ই-পেপার মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা, উন্নয়নে বাঁধা ও আমাদের করণীয়

মো. গোলাম ফারুক মজনু
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়, জন্ম হয় নতুন লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত সম্পদ, এ সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, এ সম্পদ টিকিয়ে রাখতে এর বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়ও রয়েছে অনেক। এ দেশে রয়েছে বহুমাত্রিক সম্ভাবনা, এর মধ্যে অন্যতম পর্যটনশিল্প।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। প্রচীনকাল থেকে মানুষ বিনোদন ও প্রকৃতির সৌন্দর্য পিয়াস মেটানোর জন্য রূপ-সুগন্ধে ভরা নৈসর্গিক প্রকৃতিতে অবগাহন করছে। বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকদের কাছে চিরসবুজে ঘেরা এক স্বপ্নের দেশ হিসেবে পরিচিত। সপ্তম শতকে প্রখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে ভ্রমণে এসে এর সৌন্দর্যকে কুয়াশা ও পানি থেকে উন্মোচিত ঘুমন্ত সৌন্দর্য হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। সভ্যতার একটি কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে এই দেশে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, বাগেরহাট, কুমিল্লা, সিলেট, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, পাবনাসহ প্রতিটি জেলা পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্রমণ পিপাসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৮ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ২৭ লাখ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এই শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। অথচ এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অনুযায়ী পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫, তাইওয়ানের ৬৫, হংকংয়ের ৫৫, ফিলিপাইনের ৫০ এবং থাইল্যান্ডের ৩০ শতাংশ পর্যটনের অবদান। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন অবদান রাখে ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব জিডিপিতে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ অবদান। করোনার প্রবণতা কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছালে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৩ সাল নাগাদ পর্যটনশিল্প থেকে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালে মোট কর্ম সংস্থানের ১ দশমিক ১৫ শতাংশ হবে পর্যটন শিল্পের অবদান। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল।

বহুমাত্রিকতা ও সম্ভাবনা: বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। কিন্তু বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে অনেক পিছিয়ে আছি। এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে প্রচারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি এই শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৪৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) গোড়াপত্তন হয়। ১৯৯২ সালে প্রণিত জাতীয় পর্যটন নীতিমালায় পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সে নীতিমালা হালনাগাদ করে ২০১০ সালে আরও যুগোপযোগী করা হয়। নীতিমালার পঞ্চম অধ্যায়ে এর বাস্তবায়নে গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পর্যটন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্নত পর্যটন সেবা প্রদান এবং পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে নতুন ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং সময়ে সময়ে বিদ্যমান আইনগুলো হালনাগাদকরণ’। এর পর সাত বছর পার হলেও পর্যটন নীতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপটি উপেক্ষিতই থেকেছে। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারণে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশে প্রত্যাশিত ও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধিত হয়নি।

সারা বিশ্বে পর্যটন শিল্প একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসাবে সুপরিচিত। পর্যটন শিল্প বর্তমান বিশ্বের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পর্যটন শিল্পে বিশ্বের বুকে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ। এই দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। পর্যটন বিকাশে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

পর্যটন শিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসাবে স্বীকৃত। পর্যটনের গুরুত্ব সর্বজনীন। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর প্রায় ১৪৮ কোটি পর্যটন সারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে। বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান ৮.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জিডিপিতে অবদান ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এ খাতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত। বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তাতে ২০৩৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যটন খাতের আকার দাঁড়াবে ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের হিস্যাও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। তখন এ খাতের হিস্যা দাঁড়াবে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।

সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এই শিল্পে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। সঠিক তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করেন। একই বছর প্রায় ৪ কোটি দেশীয় পর্যটক সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটন শিল্পের অবদান। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল।

অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশ, যার প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্রের কোনো অভাব নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদসৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।

১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটিতে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্রসৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বর্তমানে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মপরিকল্পনা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পর্যটননগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতিবছরে এতে বাড়তি ২শ’ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হলোÑ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।

সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এর মোট বনভূমির ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে এই বনের জীববৈচিত্র এটিকে পৃথিবীর অন্য যে কোনো পর্যটনকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র রূপে উপস্থাপন করেছে।

সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, খাল, শত শাখা নদী, চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। সুন্দরবনের সঙ্গে যে বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িত তা হলো- বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনভূমিটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানা ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, ডলফিন ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল।

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে অধিক পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম মূলত তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হলো- পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি, যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয়।

দেশের সর্বদক্ষিণে বরগুনা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনঘেঁষা বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদী বেষ্টিত বরগুনা। বিষখালী ও বলেশ্বর নদে খোলা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউবন। দক্ষিণের খোলা বাতাস ঝাউবন স্পর্শ করে যাচ্ছে পরম আবেশে। বাতাসের ছোঁয়ায় প্রেমিকার উড়ন্ত চুলের মতো দুলছে ঝাউগাছগুলো। জন্ম থেকেই সমুদ্রের খোলা বাতাস গায়ে মেখে ঝাউগাছগুলো এখন অনেক বড় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ আর ঝাউগাছ এ যেন দৃষ্টিনন্দন এক সৈকত! সমুদ্রের মৃদু ঢেউ, বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ। শুধু তাই নয় এ জেলায় রয়েছে শুভ সন্ধ্যা সমুদ সৈকত, সোনাকাটা ইকোপার্ক, হরিণঘার্টা, মোহনা পর্যটনকেন্দ্র, বিবিচিনি শাহী মসজিদ, বুকাবুনিয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, তালতলী উপজেলার রাখাইন পলীø, বেতাগী উপজেলার খ্রিষ্টান পল্লী, কাউমিয়া জমিদারবাড়ি, সিডর স্মৃতিস্তম্ভ, বিহঙ্গ দ্বীপ, নীলিমা পয়েন্ট, সুরঞ্জনা, জ্যোৎস্না উৎসব, ইলিশ উৎসব, এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে ইলিশ চত্বর, বিউটি অব বরগুনা, টাউন হল সংলগ্ন অগ্নিঝরা একাত্তর, সার্কিট হাউস সংলগ্ন ইলিশ ফোয়ারা কেন্দ্রিক উন্মুক্ত ময়দান, এ ছাড়া রয়েছে পাথরঘাটায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বিষখালী নদীর স্বাদের ইলিশ। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে উপমহাদেশে একমাত্র জ্যোৎস্না উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর এ জেলায়। একদিকে সীমাহীন সাগর; আরেক দিকে দীর্ঘ ঝাউবন, তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সব মিলিয়ে নদনদী আর বনবনানীর এক অপরূপ সমাহার- শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতেই জ্যোৎস্না উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলাকে ঘিরে বিশেষ পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। ‘পায়রা বন্দরনগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ-পর্যটনভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ নামে এই প্রকল্পটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। বরগুনার স্থানগুলোকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনার চরের ২০ হাজার ২৬ হেক্টর বিস্তৃৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ পর্যটনকেন্দ্র। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব পায়রা-কুয়াকাটা রিজিওনাল প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপন করা হবে। এর লক্ষ্যে চলতি সময় থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চলবে সার্ভের কাজ। সরকার থেকে এতকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও বাস্তবে কতটুকু হচ্ছে এটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এ জন্য শুধু সরকারই নয়, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারের উদ্যোগে কোন ত্রুটি থাকলে জনগণের এগিয়ে আসতে হবে।

এটি যেন ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতির রূপ বদলানোর খেলা। এখানে শীত যেমন এক রূপে ধরা দেয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে, ঠিক তেমনি বর্ষা অন্য এক রূপে হাজির হয়। শীতে পাহাড় কুয়াশা আর মেঘের চাদরে যেমন ঢাকা থাকে, তার সঙ্গে থাকে সোনালি রোদের মিষ্টি আভা। আবার বর্ষায় চারদিক জেগে ওঠে সবুজের সমারহ। এই সময় প্রকৃতি ফিরে পায় তার নতুন যৌবন। বর্ষায় মূলত অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিস্টদের পদচারণা সবচেয়ে বেশি থাকে পার্বত্য অঞ্চলে। তখন এখানে ঝর্ণা, ঝিরি কিংবা নদীপথগুলো নতুন রূপে সেজে ওঠে, যা দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটক এখানে ভিড় করেন। এর সঙ্গে আছে পাহাড়ে মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরণ, যা আমাদের চেয়ে অনেকটা আলাদা।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল। এই শহরে রয়েছে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ চা বাগান মালনীছড়া। এ অঞ্চলে আসা পর্যটকদের মন জুড়ায় সৌন্দর্যের রানী খ্যাত জাফলং, নীলনদ খ্যাত স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালিতে বয়ে যাওয়া বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝর্ণা, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি এবং কানাইঘাটের লোভাছড়ার সৌন্দর্য।

বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল পর্যটনের আরেক সম্ভাবনার নাম। বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াÑএই সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওড় নিয়ে হাওড়াঞ্চল গঠিত। হাওড় অঞ্চলের সাগরসদৃশ বিস্তীর্ণ জলরাশি এক অপরূপ মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় বসে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মায়ায় ভেসে বেড়াতে পারে।

হাওড়ের কোল ঘেঁষে থাকা সীমান্ত নদী, পাহাড়, পাহাড়ি ঝর্ণা, হাওড়-বাঁওড়ের হিজল, করচ, নলখাগরা বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানা প্রজাতির বনজ, জলজপ্রাণী আর হাওড় পাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার মতো খোরাক মিলবে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। কিন্তু বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে অনেক পিছিয়ে আছি। এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে প্রচারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

পাশাপাশি এই শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেমন জানি আমরা এখনো পর্যটন খাতে পিছিয়ে রয়েছি। এর কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আগে কারণ খুঁজে বের করা, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা এবং ইচ্ছা, মনোবল শক্তিতে রূপান্তর করা। সরকারের এ বিষয় কঠোর নির্দেশনা থাকতেও কেমন জানি এখনো আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পর্যটকের উন্নত সেবার জন্য দক্ষ ও মার্জিত জনবলের অভাব, উন্নত ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব, ইলেকট্রনিক্স-প্রিন্ট মিডিয়া বাংলাদেশের পর্যটন অঞ্চলগুলোর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন না করা, প্রচার প্রয়োজন মতো না করা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন না করা, বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগের অপর্যাপ্ততা, দক্ষ গাইডের অভাব, এ ছাড়া রয়েছে সামাজিক অনেক বাধা। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৫ শতাংশ দখল করে আছে পর্যটন শিল্প। এই শিল্প আমাদের দেশের মানুষ ও ভ্রমণ করতে ১০ বার চিন্তা করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্যই। দেশে একটু বিশৃঙ্খলা দেখলেই পর্যটক তো দূরের কথা অন্য দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলও পাঠাতে সে দেশ ভয় পায়। এই ভয়, সংশয় দূর করার জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাতেই হবে। কিন্তু বরগুনায় এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো প্রকল্প এ খাতে দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেমন সদিচ্ছা থাকতে হবে তেমনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও উদ্যোগ এবং ইচ্ছা থাকতে হবে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উল্লিখিত পর্যটন প্রসার প্রয়োজন। অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে সমবায় পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড পর্যটন আরও সম্প্রসারিত হবে। এ ছাড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, একতা, সাম্য বৃদ্ধি পাবে যা বর্তমানে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করবে এবং বাস্তবায়িত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এভাবেই নবদিগন্তে ভোরের সূর্যের প্রজ্বলিত শিখার মতো আলোকিত হবে অমিত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো প্রচারণা চালাতে হবে। বিশ্বের যতগুলো দেশে বাংলাদেশ বিমানসহ আমাদের দেশের প্রাইভেট বিমানগুলো যাতায়াত করে সেসব দেশে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ প্যাকেজ কর্মসূচি গ্রহণ করে কার্যকরী ব্যবস্থাও পর্যটনশিল্প বিকাশে অনেক অগ্রগতি হবে। পর্যটনশিল্প বিকাশে সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, পর্যটন করপোরেশনকে অধিকতর কার্যকরও দক্ষ প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর করা, বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চাহিদা অনুসারে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজনে ফরেন জোন গড়ে তোলা। স্থানীয় পর্যায় উদ্যোক্তাদের উদ্ভুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ, স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ পর্যটনশিল্পকে আরও প্রসারিত করতে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় রাখা, অবকাশ যাপনের জন্য হোটেল ও মোটেলগুলোতে প্যাকেজ কর্মসূচি রাখা, হোটেলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা ও গাইডের ব্যবস্থা রাখা‬, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক-অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর স্থির চিত্রের প্রয়োজনীয় দৃশ্য স্থির প্রদর্শনী রাখা ইত্যাদি।

পর্যটনশিল্প বিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের কপালে জ্বল জ্বল করছে। এখন এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হলে এ শিল্প এখানে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশে পর্যটনের ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগই একমাত্র উদ্যোগ। সরকার বা সরকারি উদ্যোগের সীমাবদ্ধতার কথা সব ক্ষেত্রেই আমাদের শোনা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। তাই পর্যটনে কিছু বৈচিত্র ও সুযোগ সৃষ্টির জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিভৃত অঞ্চলের সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলোতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাসহ সুযোগসুবিধা সৃষ্টির জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিভৃত অঞ্চলের সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলোতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাসহ সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করার কথা আমরা বলেছি।

বাংলাদেশ উদীয়মান শিল্পের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পর্যটন শিল্প। দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৪.৪ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে। এই শিল্পকে উন্নত করে দেশের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা, সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের অভাবসহ আরও নানা কারণে এর কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না দেশের পর্যটন শিল্প।

সাগরের গর্জন, পাহাড়ের নীরবতা, হাওরের সৌন্দর্য কোথাও আবার প্রাচীন প্রত্নতান্ত্বিক নিদর্শনের মাঝে হেঁটে চলা সব মিলিয়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ দর্শনীয় স্থান নিয়ে বৈচিত্র্যময় আমাদের এই দেশ। রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানারকম প্রতিক’লতার। অবকাঠামো, মানসম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটন শিল্পের সমন্বয়হীনতা, দক্ষ জনবলের অভাব, বাজেটের ঘাটতিসহ রয়েছে আরও অনেক সমস্যা। বিদেশি পর্যটকেরা আমাদের পর্যটন শিল্পের প্রতি আকর্ষিত তো হচ্ছেই না বরং আমাদের দেশের পর্যটকেরা অবসর সময় কাটাতে চলে যাচ্ছে বিদেশে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১৪৮ কোটিরও বেশি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৬ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭০ কোটি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে এই বিপুল সংখ্যার ৭৩ শতাংশই আবার ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এই বিশাল বাজার ধরতে পারে তবে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করে থাকে। বৈশ্বিক পর্যটন র‌্যাঙ্কিংয়ে১৮৮ টি দেশের মধ্যে ১৪১ তম স্থান। বিশ্বব্যাপী পর্যটক আগমন ০.০১% বাংলাদেশে ঘটে, যা ১৫৪ তম স্থানে পড়ে।

আপাতদৃষ্টিতে পর্যটন শিল্পের উন্নতি মনে হলেও ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে শুধু পাকিস্তানই বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে। আবার পর্যটন আয়ের বেশির ভাগই আসছে দেশীয় উৎস থেকে। এটি প্রমাণ করে যে বিদেশি পর্যটকের কাছে আমাদের পর্যটন শিল্পের জনপ্রিয়তা এখনো অনেক কম।

পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, ভারত ও নেপালের মতো দেশ। পর্যটন আকর্ষণে পিছিয়ে নেই দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও।

২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন আয় ছিল ৩৯.৪ বিলিয়ন ডলার এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আয় ছিল ১৫১.৯ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল আয়ের মধ্যে বাংলাদেশের আয় খুবই নগণ্য। শুধুমাত্র ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম থেকে প্রায় ৮৬% আয় এসেছে পর্যটন শিল্পে। বাংলাদেশের এই শিল্পে পিছিয়ে থাকার সম্ভাব্য কারণগুলো হচ্ছে:

১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা: পর্যটন কাঠামোর দিক থেকে সারা বিশ্বেও ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তান ছাড়া বাকি সব দেশ থেকেই পিছিয়ে আছি আমরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সত্ত্বেও এখনো রয়েছে অনেক দুর্বলতা। দীর্ঘ যানজটের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। নেই পর্যাপ্ত হোটেলের সুব্যবস্থা। পর্যটনকেন্দ্র গুলো অবহেলিত। এগুলোর সুপরিকল্পিত আধুনিকায়ন ও শুল্কমুক্ত বিপণির অভাবও এ ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।

