ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

জাগ্রত ছাত্র জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পথরেখা

মো. ইলিয়াস বিন কাশেম:
০১ মে ২০২৫, ১৪:৪৪

একটি জাতির চেতনার শিখা জ্বলে ওঠে যখন তার যুবসমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আমাদের দেশের ইতিহাসে ছাত্র জনতা বহুবার জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে জাগরণ ঘটিয়েছে। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ের ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন আবারও প্রমাণ করেছে, দেশপ্রেম ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সাহসিকতা এখনো আমাদের তরুণদের অন্তরে জীবিত।

এই আন্দোলনের পেছনে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্নের জোয়ার তা কেবল ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি সুদূরপ্রসারী সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের সঙ্কেত। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো—এই জাগরণকে টেকসই পরিবর্তনে রূপান্তরিত করতে হলে কী করণীয়? আমরা কোন পথে হাঁটব? এবং কাদের চিন্তা-চেতনা গ্রহণযোগ্য পথ দেখাতে পারে?

এইসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে আজকের উপসম্পাদকীয়।

পরিবর্তনের ভূমিকায় ছাত্র জনতা

আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা এখন রাজপথে, সংবাদের শিরোনামে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়। তারা চায় একটি ন্যায্য সমাজ, যেখানে মেধা, পরিশ্রম ও সততার মূল্যায়ন হয়। তারা চায় এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে দুর্নীতি দমন হয় বাস্তবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় প্রতিটি স্তরে, এবং প্রশাসন হয় জনগণের জবাবদিহিতার আওতায়।

তারা চায়—একটি সত্যিকারের সুশাসিত বাংলাদেশ।

কিন্তু এই চাওয়াগুলো বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বহু বাঁধা, বহু ঐতিহাসিক সংকট, এবং পুরাতন মানসিকতার জড়তা। এ থেকে উত্তরণের জন্য চাই চিন্তার মুক্তি, কাঠামোগত সংস্কার ও নীতি-পরিবর্তন। এবং অবশ্যই, যারা আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছেন, তাদের চিন্তা-দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে।

চিন্তার পরিসরে পরিবর্তনের ছাপ

পরিবর্তন কোনো একক চিন্তা দিয়ে সম্ভব নয়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এখানে নানামুখী চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের সমন্বয় প্রয়োজন। যেমন—

নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি: যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে জনদাবি বুঝে তাতে সাড়া দেওয়ার সদিচ্ছা থাকতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষকদের চিন্তা: শিক্ষক সমাজ তরুণদের কাছে আদর্শ। তাঁদের উচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ, মানবতা ও যুক্তিবোধ জাগিয়ে তোলা। তারা যেন দলীয় স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে চিন্তা করেন—এটাই সময়ের দাবি।

সচেতন নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের রয়েছে ভূমিকা। তারা যেন ছাত্র-জনতার চেতনার সাথে সুর মিলিয়ে বাস্তবধর্মী দাবি ও প্রতিকারমুখী পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

তরুণ নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি: ২০২৪ সালের আন্দোলন প্রমাণ করেছে, নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে। এদের চিন্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারা স্রেফ সোশ্যাল মিডিয়ার "অ্যাকটিভিস্ট" নয়; তারা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক।

বাস্তবায়নের পথনির্দেশ: কোন কোন খাতে সংস্কার জরুরি?

১. শিক্ষা খাতের রূপান্তর

আমরা এখনো মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা থেকে বের হতে পারিনি। চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স ও কারিকুলাম গঠন করতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর, গবেষণানির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষা কার্যকর করতে হবে।

২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা

যে রাষ্ট্রে টিআর-কাবিখার চাল চুরি হয়, সেই রাষ্ট্রে জনতার ভরসা থাকে না। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রশাসনিক জবাবদিহিতা

একজন সচিব, ডিসি বা ইউএনও যদি মনে করেন তারা কারও জবাবদিহিতায় নেই, সেটি হবে গণতন্ত্রের পরিহাস। জবাবদিহিতার কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

৪. চাকরি খাতের সংস্কার

বিসিএস বা সরকারি নিয়োগে স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতা, কোটা নিয়ে বিতর্ক ও পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।

৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা

একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম পারে রাষ্ট্রকে আয়নায় দেখতে সহায়তা করতে। সেন্সর ও ভয়ভীতি ছাড়া সত্য প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ছাত্র জনতার আন্দোলনকে ‘নতুন সামাজিক চুক্তি’র পথে রূপান্তর

আমরা যদি এই জাগরণকে শুধু "প্রতিবাদ" হিসেবে দেখি, তাহলে তা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি এটিকে "নতুন সামাজিক চুক্তির" সূচনা হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে এটি একটি নয়া দিগন্তের পথ দেখাবে।

