ই-পেপার মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

১ জুলাই: আ.লীগের ভয়ংকর অপশাসন পতনের অভূতপূর্ব সূচনা

আমার বার্তা অনলাইন:
০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:২০

২০২৪ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়। সেদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রূপ নেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’। প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম বৃহৎ গণজাগরণ, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

আন্দোলনের মূল সূচনা ঘটে হাইকোর্ট কর্তৃক ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর। ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়—মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ। ছাত্রদের মতে, এই ব্যবস্থা মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাই তারা রাস্তায় নামে।

প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি

৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের খবর সামনে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ শুরু করে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বই ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’-তে লেখেন, ‘সেদিন বিকেলে আমি চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি ফেসবুকে রায় এসেছে—মনে হলো ২০১৮ সালের সব অর্জন ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’

৫ জুন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয়। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা রায়কে ‘মেধাবীদের সঙ্গে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সেদিনই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও পরবর্তীতে এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ডাক দেন।

সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত আসে—

৫-৯ জুন: ঢাবি, জাবি, রাবি, চবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

৬ জুন: দেশব্যাপী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়।

৯ জুন: শিক্ষার্থীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়।

১০ জুন: সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়—২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।

১ জুলাই: আন্দোলনের বিস্ফোরণ

৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই শিক্ষার্থীরা একযোগে আন্দোলনে নামে। ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন মোড় নেয়, যেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা সংস্কার।

প্রথম ধাপ: বিক্ষোভ থেকে অবরোধ

১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই ঢাকায় গণপরিবহন বন্ধ ও রাস্তা অবরোধের মাধ্যমে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে দেশব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। রাজধানীতে শুধুমাত্র মেট্রোরেল চালু ছিল। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়।

রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি ও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য

১৪ জুলাই শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

এই দিনই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে আখ্যা দেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গাত্মক স্লোগান তোলে—‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার/কে বলেছে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার/হয়ে গেলাম রাজাকার।’

১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বিনষ্ট করার অভিযোগ তোলেন।

শাটডাউন ও অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য

১৭ জুলাই রাতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, যা ১৮ ও ১৯ জুলাই দেশব্যাপী পালিত হয়। ১৯ জুলাই মধ্যরাতে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন এবং আট দফা দাবি তুলে ধরেন। তবে অন্যান্য সমন্বয়করা তাদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ‘তারা আন্দোলনের কোনো অংশ নয়, মিথ্যাচার করছে।’

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, ‘গণমাধ্যমে ভুল বার্তা ছড়ানোর জন্য তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।’

মতানৈক্য ও আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা

২১ জুলাই আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি নিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

২২ জুলাই নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি উত্থাপন করে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শাটডাউন স্থগিত করেন। তাঁর দাবি ছিল—৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহার, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কারফিউ প্রত্যাহার। তিনি জানান, ৯ দফা দাবিদাতাদের সঙ্গে নীতিগত কোনো বিরোধ নেই, বরং যোগাযোগের অভাবে সমন্বয় সম্ভব হয়নি।

গুম, গ্রেপ্তার ও বিভাজন

১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকা তিন সমন্বয়ক—আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ—এর খোঁজ পাওয়া যায় ২৪ জুলাই। ২৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আট দফা বার্তা দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল—হতাহতদের তালিকা তৈরি, হামলাকারীদের চিহ্নিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দিতে চাপ সৃষ্টি, ২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ তিন সমন্বয়ককে সাদা পোশাকধারীরা রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুই সমন্বয়ক—সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে হেফাজতে নেয়।

চাপের মুখে ঘোষণা ও প্রতিক্রিয়া

২৮ জুলাই রাতে পুলিশ হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশ দাবি করে, ‘এই ঘোষণা পুলিশি হেফাজতে, চাপে, এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে দেওয়া হয়েছে।’ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

‘ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা’ ও আন্দোলনের নতুন রূপ

৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির মাধ্যমে হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয়। ১ আগস্ট ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়। ২ আগস্ট ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

একই দিন মুক্তিপ্রাপ্ত সমন্বয়কেরা এক বিবৃতিতে জানান, ‘পুলিশি দপ্তর থেকে প্রচারিত আন্দোলন প্রত্যাহারের ভিডিও বিবৃতি স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়নি।’

আমার বার্তা/এমই

জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই কেবল আবেগে ভাসার মাস নয়,

জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করে ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

জুলাই শুধু সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না এটা ছিল নতুন বন্দোবস্তের আন্দোলন- এ কথা জানিয়ে

স্বৈরাচার পতনে যাতে আর ১৬ বছর না লাগে সেই কাজ করছি

স্বৈরাচার পতনে যেন ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে

বিডিআর হত্যার ঘটনা পুনঃতদন্তে গঠিত স্বাধীন কমিশনের মেয়াদ বাড়ল

বিডিআর হত্যার ঘটনা পুনঃতদন্তে গঠন করা স্বাধীন কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এ কমিশনের মেয়াদ আগামী
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টেকনাফে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ

জেনে নিন মঙ্গলবার যা থাকছে আপনার রাশিতে

বরগুনায় ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত ৯৩ জন, একজনের মৃত্যু

জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: ড. ইউনূস

ভারতের তেলেঙ্গানার কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণহানি বেড়ে ৪২

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের আড়ালে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি

জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করে ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

স্বৈরাচার পতনে যাতে আর ১৬ বছর না লাগে সেই কাজ করছি

গাজায় ক্যাফে, স্কুল এবং ত্রাণ কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৯৫

নীলফামারীতে ই-সেবায় ধীরগতি ও ভোগান্তি

ত্বকের যেসব পরিবর্তন হতে পারে হার্টের সমস্যার লক্ষণ

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সিদ্ধান্তে দেড় কোটি মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা

সচল এনবিআরে নেতারা রয়েছে বদলির আতঙ্কে

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমলো, আজ থেকে কার্যকর

সুইডেনে বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক তৃতীয়াংশে

ইন্টার মিলানের হৃদয় ভেঙে বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিবের পদত্যাগ

গ্যাপ পদ্ধতিতে চিচিঙ্গা চাষে বাড়ছে সাফল্য, রপ্তানির সম্ভাবনা