র স্থানান্তর করে দিত। এ প্রক্রিয়ায় প্রতি গৃহকর্মীর জন্য ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হতো যা সরকারি নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি।
তদন্তে আরও জানা যায়, গৃহকর্মী বদলানোর কাজে সহযোগিতাকারীদের ৫০ থেকে ১০০ দিনার করে ভাগ দেয়া হতো। মন্ত্রণালয় জানায়, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
তথ্যমতে কুয়েতে বর্তমানে ৭০০০০০ এরও বেশি গৃহকর্মী কাজ করছেন, যাদের অধিকাংশই এশীয় দেশগুলোর নাগরিক। দেশের মোট প্রবাসী জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ এ খাতে নিয়োজিত। ফলে গৃহকর্মী নিয়োগ খাতে দুর্নীতি বা মানবাধিকারের লঙ্ঘন সরকার বিশেষ গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ (নাজাহা) মঙ্গলবার জানায়, সম্পদের বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে। তাদের অক্টোবরের মধ্যে বিবরণী জমা দেয়ার কথা ছিল।
গত কয়েক মাসে এ ধরনের অভিযোগে শত শত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন আইনে মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ আমলা, রাষ্ট্রীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের পর এবং অবসরে যাওয়ার আগে সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে কুয়েত সরকার মানব পাচার, ভিসা বাণিজ্য, মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশে বিদেশে অপরাধী চক্র সক্রিয় থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন অফিস, বাসা, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, কৃষি ফার্ম সর্বত্র অভিযান চলছে। দেশটির আইনে এক নিয়োগদাতার ইকামা নিয়ে অন্যত্র কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি অনুমতি ছাড়া মালিকের ঘর বাদে অন্য কোথাও রাতযাপন করাও আইনবিরোধী।
অন্যদিকে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অনেক প্রবাসী অভিযোগ করেছেন, ‘ফ্রি ভিসা’ বা ২০ নম্বর (খাদেম) ১৮ নম্বর (শ্রমিক) ভিসার নামে ৮–১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে কুয়েতে আসছেন।
অথচ বাস্তবে ‘ফ্রি ভিসা’ বলে কিছু নেই। ফলে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে চাকরি হারানো, গ্রেফতার বা নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়ছেন। এই প্রতারণা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন অপরাধে মোট ৩৪,১৪৩ জন প্রবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত। এদের মধ্যে বসবাসের আইন ভঙ্গ, অপরাধমূলক কার্যক্রম, নৈতিক অপরাধ এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী আচরণের অভিযোগ ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুয়েতের স্থিতিশীলতা ও জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কাজের ক্ষেত্রে কুয়েতি নাগরিক বা প্রবাসী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কুয়েতে মানব পাচার, ভিসা বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থান প্রবাসী শ্রমবাজারকে আরও সুশৃঙ্খল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেও মত মন্ত্রণালয়ের।
আমার বার্তা/এল/এমই

