ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩২

আধুনিক যুগের কুসংস্কার কোটা প্রথা

সাহীদ বিন আহমদ:
০৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:৫৩

বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দেখেনি আলবদর, আলশামস। জানেনা রাজাকাররা কি কারণে পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়েছিল। কুসংস্কার যেমন সমাজকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়, ঠিক তেমনি কোটা ব্যবস্থাও বর্তমান সময়ে সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যাকে আমরা আধুনিক যুগের কুসংস্কার বলতে পারি।

অধিক যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোটাধারীকে সুযোগ করে দেওয়া শুধু এই কারণে যে তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই আধুনিক কুসংস্কার একটি দেশকে পিছিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছে। তবে দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে যারা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের প্রতিটা স্তরের মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। লক্ষ্য একটাই, দেশকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলা।

মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলো। তাদের এই ত্যাগের মাঝে ছিল না কোনো কৃত্রিমতা। তাদের লক্ষ্যই ছিল একটা তা হলো দেশকে বৈষম্যমুক্ত করে নতুন শান্তির নগর হিসেবে গড়ে তোলা। বাঙালির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এসেছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিঘাত করতে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের প্রতিটা পরিবার ভয়ে ছিল কখন না পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। শুধু যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে তাদেরই অবদান দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এমনটা ভাবলে বোকামিই হবে বলা চলে। যুদ্ধের সময় তো এমনও অনেক পরিবার ছিল যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলো। আমরা কি তাদের অবদান অস্বীকার করবো! ঐ মুহূর্তে এই সামান্য আশ্রয়টাই অনেক বড় ভূমিকা ছিল বললে ভুল হবে না। এমনিভাবে প্রতিটি পরিবারের ভূমিকা ছিল দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে। তবে আমরা তাদের এই অবদানকে তুলে আনার চেষ্টাও করিনি। একথা ধ্রুব সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদের রয়েছে ভিন্ন মর্যাদা সেটা অনস্বীকার্য। আমাদের রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বুকে সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে তেমনি বর্তমান যুগে এসেও তাদের পরিবার পরিজনেরা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এমনটা আশা করা যেতেই পারে। কোনো কোটা ব্যবহার করে, পূর্ববর্তীদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের বীর পূর্বসূরিদের সাহসিকতার অপমান অবশ্যই করবে না। তবে এমন চিত্র কি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে? যাদের এই বিবিধ কোটা আছে, তারা দিনের পর দিন বিভিন্নভাবে এই কোটা ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। একেবারে প্রাইমারি থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে যোগদান করার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এটা কি বৈষম্য নয়? এটাকে কি আমরা আধুনিক সমাজের কুসংস্কার বলতে পারি না?

বাঙালিরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলো বলেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অপরিহার্য মনে করেছিলো। বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কোটা ব্যবস্থা। পূর্ব বাংলার লোকেরা সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ তথা তাদের প্রাপ্য টা বুঝে পেতো না এই কোটা ব্যবস্থার কারণে। বর্তমানেও তো একই অবস্থাই দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। সরকারি চাকুরিতে ২৫৮ প্রকারের কোটা রয়েছে এবং ৫৬% কোটা প্রথম শ্রেণির চাকরিতে। তবে কি আমাদেরকে আমাদের পূর্বসূরিদের মতো দেশরক্ষায় নামতে হবে? তারা যেমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তেমনি বর্তমান সময়ে এসেও এই বৈষম্যই যদি রয়ে যায়, তাহলে স্বাধীনতার মর্ম কোথায়?

মূলত দেশমাতৃকাকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলার জন্যই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তবে কি বর্তমানে বৈষম্যহীন সমাজ, দেশ গঠন করার প্রত্যয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে? যদি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমাদেরও এখন শেখ মুজিবুরের মতো নেতৃত্ব প্রদানকারী কাউকে প্রয়োজন। আর এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছে ছাত্রসমাজ। আমরা ইতিহাসে তাকালে দেখতে পাবো তৎকালীন সময়েও ছাত্রসমাজ বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো, পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে। তারা সফলও হয়েছে বটে।

আজ শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বললে হবে না। স্বাধীন দেশে কত শত রকমের কোটা তথা কুসংস্কার রয়েছে যা বর্তমান রেখে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা অকল্পনীয়। বর্তমান ছাত্রসমাজ যেভাবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আন্দোলন করছে তা কোনো দিক থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয় বরং বেশি বলা চলে। কোটা প্রথাকে কবর দিতে তারা খালি হাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্মতি প্রয়োজন।

এরাও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা দেশকে বর্তমান রাজাকার, আলবদর থেকে দেশকে মুক্ত করার আগ পর্যন্ত লড়াই করেই যাবে। আর যারাই এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বর্তমান রাখতে চাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা আলবদর, আলশামস আর রাজাকার বাহিনী থেকে অভিন্ন ভাববো না? ছাত্রদের দাবি যৌক্তিক। প্রতিবন্ধী কোটা রাখা যেতে পারে। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী কোটায় যোগ্য লোক পাওয়া না গেলে, যোগ্য মেধাবীকে ঐ পদে নিযুক্ত করতে হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা যেমন অবদান রেখেছিলো, তারাও চেয়েছিলো বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে, তেমনি বর্তমান নারীরাও চাচ্ছে এবং বলছে, “আমরাও এখন আর পিছিয়ে নেই, আমরাও যোগ্যতা ও দক্ষতায় বিশ্বাসী, কোনো কোটায় সুযোগ পেয়ে নারী জাতিকে অপমান করতে রাজি নই।”

আমরা বলতেই পারি, কোটা নামক আধুনিক যুগের কুসংস্কারকে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দূর করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান যুগের মুক্তিযোদ্ধারূপে আবির্ভূত হয়েছে ছাত্রসমাজ।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/সাহীদ বিন আহমদ/এমই

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ত্যাগ: বাংলাদেশের জন্য সংকেত এবং ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

ফ্যাসিস্ট আমলে মিডিয়া ট্রায়ালে হেনস্থা ও অপরাধী প্রমাণের অপচেষ্টা

একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, অর্থ আত্মসাৎ, মাদক পাচার, যৌতুক দাবি, এসিড নিক্ষেপ বা

প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সময়ের দাবি

দেশের চাকরিজীবীরা নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান—নির্ধারিত বাসাবাড়ি, গাড়ি ও অবসরের পর পেনশন, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি। কিন্তু

ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ক্ষমতার অপব্যবহার একটি গুরুতর বিষয়, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমতা
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

২৪ জানুয়ারি জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন: তারেক রহমান

১৬ বছর পর আপিল আবেদনের অনুমতি পেল চ্যানেল ওয়ান

স্রোতের বিপক্ষে শুধু মাঠে আছে জাতীয় পার্টি: জিএম কাদের

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দেশের ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়

সালমান এফ রহমানের ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পেলেন যারা

উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়েই করবে

গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের ম্যান্ডেট নির্বাচিত দলের চেয়েও বেশি

শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবিতে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালু হচ্ছে না

ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল ঘোষণা

বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বৈদ্যুতিক বাইক উন্মোচন করা হলো যুক্তরাষ্ট্রে

বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ চাইছে: নাহিদ ইসলাম

দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

জনগণের আস্থা অর্জনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন: আইজিপি

নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে চায় ইউএনডিপি

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

ডিজিটাল ওয়ালেটে দেখেন ৬৪ লাখ, কিন্তু তুলতে পারেননি এক টাকাও

রংপুরের জয়যাত্রা থামিয়ে প্লে-অফের লড়াইয়ে টিকে রইল রাজশাহী