নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রয়েছে এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। নদী ভাঙন প্রতিরোধ, বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার কবল থেকে মানুষকে রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটির যেমন ভূমিকা রয়েছে; তেমনি সেচের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। দেশ আজ যে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে- এর পেছনে পাউবোর অবদান অনস্বীকার্য। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে যিনি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তাকে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। নদী ভাঙন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সর্বক্ষেত্রেই উদ্বেগ।
এসব বিষয় নিয়ে আমার বার্তার সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন পাউবো’র নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. রমজান আলী প্রামানিক।
তার সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো;
আমার বার্তা: পাউবো’তে আপনি শীর্ষ পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। আপনার পরিকল্পনা কি?
পাউবো মহাপরিচালক: প্রথমেই আমি যেটি মনে করি, তা হচ্ছে সরকার আমাকে যে মূল্যায়নটি করেছেন-এই মূল্যায়নের যথাযথ সম্মান রক্ষা করা। আমি চাকরি জীবনের শুরু থেকেই পেশার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক থাকার চেষ্টা করেছি, এখনও করি। আপনারা জানেন, আমি নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে পাউবো’র মহাপরিচালক হয়েছি। কাজেই আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, পাউবো-কে আরও অধিক গতিশীল করতে হলে এর নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করেই পাউবো’র নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হবে।
আমার বার্তা: নীতিমালায় কি ধরনের পরিবর্তন আপনি আনতে চান?
মো. রমজান আলী প্রামানিক: দেখুন পাউবো’র কাজ হচ্ছে- নদী ভাঙন থেকে মানুষের সম্পদ, জানমাল রক্ষা করা। নদীর নাব্য ধরে রাখা। আজকে দেশ যেভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এর পেছনে পাউবো’র অবদান অনস্বীকার্য। আমি পাউবো’র জনবল ঘাটতি কমিয়ে এনে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহীমূলক করতে চাই।
আমার বার্তা: বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন মোকাবেলায় কি ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন, আমাদের মাঠ প্রশাসনের চাহিদা অনেক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাঁধ মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য পাউবো’র মাঠ পর্যায়ের চাহিদা হচ্ছে- ১০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে আমাদের জন্য এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাঁধ মেরামতের জন্য ৮৩০ কোটি টাকা এবং ইমার্জেন্সি কাজের জন্য ৫৪০ কোটি টাকা। এটা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এতে করে পাউবো ঠিকমত ঠিকাদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদাররাও পাওনা পরিশোধ না করলে কাজের ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। এতে করে কাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়। ইমার্জেন্সি ফান্ড দিয়ে প্রকল্পের বাইরেও আমাদেরকে নদী সংলগ্ন হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি- বেসরকারি স্থাপনা, ব্রিজ-কালভার্ট রক্ষা করতে হয়।
আমার বার্তা: বন্যা মোকাবেলায় কি ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে?
মো. রমজান আলী প্রামানিক: বন্যা মোকাবেলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ২ লাখের উপর জিওব্যাগ (বস্তা) আমরা বিভিন্ন ডিভিশনে প্রেরণ করেছি। প্রয়োজন হলে আমরা তাৎক্ষণিক জিওব্যাগ সরবরাহ করতে পারবো। এছাড়াও নির্বাহী প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা স্থানীয় প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সাথে মিলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করবেন। বন্যা কবলিত এলাকার ইউএনও, প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলতে হবে। দরকার হলে পুলিশের এসপি’র সাথে কথা বলতে হবে। আমরা পাউবো থেকে সবকিছু মনিটরিং করছি। ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবেনা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আমি কুড়িগ্রাম বগুড়া, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, সুনামগজ্ঞ, হবিগঞ্জ এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলেছি। যাতে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীরা নিজেকে একা না ভাবেন।
তিনি বলেন, বন্যা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডেল্টা প্ল্যান পাশ করেছেন- এটি শত বছরের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। একই সাথে ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমরা যে সমস্ত উন্নয়ন করে যাচ্ছি- এই ধারাবাহিকতায় চলবে না। আমাদেরকে নতুনত্ব আনতে হবে। এমনভাবে উন্নয়ন কাজ করতে হবে যাতে ৫০ বছর পর ওই সময়কার প্রজন্ম বলবে যে তৎকালীন সরকার আমাদের জন্য চিন্তা করে এসব করেছেন। কোনো ভুল হয়নি। আমরা চাচ্ছি এমনভাবে কাজ করতে। এজন্য আমাদের যারা পরিকল্পনা এবং নকশায় জড়িত রয়েছেন তাদেরকেও এসব পরিকল্পনা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