এই চুক্তির মূল বক্তব্য হতে পারে:

রাষ্ট্র জনগণের এবং জনগণের কল্যাণেই থাকবে

তরুণরা রাষ্ট্রের পরিচালনায় অংশ নেবে

রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শনিষ্ঠ ও নৈতিক রাজনীতি চর্চা করবে

প্রশাসন থাকবে স্বচ্ছ, মানবিক এবং জবাবদিহির আওতায়

এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজন দ্বিপাক্ষিক শ্রবণ ও অংশগ্রহণমূলক নীতি। একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং সকল পক্ষের সাথে আলোচনায় পৌঁছানো সমাধানই দীর্ঘস্থায়ী হয়।

কার চিন্তা অগ্রাধিকার পাবে?

এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—পরিবর্তনের চিন্তায় কে নেতৃত্ব দেবে?

আমার মতে, নেতৃত্ব দিতে হবে সেই তরুণদের, যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। যাদের হাতে প্ল্যাকার্ড ছিল, কণ্ঠে স্লোগান ছিল, চোখে ছিল আগামীর স্বপ্ন।

এই তরুণদের চিন্তা যেমন কার্যকর, তেমনি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। কারণ, তারা ব্যক্তিস্বার্থে নয়—সমষ্টির স্বার্থে কথা বলেছে।

তাদের চিন্তায় যে বৈপ্লবিকতা আছে, তা কেবল আবেগের নয়, বিশ্লেষণমূলকও বটে।

আশার নতুন দিগন্ত

জাগ্রত ছাত্র জনতার এই আন্দোলন শুধু একটি ঘটনার প্রতিফলন নয়, এটি একটি চলমান চেতনার প্রতীক। এই চেতনাকে নষ্ট না করে, সঠিকভাবে লালন করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উদার, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

নানামুখী চিন্তার সম্মিলন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংলাপ এবং ভবিষ্যৎমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলতে পারি একটি এমন বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিটি তরুণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ থাকবে।

ছাত্র-জনতার চেতনা কখনো নষ্ট হয় না। বরং, সেটি একটি জাতিকে বারবার তার মূল কক্ষপথে ফিরিয়ে আনে।

আজ সেই ইতিহাসই পুনরাবৃত্তি করছে। সময় এসেছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী ও কলামিস্ট।

আমার বার্তা/মো. ইলিয়াস বিন কাশেম/এমই

আইনের শাসনই রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার মেরুদণ্ড

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আইনের শাসন। এই শাসন

মে দিবসের গল্প : লাল প্যাঁচা

“যারা রক্ত দিয়ে অধিকার আনে, তাদের ঘাম দিয়ে নতুন ইতিহাস লেখা যায়। আর যারা ঘামেও

মে দিবসের সংকট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

শ্রমিকের ঘামেই সভ্যতার অট্টালিকা। কিন্তু আজ, শ্রমিক দিবস যেন কিছুটা কৃত্রিমতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। একদিনের

ইসরায়েল গাজা ও লেবাননের উপর আগ্রাসন বন্ধ করবে কবে?

জাতিসংঘ কর্তৃক ইসরায়েল গাজার যুদ্ধবন্ধের শান্তিচুক্তি সম্পাদন হলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়। এক সপ্তাহ না
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেরানীগঞ্জে দুই অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত

কুয়েটে অন্তবর্তী উপাচার্যের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. হযরত আলী

মিয়ানমার-ভারত-পাকিস্তান নয়, সবার আগে বাংলাদেশ: তারেক

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিন: ফখরুল

জিআই সনদ পেল ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়

আইসিসি থেকে পুরুষ ক্রিকেটারদের র‍্যাঙ্কিংয়ের হালনাগাদ প্রকাশ

ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তির ফলে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় হবে: ট্রাম্প

এ বছরই মুক্তবাণিজ্য এলাকা স্থাপন করতে চায় সরকার

রাজধানী ঢাকাসহ ৮ জেলায় বজ্রপাতের সতর্কতা জারি

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হলেন ইউএনও-ওসি

মেহেরপুরে ভবনের ছাদ ধসে স্বামীর মৃত্যু, আহত স্ত্রী

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় এবার সামরিক মহড়া চালালো পাকিস্তান

শ্রমিকদের গায়ের ঘাম আতরের মতো লাগে: জামায়াত আমির

ফ্যাসিবাদী আ.লীগকে প্রতিহত করতে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন: রিজভী

দেশের গ্যাস খাতের সব দেনা শোধ করলো পেট্রোবাংলা

নাফ নদী থেকে ৪ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

যেসব ফল শরীরের ওজন বাড়ায়

আইনের শাসনই রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার মেরুদণ্ড

জাগ্রত ছাত্র জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পথরেখা