২. দেশীয় বিমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: বিদেশি পর্যটকদের কাছে নিজের দেশকে তুলে ধরতে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশকে উপস্থাপন করলেও এশিয়ার বাইরে শুধু কয়েকটি শহরে ফ্লাইট সার্ভিস দিয়ে থাকে। যার ফলে বাকি দেশের পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের পরিবহন ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে বিমান ব্যবস্থার দিক থেকে আমাদের অবস্থান ১১১তম। যা এশিয়ার মাঝে সবচেয়ে পেছনে। তবে যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে আমাদেরও অবস্থান ৫৪ তম।

৩. প্রচারের অভাব: বিশ্ব দরবারে আমরা আমাদের পর্যটনকে পরিচিত করতে চাই কিন্তু নেই কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আজকে আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিবিসি, সিএনএন, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যসহ প্রাকৃতিক রূপ অবলোকন করে থাকি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কোনো প্রচার নেই বললেই চলে। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

৪. নিরাপত্তার অভাব: বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বড় একটি ইস্যু। অস্থিতিশীলতা, চুরি, ছিনতাই, হত্যা, রাহাজানি, সহিংসতা থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে হবে। পর্যটকদের দিতে হবে নির্বিঘ্নে চলাফেরার নিশ্চয়তা।পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তবেই না তারা এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

৫. উন্নত সেবা ও তথ্যের অভাব: দক্ষ, মার্জিত জনবলের অভাব এ শিল্পের একটা বড় সমস্যা। সেই সঙ্গে রয়েছে উন্নত ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব। বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় তেমন কোনো তথ্য। দিতে ব্যর্থ হচ্ছে পর্যটকের কাঙ্খিত সেবা।

৬. পর্যটকের জন্য বাড়তি খরচ: পর্যটন শিল্পে উন্নত কিছু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটনের ব্যয় অনেকটাই বেশি। কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। বাড়তি যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে মানের তুলনায় হোটেলগুলোর উচ্চমূল্যের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায়শই। এটি অনেক বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। কেননা এর চেয়ে কম ব্যয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে অন্য দেশগুলো।

৭. পশ্চিমা দেশের পর্যটকের অভাব: বাংলাদেশের পর্যটকের প্রায় বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে। মাত্র ৫ শতাংশ পর্যটক ইউএসএ থেকে আসলেও বেশির ভাগই রয়েছে প্রবাসী বাঙালি। বিশ্বব্যাপী পর্যটন বাজারের ৫৩ শতাংশ আসে আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে। যা থেকে আমরা অনেকটাই বঞ্চিত। এশিয়ার বাইরে থেকে আসা পর্যটকের হার শতকরা ২০ শতাংশ থেকে ৭১ শতাংশ। যেখানে আমাদের দেশের হার মাত্র ৭ শতাংশ।

পর্যটন ব্র্যান্ডিং ও প্রসারে করণীয়: একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যাত্রায় অন্যন্য অবদান রাখতে পারে পর্যটন শিল্প। অনেক উন্নত-উন্নয়নশীল দেশের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন। করোনা মহামারির ফলে পৃথিবীর গতিপথে এসেছে আমূল পরিবর্তন দুই বছরের অধিক সময় ধরে প্রবাহমান করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পর্যটন শিল্প তবে করোনা মহামারির পূর্বের এক দশকে (২০০৮-২০১৮) বিশ্বজুড় পর্যটক বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। করোনা মহামারির সময় বিশ্বব্যাপী পর্যটক সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল তবে মহামারির গতি ধীর হওয়ার পর আবার ধীরে ধীরে পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে।

করোনার সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই পর্যটন শিল্প। অন্যদিকে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যে পাঁচটি সেক্টর চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে পর্যটন উল্লেখযোগ্য। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি পর্যটনের উপর গুরুত্বারোপ করছেন।

অস্ট্রেলিয়া করোনা পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য পর্যটন প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর অন্যতম মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ‘আই লাভ অস্ট্রেলিয়া’ পেজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করছে।