আমার বার্তা: পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে অর্থ কোনো সমস্যা কীনা, অর্থের জন্য কোনো কাজ আটকে থাকা কিম্বা উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : এইখানে দু’টি জিনিস রয়েছে- একটি উন্নয়ন, আরেকটি অনুন্নয়ন। পাউবো’কে দেয়া বরাদ্দের ৮৫ ভাগ আসে উন্নয়ন খাত থেকে, আর ১৫ ভাগ আসে অনুন্নয়ন খাত থেকে। উন্নয়ন বাজেটে অর্থের কোনো ঘাটতি নেই। আমরা প্রতি কিস্তির টাকা সেখান থেকে পাচ্ছি। সামান্য কিছু যেটা ঘাটতি থাকে সেটা অনুন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে। এই বাজেটটা আমরা বন্যা মোকাবেলা, জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে ব্যয় করি। এখন এটাও বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেড়েছে। বিগত দশ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে এই খাতের বাজেট। আমি মনে করি, পাউবো’কে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে চলমান প্রকল্পগুলো যেমন ইরিগেশন প্রজেক্ট, ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট, কোস্টাল এ্যামবাঙ্কমেন্ট প্রজেক্ট, ড্রেনেজ প্রজেক্ট-এসব প্রজেক্টগুলোকে রিহ্যাবিলিয়েট করে আরও আধুনিক করতে হবে। এটা করতে পারলে রক্ষণাবেক্ষণ বাজেটের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণ কাজের বরাদ্দ পাওয়া যাবে এটা না ভেবে বরং ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগের প্রকল্পটিকে কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়- সেই চিন্তা করতে হবে। একটা প্রকল্প যখন ৩০ বছরের পুরানো হয়ে যায় তখন এই প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ না চেয়ে বরং প্রকল্পটি ২০৪১ এর ভিশন অনুসারে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নতুুন করে করতে পারলে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের টাকা অনেক কমে যাবে। আমাদেরকে যেকোন মূল্যে মেইনটেন্যান্স বাজেটের টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, নদীগুলো নিয়েও আমাদের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। যেমন রিভারব্যাঙ্ক স্টাবিলাইজেশন। এগুলো যদি আমরা পর্যায়ক্রমে করতে পারি, তাহলে দেখা যাবে যে একপর্যায়ে বন্যা মোকাবেলায় আগের মত আর কষ্ট করা লাগবে না। এসবের জন্য বরাদ্দ চাওয়ার পরিমাণও অনেক কমে যাবে। তখন আমরা বন্যা মোকাবেলার যে যুদ্ধ সেটা খুব মেথমেথিক্যাল ও স্ট্রাকচারাল ওয়েতে করতে পারবো। এ কারণে বলছি যে, এই মুহূর্তে অর্থ আসলে বড় সমস্যা নয়। আমাদের বড় কাজ হচ্ছে নতুন নতুন চিন্তার মাধ্যমে অধিক পুরানো প্রকল্পকে কিভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আধুনিক প্রকল্পে পরিণত করা যায়- সেই দিকে নজর দেয়া।
আমার বার্তা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন?
মো. রমজান আলী প্রামানিক: দেখুন, বর্তমানে বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে পাউবো। এটি করা হয়েছে রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে। একারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী বেসিন, তিস্তা নদী বেসিন, গঙ্গা-পদ্মা নদী বেসিন, আপার মেঘনা বেসিন (সুরমা-কুশিয়ারা নদী বেসিনসহ), লোয়ার মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলী নদী বেসিন (হালদা নদী বেসিনসহ), সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী বেসিনভিত্তিক সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই সমীক্ষা রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এছাড়াও বাঁধসমূহ প্রশস্থ ও শক্তিশালী করা গেলে বন্যার ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় রাখা যাবে। উপকূলীয় বাঁধসমূহ পুনরাকৃতিকরণ ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ওইসব এলাকার বন্যার প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। ক্যাপিটাল ডেজিংয়ের মাধ্যমে বড় নদীগুলো খনন করা হবে। আর ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয়সমূহকে খননের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। একইসাথে নদীর ২০ বছরের ভাঙা গড়ার একটি তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমরা যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ তা ঠিক করে আমরা ইন্টিলিজেন্ট ড্রেজিং করবো। যেখানে দরকার, সেখানেই করবো। নদী ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। ওনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের নদ-নদীগুলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে এর নাব্য ধরে রাখার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আমার বার্তা: সীমান্ত নদীর ভাঙন প্রতিরোধে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং অভিন্ন নদীর কাজ করার ক্ষেত্রে যে বাধা আসে তা কীভাবে মোকাবেলা করছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : সীমান্ত নদী ভাঙন রক্ষায় পাউবো’র ’সীমান্ত নদী তীর রক্ষা’ প্রকল্প রয়েছে। আগে সীমান্তে কাজ করতে গেলে সমস্যা হতো। পরবর্তিতে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ নদী কমিশন আলোচনার পর দু’দেশের নদী তীর ভাঙন এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছে। দুুইদেশই একমত যে, সীমান্ত নদীগুলোর তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা দরকার। সেইভাবে প্রথম পর্যায়ের কাজ আমরা শেষ করে ফেলেছি। একইভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ক্ষেত্রেও আমরা উভয় দেশ আলোচনার মধ্যে দিয়ে চলমান রেখেছি। এরপরও যদি কোথায় ভাঙন দেখা দেয় তাহলে যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি ভারতকে অবহিত করি এবং পারস্পরিক বুঝাপড়ার মাধ্যমেই আমরা কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই সীমান্ত নদীতে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা এখন আমরা পাচ্ছি না। সুসম্পর্কের ভিত্তিতেই আমরা সীমান্ত নদী তীর ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আমার বার্তা: পাউবো’র অনেক জমি অপদখলে রয়েছে। এসব জমি উদ্ধারে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, আমাদের জানার বাইরেই কিছু কিছু জমি বেহাত হয়ে গেছে। তবে নদী তীরবর্তি এবং আমাদের কোথায় কোন জমি অপদখলে রয়েছে তার একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। পাউবো’র দখল হওয়া জমি আমরা দখলমুক্ত করার চেষ্টা করছি। একদিনে সব জমিতো উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে আমরা বেশ কিছু জমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা সব জমিই দখলমুক্ত করবো।
আমার বার্তা: পাউবো’র অনিয়ম, দূর্নীতি বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : অনিয়মগুলো অতীতে হতো দরপত্র নিয়ে। এখনতো সমস্ত দরপত্র ই-টেন্ডার। এই ই-টেন্ডার কন্ট্রোল করা হয় সিপিটিইউ থেকে। এটা পাউবো কিম্বা কোনো সংস্থার হাতে নেই। যে কারণে সব তথ্য ইলেকট্রিক্যালি সবার কাছে ওপেন। এধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর অনিয়ম অনেক কমে গেছে। আরেকটি হচ্ছে-মাঠ পর্যায়ের কাজে আমরা সর্বস্তরে মনিটরিং করছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সবাই তদারকি করছি। সরাসরি আমরা ব্লক বানানো পর্যবেক্ষণ করছি এবং ত্রুটিপূর্ণ মালামাল বাতিল করে দিচ্ছি। পাউবো’র কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কোনো ঠিকাদার কাজে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও পিপিআর মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। খেয়াল রাখতে হবে মানুষের যাতে কষ্ট না বাড়ে এবং সরকারের টাকার যেন কোনো অপচয় না হয়। আমরা এসব করছি-ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর হয়।
আমার বার্তা: পাউবো’র জনবল ঘাটতিকে কিভাবে দেখছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন ১৯৭২ সালে যখন ওয়াপদা ভেঙে পানি উন্নয়ন বোর্ড হয় তখন জনবল ছিল ২৪ হাজার ৩৬৮ জন। ১৯৮৫ সালে এনাম সেটাপে এই জনবল কমিয়ে ১৮ হাজার ৩২ জনে আনা হয়। ১৯৯৮ সালে হুদা কমিশন জনবল আরও কমিয়ে ৮ হাজার ৯৩৫ জনে নিয়ে আসেন। ২০১৪ সালে এসে দাঁড়ায় রাজস্ব সেটাপ ৮ হাজার ২৩৩ জন, আউট সোসিং ৩ হাজার ৫৫৫ জন এবং আনসার আছে ১ হাজার ৪৪৫ জন। বর্তমানে রাজস্ব খাতে ৮৬০টি পদ শুণ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩শ’ জন নিয়োগের ছাড়পত্র নেয়া আছে। ৪৮টি পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাউবো’তে মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয় ঠিকই। তবে নিয়োগের একটা বড় অংশ চলে যায়। এরপরও পাউবো’র মাঠ প্রশাসনের কাজ থেকে নেই। নদী ভাঙন প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বন্যা মোকাবেলায় পাউবো’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে, আমাদের মাঠ প্রশাসন তৎপর। অনেক এলাকার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে এসডি পর্যন্ত চলতি দায়িত্ব দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিলিয়ে মোট ৩৮টি পদ শূন্য রয়েছে। মোট এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের অনুমোদিত পদ হচ্ছে ৩৬২ জন। এখানে একটি জিনিস না বললেই নয়, মাঠ পর্যায়ে আমাদের ৭০টি ডিভিশন রয়েছে। এসব ডিভিশনে পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন ৪০ জন। আর ৩০ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন।
আমার বার্তা : ভবিষতের বাংলাদেশটাকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?
পাউবো মহাপরিচালক : ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে আমি দেখতে চাই এভাবে যে, ২০৪১ সালে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মানুষ বাংলাদেশে চাকরির জন্য আসবে। এখন যেমন এদেশের মানুষ বিদেশে চাকরির জন্য ছুটছে। এটা যেন না থাকে। আমাদেরকে সেরকম একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। যা হবে সত্যিকারের সোনার বাংলা। যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। আমি চাই ঠিক সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা