ই-পেপার বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

আধুনিক যুগের কুসংস্কার কোটা প্রথা

সাহীদ বিন আহমদ:
০৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:৫৩

বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দেখেনি আলবদর, আলশামস। জানেনা রাজাকাররা কি কারণে পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়েছিল। কুসংস্কার যেমন সমাজকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়, ঠিক তেমনি কোটা ব্যবস্থাও বর্তমান সময়ে সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যাকে আমরা আধুনিক যুগের কুসংস্কার বলতে পারি।

অধিক যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোটাধারীকে সুযোগ করে দেওয়া শুধু এই কারণে যে তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই আধুনিক কুসংস্কার একটি দেশকে পিছিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছে। তবে দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে যারা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের প্রতিটা স্তরের মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। লক্ষ্য একটাই, দেশকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলা।

মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলো। তাদের এই ত্যাগের মাঝে ছিল না কোনো কৃত্রিমতা। তাদের লক্ষ্যই ছিল একটা তা হলো দেশকে বৈষম্যমুক্ত করে নতুন শান্তির নগর হিসেবে গড়ে তোলা। বাঙালির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এসেছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিঘাত করতে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের প্রতিটা পরিবার ভয়ে ছিল কখন না পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। শুধু যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে তাদেরই অবদান দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এমনটা ভাবলে বোকামিই হবে বলা চলে। যুদ্ধের সময় তো এমনও অনেক পরিবার ছিল যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলো। আমরা কি তাদের অবদান অস্বীকার করবো! ঐ মুহূর্তে এই সামান্য আশ্রয়টাই অনেক বড় ভূমিকা ছিল বললে ভুল হবে না। এমনিভাবে প্রতিটি পরিবারের ভূমিকা ছিল দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে। তবে আমরা তাদের এই অবদানকে তুলে আনার চেষ্টাও করিনি। একথা ধ্রুব সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদের রয়েছে ভিন্ন মর্যাদা সেটা অনস্বীকার্য। আমাদের রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বুকে সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে তেমনি বর্তমান যুগে এসেও তাদের পরিবার পরিজনেরা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এমনটা আশা করা যেতেই পারে। কোনো কোটা ব্যবহার করে, পূর্ববর্তীদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের বীর পূর্বসূরিদের সাহসিকতার অপমান অবশ্যই করবে না। তবে এমন চিত্র কি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে? যাদের এই বিবিধ কোটা আছে, তারা দিনের পর দিন বিভিন্নভাবে এই কোটা ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। একেবারে প্রাইমারি থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে যোগদান করার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এটা কি বৈষম্য নয়? এটাকে কি আমরা আধুনিক সমাজের কুসংস্কার বলতে পারি না?

বাঙালিরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলো বলেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অপরিহার্য মনে করেছিলো। বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কোটা ব্যবস্থা। পূর্ব বাংলার লোকেরা সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ তথা তাদের প্রাপ্য টা বুঝে পেতো না এই কোটা ব্যবস্থার কারণে। বর্তমানেও তো একই অবস্থাই দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। সরকারি চাকুরিতে ২৫৮ প্রকারের কোটা রয়েছে এবং ৫৬% কোটা প্রথম শ্রেণির চাকরিতে। তবে কি আমাদেরকে আমাদের পূর্বসূরিদের মতো দেশরক্ষায় নামতে হবে? তারা যেমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তেমনি বর্তমান সময়ে এসেও এই বৈষম্যই যদি রয়ে যায়, তাহলে স্বাধীনতার মর্ম কোথায়?