ইউরোপের দেশ চেক রিপাবলিক, যার রাজধানী প্রাহা, ইনস্টাগ্রামে ‘প্রাহা ওয়ার্ল্ড’ পেজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য পর্যটনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। বাংলাদেশে করোনা পরবর্তী মুহূর্তে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম একটি জায়গায় রয়েছে অভ্যন্তরীণ পর্যটন।

করোনা পরবর্তী সমগ্র বিশ্বজুড়ে পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটক বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য পর্যটকদের চাহিদা গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। সেই সাথে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এই শিল্পের উৎকর্ষতা, দুর্বলতা, সম্ভাবনা ও সংকট উত্তরণের পথ চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন ও প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের অপার সম্ভাবনা ও তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার-টেকনাফ ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ দেশীয় ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ েেথকে পর্যটক আসে কক্সবাজারে। এখানে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাপ ট্যুরিজম পার্ক ও সোনাদিয়া ইকো পার্ক নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ২০০ কোটি ডলার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পৃথিবীর বড় ম্যানগ্রোভ বন-সুন্দরবন যার মোট বনভূমি ৬০ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশ যা বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত লাভ করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য একে নান্দনিক পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য।

নান্দনিক বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা। এই অঞ্চলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মালনীছড়া চা-বাগান ছাড়াও জাফলং, লালাখাল, বিছানাকান্দি, পাংথুমাই ঝরনা, সোয়াফ ফরেস্ট রাতারগুল, হাকালুকি কানাঘাইট।

হাজার বছরের পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বগুড়ার মহাস্থানগড়, বৌদ্ধ বিহার, ষাট গম্বুজ মসজিদ, লালবাগকেল্লা, আহসান মঞ্জিল, পানাম-নগর সোনারগাঁও, বড় কাটরা, ছোট কাটরা উল্লেখযোগ্য পর্যটন গন্তব্য।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবনে পর্যটনের মূল উপকরণ হলো পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যা ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। শীতে পাহাড় কুয়াশা ও মেঘের চাদরের ঢাকা থাকে, সেই সাথে সোনালী রোদের আভা, আবার বর্ষায় চারিদিকে সবুজের সমোরহ, প্রকৃতি ফিরে পায় তার আপন রূপ। তাই অ্যাডভেঞ্চার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলো।

সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে; প্রমোদতরিতে সমদ্র্রভ্রমণ, সমুদ্রে মাছ শিকার, নৌকা পরিসেবা, ওয়াটার স্কিইং, জেট স্কিইং, সাং সেইল বোর্ডিং, সি কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, সমুদ্রে সাঁতার, দ্বীপ ভ্রমণ, ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও জলক্রীড়া ইত্যাদি। অন্যদিকে, উপক’লভিত্তিক পর্যটন যেখানে পর্যটকরা উপকূলীয় পরিবেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করে। উপকূলভিত্তিক পর্যটনের মধ্যে রয়েছে সাতার, সার্ফিং, বিচ কার্নিভাল, লাইভ কনসার্ট, মেরিন অ্যাকুরিয়াম ও মেরিন মিউজিয়াম উপভোগ ও অন্যান্য।

পদ্মা সেতুর দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের ২১টি জেলার সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। যার ফলশ্রুতিতে কৃয়াকাটা পায়রা বন্দর ও সুন্দরবনে পর্যটক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণত দেশের অভ্যন্তরে হোটেল-মোটেল-রিসোর্টগুলোয় রুমের ভাড়া, যাতায়াত খরচ, খাবার খরচসহ পুরো ট্যুরিজম প্যাকেজের মূল্য পাশ্ববর্তী দেশের ভ্রমণ প্যাকেজের চেয়ে বেশি পড়ে বিধায় অনেক পর্যটক নিজ দেশ ভ্রমণ না করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোয় ভ্রমণ করতে যায়।

এই সময়ে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর পর্যটক আকর্ষণে কিছু পদক্ষেপ নিম্নরূপবিশ্বায়নের এই সময়ে ক্রস-বর্ডার পর্যটন ও আঞ্চলিক পর্যটন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। নেপাল পর্বতারোহীদের পছন্দের দেশ হলেও সাধারণ পর্যটকরা এখানে হিমালয়ের পাশ থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার পাশাপাশি শত বছরের পুরোনো মন্দির আকাশচুম্বী পর্বতমালা, জলপ্রপাত, বৈচিত্রময় সংস্কৃতি উল্লেখযোগ্য। নেপালে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ কম বাজেটের পর্যটন প্যাকেজ নেপালের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘোরা সম্ভব।

ইন্ডিয়া ই-টুরিস্ট ভিসা বা ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইনে সুযোগ থাকার ফলে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি পর্যটক ভারতে ভ্রমণ করে। ভারত এমন এক দেশ যেখানে হাজারের উপর পর্যটন আকর্ষণসহ বহু বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে যা আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখছে।

ভারতের পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোআগ্রার তাজমহল, গোলাপি শহর জয়পুর, লেহ লাদাখ, সিমলা, দার্জিলিং, গোয়া এই পর্যটন আকর্ষণগুলোয় অভ্যন্তরীণ পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ। বাজেট ট্যুরিজম প্যাকেজ, পর্যটন আকর্ষণগুলোর ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পর্যটক-বান্ধব মানসিকতা ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত ছোট্ট দেশ ভুটান। ভুটানের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে যেতে প্রায় সবখানেই যেতে হয় পাহাড়ের সরু রাস্তার উপর দিয়ে যা অ্যাডভেঞ্চার পর্যটকদের কাছে অত্যন্তপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। ভুটানের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, তথ্য-প্রযুক্তি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ অবকাঠামো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকদের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের ইতিবাচক মনোভাব ও ভৌগোলিক সৌন্দর্য ভুটান ভ্রমণের অন্যতম নিমিত্ত।

শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্যকলম্বো, অনুরাধাপুর, ক্যান্ডি, পোলোনরুভা, এডামস পিক ও বৌদ্ধ মন্দির কেলানিয়া রাজা মহাভিহার উল্লেখযোগ্য। শ্রীলঙ্কার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন খাতের অংশীজনের যৌথ উদ্যোগে দেশটিতে পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে। বাজেট ট্যুরিজম প্যাকেজ, অন-অ্যারাইভাল ভিসা ও পর্যটন আকর্ষণগুলো পুনরায় ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করছে।

ভারত মহাসাগরে সুনীল পানিবেষ্টিত দ্বীপর্ষ্ট্রা মালদ্বীপ। প্রায় ১২০০ ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশের আয়ের প্রধান উৎস-পর্যটন। মালদ্বীপে সাধারণত ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকান ও চীনা পর্যটক বেশি আসেন তার অন্যতম কারণ হলো নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পর্যটক নিরাপত্তা, বিদেশি বিনিয়োগ, পর্যটন আকর্ষণগুলোর ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং ও মানসম্পূর্ণ হোটেল ও রিসোর্ট।

দেশে সুনীল পর্যটন উন্নয়নের জন্য সমুদ্র বন্দরসমূহ আধুনিকায়ন, সমুদ্র বন্দরকর্মীদের পর্যটনবান্ধব করা, স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ, ভিসা নীতিমালায় সমুদ্র বন্দর অন্তর্ভুক্ত করা, অনবোর্ড ইমিগ্রেশন, পর্যটকবাহী জাহাজে অনবোর্ড কাস্টমস সুবিধা, সমুদ্র ভ্রমণ প্রমোদতরি আগমনের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দ্রুত ও সহজে অনুমতি প্রাপ্তি, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সেই সাথে সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটন বিকাশের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তআঞ্চলিক সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটন বিকাশের জন্য আধুনিক ক্রুজশিপ ক্রয়, প্যাকেজ ট্যুর চালু এবং সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় ডেসটিনেশন হিসেবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং ও প্রমোট করার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করা।

দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য পর্যটন শিল্পের কর্মরত সকল কর্মীদের মধ্যে নিয়মিত ও খন্ডকালীন সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা দরকার যাতে করে পর্যটন কর্মীরা উন্নত বিশ্বের ন্যায় পর্যটকদের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে।

দেশের উল্লেখ যোগ্য পর্যটন আকর্ষণগুলোর চিহ্নিতকরণ, পর্যটন আকর্ষণগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্তকরণ, লোকাল হ্যারিটেজ ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করার প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে।