মূলত দেশমাতৃকাকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলার জন্যই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তবে কি বর্তমানে বৈষম্যহীন সমাজ, দেশ গঠন করার প্রত্যয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে? যদি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমাদেরও এখন শেখ মুজিবুরের মতো নেতৃত্ব প্রদানকারী কাউকে প্রয়োজন। আর এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছে ছাত্রসমাজ। আমরা ইতিহাসে তাকালে দেখতে পাবো তৎকালীন সময়েও ছাত্রসমাজ বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো, পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে। তারা সফলও হয়েছে বটে।

আজ শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বললে হবে না। স্বাধীন দেশে কত শত রকমের কোটা তথা কুসংস্কার রয়েছে যা বর্তমান রেখে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা অকল্পনীয়। বর্তমান ছাত্রসমাজ যেভাবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আন্দোলন করছে তা কোনো দিক থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয় বরং বেশি বলা চলে। কোটা প্রথাকে কবর দিতে তারা খালি হাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্মতি প্রয়োজন।

এরাও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা দেশকে বর্তমান রাজাকার, আলবদর থেকে দেশকে মুক্ত করার আগ পর্যন্ত লড়াই করেই যাবে। আর যারাই এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বর্তমান রাখতে চাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা আলবদর, আলশামস আর রাজাকার বাহিনী থেকে অভিন্ন ভাববো না? ছাত্রদের দাবি যৌক্তিক। প্রতিবন্ধী কোটা রাখা যেতে পারে। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী কোটায় যোগ্য লোক পাওয়া না গেলে, যোগ্য মেধাবীকে ঐ পদে নিযুক্ত করতে হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা যেমন অবদান রেখেছিলো, তারাও চেয়েছিলো বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে, তেমনি বর্তমান নারীরাও চাচ্ছে এবং বলছে, “আমরাও এখন আর পিছিয়ে নেই, আমরাও যোগ্যতা ও দক্ষতায় বিশ্বাসী, কোনো কোটায় সুযোগ পেয়ে নারী জাতিকে অপমান করতে রাজি নই।”

আমরা বলতেই পারি, কোটা নামক আধুনিক যুগের কুসংস্কারকে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দূর করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান যুগের মুক্তিযোদ্ধারূপে আবির্ভূত হয়েছে ছাত্রসমাজ।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/সাহীদ বিন আহমদ/এমই

রোহিঙ্গা-রাখাইন সহবস্থান নিশ্চিতে আরাকান আর্মিকে উদ্যোগী হতে হবে

বর্তমানে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় করতে আরাকান

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ বায়ুদূষণ

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণ ও নদী দুষণ ।বায়ু দুষণের-জন্য আমাদের-রাজধানী

শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমরা অপরাধী?

যখন একজন শিক্ষক জাল সনদধারী হয়েও আদালতের আশ্রয় নেন, তখন তাঁকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে কিছু

আসন্ন নির্বাচন এবং ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা : সাকিফ শামীমের ভাবনা

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তাপ বাড়ছে, তখন দেশের অর্থনীতি
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিরাপদ সড়কের দাবিতে পালংখালীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দীঘিনালায় বিদ্যুৎ অফিস এর দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ধর্মপাশায় বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ, পুলিশ কনস্টেবল গ্রেফতার

ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান

সংস্কারের কথা বিএনপিই সবার আগে বলেছে: মির্জা ফখরুল

শহীদদের আত্মত্যাগে গড়া হবে নতুন বাংলাদেশ: খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ ও বুর্কিনা ফাসোর মধ্যে সরাসরি তুলা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

হাতিয়ায় যৌথ অভিযানে অস্ত্র-চোরাইমালসহ আটক ৪

হালদা নদীকে নারী নির্যাতনের মতো নির্যাতন করা হয়: ফরিদা আখতার

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে লিভ-টু-আপিলের শুনানি ১৬ জুলাই

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ চিহ্নিত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

জুলাই বিপ্লবের শহিদরা দেশ ও জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা

দেশে কোনো জঙ্গি নেই, আছে ছিনতাইকারী : ডিএমপি কমিশনার

বুলাওয়ে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৩২৮ রানে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রহসনের নির্বাচনে দায় স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

যেসব ইস্যুতে ঐকমত্য, সেসবেই সংস্কার হবে: মাহমুদুর রহমান মান্না

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত না করা অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা

‘নিছক ছাত্র আন্দোলন’ বলেছিল, এখন বলছে আমাদের ছাড়া সংস্কার নয়

সারজিস-হাসনাতকে ১০০ বার ফোন দিলেও একবারও ধরেন না

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: সাখাওয়াত হোসেন