পাশ্ববর্তী দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণে ও পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য নিমোক্ত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজনবাজেট ট্যুরিজম প্যাকেজ, ভিসা নীতিমালা সহজীকরণ, অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি, ই-ভিসা, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, পর্যটন আকর্ষণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, পর্যটন আকর্ষণগুলোর ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং, পর্যটন আকর্ষণগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুকরণ, চলমান পর্যটন সংশ্লিষ্ট মেগা প্রজেক্ট সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন, পর্যটন খাতে আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন, সমুদ্র পর্যটন প্রসারের জন্য ভিসা নীতিমালায় সমুদ্র বন্দর অন্তর্ভুক্তিকরণ, পর্যটন মাস্টারপ্যান দ্রুত প্রস্তুতকরণ ও পর্যটকদেরপ্রতি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক মনোভাব উল্লেখযোগ্য যা দেশের অর্থনীতিক সমৃদ্ধি,ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে এক অন্যান্য অবদান রাখবে।

পরিশেষে বলতে চাই, এ দেশটি আমাদের, এ দেশ সবার। বাংলাদেশ অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। যার পর্যটন শিল্পে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও বিকাশ ঘটাতে হবে পর্যটন শিল্পের। তাই সঠিক পরিকল্পনা অতীব জরুরি। কারণ পর্যটন শিল্পে সঠিক পরিকল্পনায় পারে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে পরিচিত করতে। এ দেশে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, তেমনি দেশের পর্যটনশিল্পকে আমাদেরই টিকিয়ে রাখতে হবে এর বিকাশ ও বহুমাত্রিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে একটি সুন্দর দেশ হিসেবে পরিচিত করি, একটি পর্যটন দেশ হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজকরি।

লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, গ্লোবাল এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।

স্বাধীনতার স্বপ্ন ও পরিবারতন্ত্রের অভিশাপ

বাংলাদেশ নামে পরিচিত একটি দেশ আমরা পেয়েছি, কিন্তু সকলের ভাগ্যে সেই স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া সম্ভব

শেখ হাসিনার অধীনে পরপর ৩টি নির্বাচনেই জাতীয় পার্টিকে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে

বিশিষ্ট কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ- মাসরুর মওলা বলেছেন- “শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে পর পর ৩টি নির্বাচনে অংশ

পর্যটন আকর্ষণে প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

বাংলাদেশ, প্রকৃতির এক অপার উপহার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ বনের শ্বাসমূলের

রোহিঙ্গা ঢেউ, আরাকান আক্রমণ: তহবিল সংকটে তৎপরতা

রোহিঙ্গাদের বাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে এখন পাঁচ লাখেরও কম রোহিঙ্গা রয়েছে, এবং আরাকান আর্মির চলমান নিপীড়ন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতিসংঘে সভাপতিত্বের জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের

দুর্গাপূজায় ৪৯ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ১৫ মামলায় গ্রেপ্তার ১৯: আইজিপি

রাষ্ট্রের সংবিধান আর জুলাই সনদ এক জিনিস না: নূরুল কবির

ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতিতে কোনো বিভাজন চাই না: সালাহউদ্দিন

গাজায় মার্কিন শান্তিপ্রস্তাবে আরব-ইউরোপসহ সবাই একমত

পূজামণ্ডপকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে: আইজিপি

অসামান্য বীরত্ব দেখানোর পরও বাদ, অবসরের ঘোষণা ওকসের

ট্রফিকাণ্ডে উত্তেজনার মধ্যেই আবারও মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান

চিংড়ির জল বড়া তৈরির রেসিপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালকের সাক্ষাৎ

ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় ট্রেনযাত্রী ও গ্রামবাসী সংঘর্ষ

বুধবার থেকে ৪ দিনের ছুটিতে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার

জামায়াত আমিরের সঙ্গে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

পোল্যান্ডের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের বৈঠক

২০২৬ সালে দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৫ শতাংশ: এডিবি

স্বাধীনতার স্বপ্ন ও পরিবারতন্ত্রের অভিশাপ

খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা বহাল, সংঘর্ষে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারিয়ে নেপালের আরেক ইতিহাস

আজ মহাঅষ্টমী কুমারী পূজা

নারী বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না জিতলেও যত টাকা পাবে বাংলাদেশ